Thursday 17 September 2020

বিশ্বকর্মার পূজা করেও শিল্প, কারিগরি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় হিন্দুরা এত পিছিয়ে কেনো ?


বিশ্বকর্মার পূজা করেও শিল্প, কারিগরি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় হিন্দুরা এত পিছিয়ে কেনো ?

নকুল কুমার বিশ্বাসের কিছু হিন্দুবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ওকে আমি ঘৃণা করি, কিন্তু ওর বাস্তবতাবোধ এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টির জন্য ওকে আবার পছন্দও করি। এই নকুল, তার দেবী লক্ষ্মী সম্পর্কিত একটি গানে লক্ষ্মীকে প্রশ্ন করছে- আমি প্রতিদিন তোমার পূজা করি, তবু আমি গরীব কেনো ? জবাবে দেবী লক্ষ্মী, নকুলকে বলছে- আমি সেখানেই থাকি যেখানে পরিশ্রম আছে, তুই তো শুধু আমার পূজা করে অলসের মতো বসে থাকিস, এমন লোককে আমি পছন্দ করি না, তাই তোর ঘরে থাকি না, এজন্যই তুই গরীব।

এই গানের মাধ্যমে নকুল আসলে বলতে চেয়েছে, শুধু পূজা করলে দেবী লক্ষ্মী খুশি হয় না, যে পরিশ্রম করে, লক্ষ্মী তার প্রতিই খুশি থাকে এবং তাকেই ধন সম্পদ দেন।

আমি একটা কথা প্রায়ই বলি যে- সনাতন ধর্ম হলো বাস্তবতার ধর্ম এবং পৃথিবীর সমস্ত লোক তাদের জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে সনাতন ধর্মের বিধিবিধান পালন করে চলেছে। সনাতন ধর্মের পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে রয়েছে মানুষের জন্য সিচুয়েশনাল শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের ইঙ্গিত। মানুষের কর্তব্য হলো সেই সব পৌরাণিক কাহিনী থেকে শিক্ষা নিয়ে চলা এবং যে বৈজ্ঞানিক ঘটনাগুলোর ইঙ্গিত আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য গবেষণার মাধ্যমে চেষ্টা করা।

প্রাকৃতিক শক্তিসহ সকল প্রকার শক্তিকে সনাতন ধর্মে দেব-দেবী হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে এবং কালক্রমে এগুলোরই পূজা চালু হয়ে গিয়েছে। দেব-দেবীদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের পূজা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষের মধ্যে সেই বিষয়টি জাগ্রত রাখার একটি সিস্টেম, যেমন বছরে একদিন যদি স্বাধীনতা দিবস পালন করা না হয়, তাহলে লোকজন একসময় স্বাধীনতা্র বিষয়টি ভুলে যাবে, এতে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে; কারণ, স্বাধীনতা দিবস পালনে দেশের লোকজনের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়, যা রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক। একইভাবে শ্রদ্ধাভক্তি নিয়ে কোনো দেব-দেবীর পূজা করলে সেই বিষয়টি পূজারীদের সন্তান সন্তুতিদের মধ্যে জাগরুক থাকে এবং যুগের পর যুগ ধরে সেটি চলতে থা্কে। কিন্তু কোনো দেব-দেবীর পূজার মূল শিক্ষাকে যদি কেউ বুঝতে না পারে এবং সেটা যদি সে গ্রহন করতে না পারে, তাহলে তার সেই দেব-দেবীর পূজা সম্পূর্ণ ব্যর্থ, লোক দেখানো অনুষ্ঠান মাত্র।

আমরা জানি, প্রতিটি দেব-দেবীর সাথে নানারকম বিষয় জড়িত থাকে, এই নানারকম বিষয়গুলো আসলে মানুষকে নানারকম শিক্ষা দেয়, যদি আমরা সেই বিষয়গুলো জানি এবং তা থেকে শিক্ষা নিই, তাহলেই সেই দেব-দেবীর পূজা সার্থক। যেমন- দেবী লক্ষ্মীর সাথে থাকা পেঁচা আসলে গোপনীয়তার প্রতীক, যে পেঁচা সাধারণত দিনে দেখা যায় না। লক্ষ্মীর পূজা করে আপনি যে এই শিক্ষা নিজে নেন এবং সন্তানদেরকে এই শিক্ষা দেন যে লক্ষ্মীর প্রতীক ধনসম্পত্তিকে লোকচক্ষুর আড়ালে গোপনে রাখতে হবে, তাহলেই আপনি বড় রকম বিপদের হাত থেকে বেঁচে যাবেন, যারা লক্ষ্মী পূজার এই শিক্ষা নেয় না, তারাই ধন সম্পত্তিজনিত বিপদের হাতে পড়ে এবং তাদের কাছেই অর্থ হয় অনর্থ।

সরস্বতী পূজার শিক্ষা হলো জ্ঞান অর্জন করা এবং নিজের প্রতিভাকে মেলে ধরা। আপনি সরস্বতী দেবীকে বিশ্বাস করেন বা না করেন, আপনি আসলে সরস্বতী পূজার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই নিজেকে জ্ঞানে গুনে বড় করার চেষ্টা করছেন। বর্তমানের পিতা মাতারা তাদের সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে খুবই সিরিয়াস, ছেলে মেয়ের পড়াশোনার জন্য তারা নিজেদের সকল প্রকার সুখ সুবিধাকে বিসর্জন দিতেও পিছপা হন না; এই যে পড়াশোনা বা জ্ঞান অর্জনের তাগিদ সেটাই কিন্তু সরস্বতী পূজার শিক্ষা। সাধারণ মানুষ যেটা একবিংশ শতাব্দীতে এসে উপলব্ধি করছে, আমাদের মুনি ঋষিরা সেটা উপলব্ধি করেছে ৮/১০ হাজার বছর আগেই। তো আপনি সরস্বতী পূজা করেন বা না করেন, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হয়ে আপনি কি সরস্বতী পূজার শিক্ষাকেই কাজে লাগাচ্ছেন না ?

যা হোক, পুরাণের বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিতগুলো বিজ্ঞানীদেরকে কিভাবে সাহায্য করেছে বা পথ দেখিয়েছে, এবার সেদিকে নজর দিই-

মহাভারতে- বেদব্যাস, সঞ্জয়কে, কুরুক্ষত্রের যুদ্ধ সরাসরি ২৩০ কি.মি দূরে হস্তিনাপুরের প্রাসাদে বসিয়ে দেখিয়েছেন, যেই প্রযুক্তি বর্তমানের লাইভ টিভি সম্প্রচার।

অর্জুন, আকাশে ঘুর্ণায়মান মাছের চোখকে, এক তীরে বিদ্ধ করে দ্রৌপদীকে জয় করেছিলো, এটা আকাশে প্রদক্ষিণরত কৃত্রিম উপগ্রহকে, পৃথিবী থেকে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে ধ্বংস করার পৌরাণিক উদাহরণ, যে কাজ কিছু দিন আগেই ভারত করেছে।

গনেশের মাথার ঘটনা মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চুড়ান্তরূপ সার্জারির একটি ঘটনা, যার গবেষণা বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপর অলরেডি করে ফেলেছে এবং মানুষের উপর করার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পৌরাণিক কাহিনীতে আমরা্ দেখতে পাই, বিশ্বকর্মা প্রথম পুষ্পকরথ নামের একটি বিমান তৈরি করে তা কুবেরকে দিয়েছিলেন; রাবন, কুবেরের কাছ থেকে সেই রথ ছিনতাই করে। ফলে বিমান তৈরির আইডিয়া সনাতনী বা হিন্দুদেরই, যা বাস্তবায়ণ করেছে বিজ্ঞানীরা।

আমি আরেকটা কথা বলি যে পৌরাণিক কাহিনীগুলো হলো পৃথিবীর সকল ঘটনার সারসংক্ষেপ এবং পৃথিবীতে এমন কোনো ঘটনা বা বিষয় নেই, যার ইঙ্গিত পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে নেই। মানুষের মধ্যে শিল্পপ্রতিভা থাকে, দেবী সরস্বতী সেই শিল্প প্রতিভার প্রতীক; মানুষের মধ্যে- বীর, খেলোয়াড়, যোদ্ধা থাকে, মঙ্গল তার প্রতীক; মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ খুব জ্ঞানী হয়, বৃহস্পতি তার প্রতীক; মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ কবি সাহিত্যিক হয়, চন্দ্র তার প্রতীক; মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ খুব সুদর্শন হয়, শুক্র তার প্রতীক; মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ শ্যামলা হয় এবং লম্বা হয়, শনি তার প্রতীক; মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ বেঁটে বা খাটো হয়, বুধ তার প্রতীক, সব মানুষ লিডার বা নেতা হয় না, কিছু কিছু মানুষ নেতা হয়, সূর্য তার প্রতীক; তেমনি সব মানুষ কারিগরি বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় পারদর্শী হয় না, কিছু কিছু মানুষ হয়, বিশ্বকর্মা যার প্রতীক; এভাবে প্রতিটি দেব-দেবী কিছু না কিছুর প্রতিনিধি বা প্রতীক; কোনো দেব-দেবীর পূজা করা মানে সেই দেব-দেবী সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতি তার আগ্রহকে প্রকাশ করা। সরস্বতীর পূজা করা মানে শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করা, লক্ষ্মীর পূজা করা মানে ধন সম্পত্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা, শিব-কালী-দুর্গার পূজা করা মানে সমাজ সংসারের অশুভশক্তিকে দমন করতে তাণ্ডবলীলা করার আগ্রহকে প্রকাশ করা। একইভাবে কারিগরি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় ভালো করার যাদের আগ্রহ, তারা করে বিশ্বকর্মার পূজা।

এরপর বলতে পারেন, সবই তো বুঝলাম, তাহলে বিশ্বকর্মার পূজা করে হিন্দুরা কারিগরি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় এত পিছিয়ে কেনো ?

ভুলে যাবেন না, হিন্দুরাই নির্মান করেছিলো পৃথিবীর প্রথম সভ্যতা, যা সিন্ধু, আর্য ও হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতা নামে পরিচিত; হিন্দুরাই প্রথম লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার করে, যার মাধ্যমে প্রথম রচিত হয় বেদমন্ত্র, হিন্দুরাই শূন্যসহ সংখ্যাগুলোর আবিষ্কারক, যার উপর দাঁড়িয়ে আছে বিজ্ঞানের সকল হিসাব নিকাশ ও আবিষ্কার। হিন্দুরাই চিকিৎসা বিদ্যার জনক, যার নাম আয়ুর্বেদ শাস্ত্র; হিন্দুরাই চাকা আবিষ্কার করে ঘোড়ার গাড়ি নির্মান করে, যার নাম রথ। হিন্দুরাই জলযান হিসেবে প্রথম নৌকা আবিষ্কার করে, যার কাহিনী আছে মৎস্য অবতারের ঘটনায়। হিন্দুরাই প্রথম ভয়ংকর সব মারণাস্ত্রের আইডিয়া দিয়েছে, যার কিছু বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে; কিন্তু ব্রহ্মাস্ত্র, যার প্রয়োগে সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে, এরকম অস্ত্র এখনও বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারে নি, কিন্তু ভবিষ্যতে একসময় পারবে, যেহেতু এর ইঙ্গিত দেওয়া আছে পুরাণে। 

যা হোক, এরকম জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে হিন্দুরাই প্রথম পদক্ষেপ ফেলেছে বা পথ দেখিয়েছে, সেই পথে এগিয়েছে অন্যরা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সভ্যতার শুরুর দিকে হিন্দুদের এই জ্ঞান বিজ্ঞান মধ্যযুগে এসে স্তিমিত হয়ে গেলো কিভাবে ?

মানুষ যখন বেশি সভ্য হয়, তখন সে বেশি ভদ্র হয়, আর ভদ্ররা অন্যের হাতে মার বেশি খায়। হিন্দুদের ক্ষেত্রেও এই ঘটনাই ঘটেছে। বেশি সভ্য হয়ে, বেশি ভালোমানুষী দেখাতে গিয়ে এরা বিদেশী শক্তির কাছে পরাজিত হয়েছে, আর বিদেশী শক্তি ভারতে ক্ষমতাবান হয়েই হিন্দুদেরকে সবদিক থেকে পিষে মারা চেষ্টা করেছে। ভারতে মুসলিম শাসনের শুরুতে হিন্দুদের প্রায় সবাই ছিলো কমবেশি শিক্ষিত। মোঘল আমলে এসে সেটা ২% এ দাঁড়ায়; কারণ, ভারতের মুসলিম শাসকরা হিন্দুদের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয় পুড়িয়ে দিয়েছিলো, না হয় বন্ধ করে দিয়েছিলো। বিদেশি শাসকদের এই জাঁতাকলে পড়ে হিন্দুরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা চালিয়ে যেতে পারে নি, এই সুযোগে মুসলমানরা ভারত থেকে বই পুস্তক নিয়ে গিয়ে নিজেরা সেই বই কপি করে নিয়ে মূল বই পুড়িয়ে ফেলে নিজেদের নামে সেই বই চালিয়ে নিজেদেরকে মহান বিজ্ঞানী ও বিশাল গবেষক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে; পরে ইহুদি খ্রিষ্টানদের হাতে সেই বইগুলো পড়লে, তারা তা থেকে সূত্র নিয়ে নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে। 

এভাবেই ইহুদি ও খ্রিষ্টান বিজ্ঞানীদের হাতে আবিষ্কার হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রায় সকল আবিষ্কার। একটা বিষয় খেয়াল করুন, সময়ের একক হিসেবে পল ও দণ্ডের আবিষ্কারক আমাদের মুনি ঋষিরা, কিন্তু ইহুদি খ্রিষ্টানরা ঘড়ি আবিষ্কার করে সেই সময়কে সেকেন্ড মিনিটে ভাগ করে সময়ের এককের আবিষ্কারক হিসেবে বাহাদুরী দেখাচ্ছে। আবা্র খেয়াল করুন ১৮০০ সালের দিকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব আরম্ভ হলে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলো ঘটে, কিন্তু ইউরোপের শিল্পবিপ্লব ঘটে ভারতের অর্থাৎ হিন্দুদের টাকায়; কারণ, ১৬০০ সালের পর থেকেই- পতুর্গীজ, ফরাসি ও ইংরেজরা ব্যবসার নামে ভারত থেকে প্রচুর টাকা তাদের দেশে নিয়ে যায়, এরপর ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা বাংলা দখল করে ভারত দখলের সূত্রপাত ঘটালে বিভিন্নভাবে প্রচুর টাকা ইংল্যাণ্ডে চলে যায়, এসব টাকাতেই হয় ইউরোপের শিল্পবিপ্লব এবং গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারগুলো। ফলে ইউরোপের শিল্পবিপ্লব এবং তাদের বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের পেছনেও ছিলো হিন্দুদের হাত।

একটা কথা মনে রাখতে হবে যে- প্রাচীন হিন্দু সমাজ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে ছিলো সমৃদ্ধ, মাঝখানে বিদেশী শাসকদের হিন্দুবিরোধী এবং জ্ঞান বিরোধী নীতির কারণে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সেই ধারা থেমে হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে যায় নি, তাই আবার ভারত তথা হিন্দুরা মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, যেহেতু তাদের মাথার উপর কোনো বিদেশি শাসন নেই।

জ্ঞান বিজ্ঞা্নের উৎকর্ষ এক প্রজন্মে হয় না, এর জন্য কয়েক প্রজন্ম দরকার; কিন্তু তারপর হিন্দুদের প্রাচীন বৈজ্ঞানিক গবেষণার ইতিহাস যেহেতু স্বর্ণোজ্জ্বল, সেহেতু স্বশাসনের মাত্র ৭০ বছরের মধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভারত তথা হিন্দুরা এত অগ্রগতি লাভ করেছে যে, হিন্দুদের সাফল্যে বিশ্ব চমকে যাচ্ছে- যেমন মাত্র কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করে মঙ্গলে যান প্রেরণ, এই অভিযানে আমেরিকার লেগেছে কয়েক হাজার কোটি; পৃথিবী থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে আকাশে ঘূর্ণায়মান কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযান, ৫ হাজার কি.মি ব্যাসের ক্ষেপনাস্ত্র নির্মান, হিন্দুদের এসব পরিকল্পনা ও সাফল্যে বিশ্ববাসী শুধু চমকেই যায় নি, অবাকও হয়েছে।

যা হোক, ফটোপোস্টে চীনের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, বিশ্বকর্মা পূজা না করেও জ্ঞান বিজ্ঞানে চীনের অগ্রগতি ভারতের চেয়ে বেশি। একটা কথা ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার যে- বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টাই বিশ্বকর্মার পূজা, বিশ্বকর্মার মূর্তিতে ফুল জল দিয়ে মন্ত্র পড়া বিশ্বকর্মার পূজা নয়, এটা লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতা, তবে এই আনুষ্ঠানিকতারও একটা মূল্য আছে, আর সেটা হলো- প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিশ্বকর্মার পূজার শিক্ষাটাকে প্রবাহিত করা, এই আশায় যে ভবিষ্যতের কেউ না কেউ তো এই শিক্ষাটাকে উপলব্ধি করে তাকে কাজে লাগাতেও পারে।

যা হোক, একটু আগেই বলেছি, বৈদেশিক শাসন, ভারতের হিন্দুদের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে রোধ করেছে; স্বশাসনের পর ভারতের মুসলিম প্রেমী কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকার এবং মূর্খ আঞ্চলিক দলগুলোও ভারত তথা হিন্দুদের অগ্রগতিকেও বহু পরিমাণে রোধ করেছে। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে এই সমস্যা ছিলো না; ১৯৪৯ সাল থেকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কোনো রকম বিরোধিতা ছাড়াই একইভাবে এবং এককভাবে চীন শাসন করে যাচ্ছে, ফলে শিল্প ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বর্তমানে চীনের যে সাফল্য, আমি মনে করি, এটা কিছুই নয়, তাদের অগ্রগতি আরো বেশি হওয়া দরকার ছিলো। ভারতের হিন্দুত্বববাদী বিজেপি সরকার, মাত্র কয়েকবছর দেশ শাসন করে ভারতকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে, আমি মনে করি, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মতো বিজেপি সরকার যদি দেশ পরিচালনার সময় ও সুযোগ পায়, চীন তো ছাড়, আমেরিকাও ভারত তথা হিন্দুদের পায়ে এসে তেল মালিশ করবে। 

চন্দ্রযান-২ এর অভিযানের পর আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, ভারতের ইসরোর সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে; পৃথিবীর সেরা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা কিন্তু আজ পর্যন্ত অন্য কোনো দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে নি, এই বিষয়টিও কি ভারত তথা হিন্দুদের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করে না ?

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় একটা জাতির উন্নতি হতে যত সময় লাগে, শিল্পসংস্কৃতিতে তত সময় লাগে না; একারণেই স্বশাসনের মাত্র ৫০/৬০ বছরের মধ্যে ভারতীয় নাচ এবং গান বিশ্ব দখল করে ফেলেছে; ভারতীয় সিনেমা বাহুবলী, আমেরিকান সিনেমাকে টক্কর দিয়েছে, নোবেল পুরষ্কার চালু হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মাথায় সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছে, এটা কি সরস্বতী পূজার শিক্ষা বা দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ নয় ?

যে ফটোপোস্টর উপর আলোচনা করছি, সেই ফটোটি ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে, এটা একটা নাস্তিক সংগঠন, এরা হিন্দুধর্ম না মানলেও এবং হিন্দুধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করলেও, ইসলামের কুসংস্কার ও বিজ্ঞানবিমুখতার বিরুদ্ধে কিছু বলে না; কারণ, তাহলে কথা বলার জন্য মুখ এবং চিন্তা করার জন্য মাথা, ঘাড়ের উপর থাকবে না। এদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন হচ্ছে- বিশ্বকর্মার পূজা করে যদি কোনো ফল না হয়, তোরা বিশ্বকর্মার পূজা না করেই বা কোন বাল তুললি ? প্রতিষ্ঠার তো অনেক বছর হয়ে গেলো, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কি একজন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে পেরেছে ?

এটা ঠিক, ফুল জল দিয়ে বিশ্বকর্মার পূজা করে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিশ্বকর্মাকে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো লাভ নেই বা লাভ হবে না; কিন্তু বিশ্বকর্মার শিক্ষাটাকে যদি আমরা কাজে লাগাই, অচিরেই আমরা যে চীন, জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, এবং আমেরিকাকেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ছাড়িয়ে যেতে পারবো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই; কারণ, ভারতের প্রকৃত হিন্দু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, সেই অগ্রযাত্রা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

বিশ্বকর্মা সম্পর্কে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ফটোপোস্ট, নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করে তাতে মধুসূদন মাহাতো নামের এক বলদা মন্তব্য করেছে, 

"আমার মোটর সাইকেল তেল ছাড়া বিশ্বকর্মার দোহাই (দিয়ে) চলে না। তাই আজকে গাড়ি পরিস্কার ও পূজো কোনটাই করি না।"

-কতখানি নির্বোধ হলে কেউ এই ধরণের মন্তব্য করতে পারে, সেটা ভেবেই তো আমি অবাক হচ্ছি। সাধারণভাবে সন্তানের জন্ম দিতে গেলে নারী ও পুরুষের মিলন ঘটাতেই হবে, এটা সন্তান জন্মদানের যেমন একটা অপরিহার্য শর্ত; তেমনি পেটের ক্ষুধা মেটাতে গেলে এবং দৈহিক শক্তি পেতে গেলে খাবার খেতেই হবে; কারণ, এটা ক্ষুধা নিবারণ ও দৈহিক শক্তি অর্জনের অপরিহার্য শর্ত। একইভাবে গাড়ি চালাতে গেলে তাতে কোনো না কোনো ফুয়েল বা জ্বালানি দিতেই হবে, এটা যেকোনো ইঞ্জিন চালানোর অপরিহার্য শর্ত। গাড়ি চালানোর জন্য শক্তিরূপ যেকোনো জ্বালানি প্রয়োজন, এই যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান, এই জ্ঞানেরই প্রতীক হলো বিশ্বকর্মা; সুতরাং কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে, প্রযুক্তির পৌরাণিক প্রতীক বিশ্বকর্মাকে অবজ্ঞা করা মানে ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞানকে অবমূল্যায়ণ করা।

শেষে এই বলদা বলেছে, "তাই আজকে গাড়ি পরিষ্কার ও পূজো কোনটাই করি না।"

বিশ্বকর্মার উপর অভিমান বা রাগ করে গাড়ি পরিস্কার না করলে বিশ্বকর্মার কিছু যাবে আসবে না, যাবে আসবে তোর। গাড়ি দ্রুত পুরাতন হয়ে লক্কর ঝক্কর হয়ে যাবে, ফলে বেচতে গেলে দাম পাবি না; আর এই গাড়িতে চড়ে বা নতুন একটা গাড়ি কিনতে গেলে তুই যে আসলে বিশ্বকর্মার মানসপুত্র গাড়ি নির্মাতাদের কাছেই মাথা নত করিস, সেটা কি তুই বুঝিস ? গাড়ি নির্মা্তাদের কাছে মাথা নত করা মানে বিশ্বকর্মার কাছেই মাথা নত করা, মানে বিশ্বকর্মারই পূজা করা, সেটাও কি তুই বুঝিস ? সেটা তুই বুঝবি কেমনে, সেই জ্ঞান কি তোর আছে ? যদি তোর সেই জ্ঞান থাকতো, তাহলে কি বিশ্বকর্মার বিরোধী নাস্তিকদের এই ফটোপোস্টকে সাপোর্ট করে কোনো মন্তব্য করতে পারতিস ? পারতিস না।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রী বিশ্বকর্মা।

No comments:

Post a Comment