নাস্তিকদের মূর্খামিযুক্ত কটূক্তির জবাব :
আমি আমার একটি লেখায় অনেক আগে বলেছিলাম- সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে যাদের জ্ঞান মাঝামাঝি বা ফিফটি পার্সেন্ট এর আশে পাশে, তারা হয় নাস্তিক; এই জ্ঞানের সীমাকে যারা অতিক্রম করতে পারে তারাই আসলে হয় প্রকৃত ধর্ম জ্ঞানী এবং সনাতনী মাইন্ডের।
নাস্তিকদের জ্ঞান যেহেতু টোটাল জ্ঞানের অর্ধেক, তাই তারা কোনো কিছুকে দেখেও অর্ধেক; কারণ, কোনো বিষয়কে সম্পূ্র্ণরূপে দেখার তো তাদের ক্ষমতাই নেই।
একটি নাস্তিকমার্কা গ্রুপে তুষার ভূঁইয়া নামের এই অর্ধজ্ঞানী মহাভারত ও ইন্দ্রকে নিয়ে কিছু কটূক্তি করেছে, যার উপর ভিত্তি করে সে কটূক্তিগুলো করেছে, সেইসব ঘটনার স্থান স্বর্গে, যেটা এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ কল্পনা; কারণ, মানুষ, বিশ্বাসের হিসেব মেলানোর জন্য স্বর্গ ও নরকের কল্পনা করে নিয়েছে; স্বর্গ ও নরক মানুষের মৃত্যুর পরের ঘটনার ব্যাপার, কোনো জীবিত মানুষের পক্ষে স্বর্গ ও নরকে যাওয়ার বা তা দেখার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু মহাভারতের এই উপাখ্যানে বলা হয়েছে- অর্জুন জীবিত অবস্থায় স্বর্গে গেছে, অর্জুনের দেবজ পিতা ইন্দ্র তাকে অপ্সরার সাথে যৌন মিলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, এই নিয়েই তুষার নামের এই নাস্তিক মহাভারত সম্পর্কে বলেছে- এটা ধর্মগ্রন্থ নাকি সার্কাস ?
প্রথমত অর্জুনের জীবন থেকে যদি মহাভারতের এই উপাখ্যানটিকে ডিলিট করে দেওয়া হয়, তাহলেও মহাভারতের কাহিনীর কোনো হেরফের হয় না। ১২ বছরের বনবাস শেষে এক বছরের অজ্ঞাতবাস যাপনের সময় অর্জুন বিরাট রাজার গৃহে নপুংসকের বেশে ছিলো এবং বিরাট রাজার কিশোরী মেয়ে উত্তরাকে নাচ গান শিখিয়েছিলো। অর্জুনের এই নপুংসকতার অভিনয়কে বাস্তবে পরিণত করার জন্য মহাভারতের এই উপাখ্যানটি রচনা করে মূল মহাভারতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা বেদব্যাস কর্তৃক রচিত নয়; কারণ, বেদব্যাস মাত্র ২৪ হাজার শ্লোকে মূল মহাভারত রচনা করেছিলেন (আদি পর্ব), পরবর্তীতে বহু লেখক তাতে নানা উপাখ্যান জুড়ে জুড়ে দিতে মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা ১ লক্ষে উন্নীত করেছিলো; যে কথা রাজ শেখর বসু, তার অনুবাদিত মহাভারত গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন এভাবে-
"মহাভারত সংহিতা গ্রন্থ, এতে বহু রচয়িতার হাত আছে এবং একই ঘটনার বিভিন্ন কিংবদন্তী গ্রথিত হয়েছে। মূল আখ্যান সম্ভবত একজনেরই রচনা, কিন্তু পরে বহু লেখক তাতে যোগ করেছেন। এমন আশা করা যায় না যে তারা প্রত্যেকে সতর্ক হয়ে একটি পূর্ব নির্ধারিত বিরাট পরিকল্পনার বিভিন্ন অংশ গড়বেন, মূল প্ল্যান থেকে কোথাও বিচ্যুত হবেন না।"
রাজশেখর বসু আরো বলেছেন, "বর্তমান মহাভারতের সমস্তটা এক কালে রচিত না হলেও এবং তাতে বহু লোকের হাত থাকলেও সমগ্র রচনাই এখন কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসের নামেই চলে।"
এতে বোঝা যাচ্ছে মহাভারতের বিভিন্ন উপাখ্যান, বিভিন্ন লোক, বিভিন্ন সময় লিখে মহাভারতের সাথে জুড়ে দিয়েছে, সুতরাং মহাভারতের এমন কোনো উপাখ্যান, যা ফেলে দিলে মহাভারতের মূল কাহিনীর তেমন কোনো ক্ষতি হয় না, সে সব উপাখ্যানেরর উপর ভিত্তি করে মহাভারত সম্পর্কে কোনো সমালোচনা করা উচিত নয়, যেটা করেছে তুষার নামের এই অর্ধজ্ঞানী।
স্বর্গ ও নরক যেমন মানুষের কল্পিত বিশ্বাস, তেমনি স্বপ্নে দেখা ঘটনাও মানুষের জীবনে অবাস্তব। এখন স্বপ্নে দেখা ঘটনাকে কেউ যদি বাস্তব বলে ধরে নেয়, তাহলে সেটা যেমন তার ভুল হবে, তেমনি জীবিত মানুষের জীবনে স্বর্গ নরকের ঘটনাও অবাস্তব, এ প্রসঙ্গে একটু আগেও বলেছি; এখন দেখা যাক এই নাস্তিকের জীবনে যদি একটি স্বপ্নকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে বাস্তব বলে প্রচার করা হয়, সেটা কেমন হবে ?
এটা প্রায় সবাই জানে যে- নাস্তিকেরা যৌনতার ব্যাপার উদার। যৌনতাকে এরা ডাল ভাতের মতোই মনে করে। নিজের যৌনতার চাহিদাকে মেটাতে এরা নিজের মা, বোনের সাথে সেক্স করতেও দ্বিধা করে না। যারা সেই সুযোগ পায়, তারা তো সেটা করেই, আর যারা সেই সুযোগ পায় না, তারাও এটাকে বাস্তব সম্মত বলেই মনে করে এই কারণে যে- তারা মনে করে মায়ের যৌন চাহিদা যদি পিতা মেটাতে না পারে এবং মা, বোন যদি যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য বাইরে গিয়ে কারো সাথে কিছু করতে গিয়ে কোনো কেলেঙ্কারি বাঁধায়, তার পরিবর্তে বাড়ির ভেতরেই ইনসেস্ট সেক্স করে তাদের চাহিদা মেটানো ভালো, এতে পরিবারের সম্মান রক্ষা পায় এবং নিজেদের সমস্যা বা চাহিদাও মেটানো যায়।
ধরে নিলাম, তুষার নামের এই নাস্তিক সেই লেভেলের নয়; তার পরিবারে এরকম সমস্যা নেই এবং সে তার মা, বোনকে কামের দৃষ্টিতে দেখে না। কিন্তু একদিন সে হঠাৎ রাতে স্বপ্নে দেখে সে তার মা এবং বোনের সাথে গ্রুপসেক্স করছে। এখন এই রাতে স্বপ্নে দেখা বিষয়কে সে কি বাস্তব ঘটনা বলে মনে করবে ? নিশ্চয় নয়। একইভাবে জীবিত মানুষের জীবনে স্বর্গের
ঘটনাকেও বাস্তব বলে মনে করা উচিত নয়।
এবার দেখুন মহাভারতের বনপর্বের সেই উপাখ্যানে আসলে কী বলা হয়েছে এবং কোন পর্যন্ত কাহিনী বর্ণনা ক'রে তুষার নামের এই ধান্ধাবাজ আসল ব্যাপারকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে ?
"অর্জুন অমরাবতীতে গেলে দেব গন্ধর্ব সিদ্ধ ও মহর্ষিগণ তার সংবর্ধনা জানায়। তিনি নত মস্তকে প্রণাম করলে ইন্দ্র তাকে কোলে নিয়ে নিজের সিংহাসনে বসালেন।তুম্বুরু প্রভৃতি গন্ধর্বগন গাইতে লাগলেন ,, ঘৃতাচী মেনোকা রম্ভা উর্বশী প্রভৃতি হাবভাবময়ি মনোহারিণী অপ্সরারা নাচতে লাগলেন।
তারপর দেবতাগণ পাদ্য অর্ঘ্য ও আচমনীয় দিয়ে অর্জুনকে ইন্দ্রের ভবনে নিয়ে যায়।সেখানে ইন্দ্রের নিকট নানাবিধ অস্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করে অর্জুন।
একদিন চিত্রসেন উর্বশীর কাছে গিয়ে বলে,
কল্যাণী, দেবরাজের আদেশে তোমাকে জানাচ্ছি যে অর্জুন তোমার প্রতি আসক্ত হয়েছেন,তিনি আজ তোমার চরণে আশ্রয় নেবেন।
উর্বশী নিজেকে সম্মানীত জ্ঞান করে স্মিতমুখে বললেন আমিও তার প্রতি অনুরক্ত।
সখা, তুমি যাও, আমি অর্জুনের সঙ্গে মিলিত হবো।
উর্বশী স্নান করে মনোহর অলংকার ও গন্ধমালা ধারন করলেন এবং সন্ধ্যাকালে চন্দ্রোদয় হলে অর্জুনের ভবনে যাত্রা করলেন।
তার কোমল কুঞ্চিত দীর্ঘ কেশপাশ পুষ্পমালায় ভূষিত,
মুখচন্দ্র যেন গগনের চন্দ্রকে আহবান করছে,চন্দনচর্চিত হারশোভিত স্তনদ্বয় তার পাদক্ষেপে লম্ফিত করছে ।
অল্প মদ্যপান, কামাবেশ ও বিলাস বিভ্রমের জন্য তিনি অতিশয় দর্শনীয়া হলেন।
দ্বারপালের মুখে উর্বশীর আগমনসংবাদ শুনে অর্জুন শঙ্কিত মনে এগিয়ে এলেন এবং লজ্জায় চক্ষু আবৃত করে, সসম্মানে বললেন দেবী,নতমস্তকে অভিবাদন করছি, বলুন কি করতে হবে?
অর্জুনের কথা শুনে উর্বশীর যেন চৈতন্যলোপ হল।
তিনি বললেন নরশ্রেষ্ঠ চিত্রসেন আমাকে কি বলেছে শোন।
তোমার আগমনের জন্য ইন্দ্র যে আনন্দোৎসবের অনুষ্ঠান করেছিলেন তাতে দেবতা মহর্ষি রাজর্ষি প্রভৃতির সমক্ষে গন্ধর্ব গন বীণা বাজিয়েছিলেন, শ্রেষ্ঠ অপ্সরা নৃত্য করেছিলেন।পার্থ , সেসময়ে তুমি নাকি অনিমেয়নয়নে শুধু আমাকেই দেখছিলে।সভাভঙ্গের পর তোমার পিতা ইন্দ্র চিত্ররথকে দিয়ে আমাকে আদেশ জানালেন , আমি যেন তোমার সঙ্গে মিলিত হই।এই কারণেই আমি তোমার সেবা করতে এসেছি।
তুমি আমার চিরাভিলাষিত , তোমার গুণাবলিতে আকৃষ্ট হয়ে আমি অনঙ্গের বশবর্তিনী হয়েছি।
লজ্জায় কান ঢেকে অর্জুন বললেন, ভাগ্যবতী, আপনার কথা আমার শ্রবণযোগ্য নয়,কুন্তি ও শচীর ন্যায় আপনি আমার গুরুপত্নীতুল্য। আপনি পুরো বংশের জননী , গুরুর অপেক্ষাও গুরুতরা, সেজন্যেই উৎফুল্লনয়নে আপনাকে দেখছিলাম। উর্বশী বললেন যুবরাজপুত্র আমাকে গরুস্থানীয়া মনে করা অনুচিত, অপ্সরারা নিয়মাধীন নয়। পুরুবংশের পুত্র বা পৌত্র যে কেউ স্বর্গে এলে আমাদের সঙ্গে সহবাস করে। তুমি আমার বাঞ্ছা পূর্ণ কর। অর্জুন বললেন বরবর্ণিনী , আমি আপনার চরণে মস্তক রাখছি, আপনি আমার মাতৃবৎ পূজনীয়া , আমি আপনার পুত্রবৎ রক্ষণীয় ।
উর্বশী ক্রোধে অভিভূত হয়ে ভ্রুকুটি করে বললেন পার্থ আমি তোমার পিতার অনুজ্ঞায় স্বয়ং তোমার গৃহে কামার্তা হয়ে এসেছি, তথাপি তুমি আমাকে আদর করলে না , তুমি সম্মানহীন নপুংসক নর্তক হয়ে স্ত্রীদের মধ্যে বিচরণ করবে । এই বলে উর্বশী স্বগৃহে চলে গেলেন।" (মহাভারত,,,, বনপর্ব, অনুবাদক,,,,,,রাজশেখর বসু।)
- তুষার, যেভাবে ঘটনাটিকে মহাভারত থেকে তুলে ধরেছে, আমি সেভাবেই কোনো রকম এডিট না করে কপি পেস্ট এর মাধ্যমে তুলে দিলাম, সুতরাং এখানের ভুল বানান এবং ভুল বাক্য বিন্যাসের দায় সম্পূর্ণ তুষারের।
যা হোক, এখানের মূল ঘটনা হলো- অর্জুন স্বর্গে যায়, তার পিতা ইন্দ্র তাকে স্বাগত জানায়, নিজের সিংহাসনে বসায়, চিত্রসেন অর্জুনকে নাচ গান শেখায়, একটি বিনোদন অনুষ্ঠানে- অর্জুন, উবর্শীকে মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকলে ইন্দ্র ধরে নেয় যে অর্জুন তাকে পেতে চায়; তাই ইন্দ্র, উর্বশীকে অর্জুনের কাছে পাঠায়। কিন্তু অর্জুন, উবর্শীকে মাতৃজ্ঞানে তার সাথে সহবাস করে না, ফলে উবর্শী অর্জুনকে নপুংসক হওয়ার অভিশাপ দিয়ে নিজ ভবনে চলে যায়।
এই উপাখ্যান এখানেই শেষ নয়, কিন্তু এই পর্যন্ত বলেই তুষার তার মুখ বন্ধ করেছে, যাতে তার উদ্দেশ্যটা সিদ্ধ হয়। এজন্যই আমি বলেছি- নাস্তিকরা অর্ধজ্ঞানী, ক্ষেত্রবিশেষে ধান্ধাবাজ এবং তারা কোনো কিছুর পুরোটা কখনো দেখতে পায় না বা দেখে না।
ইসলামের আল্লা জগতের ভালো কিছুকে নিজের কাজ, আর খারাপ কিছু শয়তানের কাজ বলে মনে করে। এই থিয়োরি মোতাবেক আল্লা যে সৃষ্টিকর্তা নয়, সেটা বোঝার মতো জ্ঞান বুদ্ধি কোনো মুসলমানের নেই। একটি গল্প বা উপন্যাসের লেখক, ভালো মন্দ সকল চরিত্র মিশিয়েই একটি কাহিনী বানায়, তাই সে সেই গল্পের রচয়িতা। এই সত্যকে হিন্দুর ঈশ্বর প্রকাশ করে এভাবে- জগতের এমন কিছু নেই যা আমি নই (গীতা-৭/৭)। গীতার এই একটি কথাই শ্রীকৃষ্ণকে জগতের স্রষ্টা বা ঈশ্বর হিসেবে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।
পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে মানুষের জন্য শিক্ষা রয়েছে, এই কাহিনীগুলো কখনো বাস্তবে ঘটে নি এবং এই কাহিনীগুলো হলো জগতের ভালো মন্দ সকল ঘটনার সারসংক্ষেপ। পৃথিবীতে যেমন ভালো মন্দ মানুষ রয়েছে, তেমনি তার প্রতীক হিসেবে পৌরাণিক কাহিনীগুলোতেও ভালো মন্দ চরিত্র রয়েছে। কোনো দুর্বল মানুষ কখনো খারাপ হয় না, খারাপ হয় ক্ষমতাবানরা; এই ক্ষমতাবান খারাপ মানুষদের প্রতীক হলো ইন্দ্র। দুশ্চরিত্র মানুষ যেমন যেকোনো ঘটনার মধ্যে খারাপটাকেই ভেবে নেয়, তেমনি উর্বশী অপ্সরার নাচ দেখে মুগ্ধ হওয়া অর্জুনকে দেখে ইন্দ্রের মনে হয়েছিলো যে অর্জুন বুঝি উবর্শীকে তার বিছানায় পেতে চায়, তাই সে উর্বশীকে অর্জুনের কাছে পাঠায়। এই ঘটনাটা এমন যে, এক সিগারেট সেবী ব্যক্তি যেমন খুব সহজেই ধরে নেয় যে তার সামনে বসে থাকা ব্যক্তিও সিগারেট খায় এবং এই বিশ্বাসে সে তাকে সিগারেট অফারও করে ফেলে, অর্জুনের কাছে ইন্দ্রের উর্বশীকে পাঠানোর ঘটনাও ঠিক তেমন।
যা হোক- অর্জুন, উবর্শীকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য সে তাকে তার মাতৃস্থানীয়া বললে, অর্জুনকে তার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য উবর্শী বলে- অপ্সরারা নিয়মাধীন নয়; যে কেউ স্বর্গে এলে তাদের সাথে মিলিত হতে পারে। অপ্সরা মানে স্বর্গবেশ্যা। তো একজন স্বর্গবেশ্যা হিসেবে উর্বশী যে নীতির কথা বলেছে, তার সাথে পৃথিবীর পতিতা বা বেশ্যাদের নীতিটাকে একবার মেলান, দেখুন উবর্শী ভুল কিছু বলেছে কি না ? পতিতাদের কাছে কে পুত্র তুল্য বা কে নাতী তুল্য বা কে তার পিতৃতুল্য, সেটা কিন্তু কোনো বিষয় নয়, সবার সাথেই সে বিছানায় যায়; কারণ, তার উদ্দেশ্য হলো দেহের বিনিময়ে পুরুষকে খুশী করে অর্থ উপার্জন; এখানে নীতি একটাই, সেটা হলো টাকা বা স্বার্থসিদ্ধি। তাই উর্বশীর এই কথার মাধ্যমে আসলে জগতের সেই বেশ্যা নীতিই প্রতিফলিত হয়েছে।
একটি খারাপ ঘটনার মাধ্যমেই কোনো মহৎ মানুষের চরিত্রের পরীক্ষা হয়। উবর্শীকে অর্জুনের কাছে পাঠানো হয়, যার সুযোগ অর্জুন নিতে পারতো এবং উর্বশীকে ভোগ করতে পারতো; কিন্তু তা না করে অর্জুন যে দৃঢ় চরিত্রের পরিচয় দিয়েছে, তা শুনে ইন্দ্র অর্জুনকে বলে-
"বৎস, তোমার জন্য কুন্তী আজ সুপুত্রবতী হলেন, তুমি ধৈর্যে ঋষিগণকেও পরাজিত করেছো।"
এই জন্যই অর্জুন সর্বোত্তম এবং তার এই চারিত্রিক দৃঢতার জন্যই সে গীতার জ্ঞান গ্রহনের যোগ্যতা অর্জন করেছিলো।
যদি ধরে নিই যে, উবর্শী ছিলো অর্জুনের জন্য একটি পরীক্ষা, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই; অর্জুন সেই পরীক্ষায় পাশ করেছে এবং চারিত্রিক দৃঢ়তায় সে মানুষের জন্য অনুকরণীয় হয়েছে; কিন্তু উপাখ্যানের শেষের এই বিষয়টি তুষার নামের এই ধান্ধাবাজ সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছে; কারণ, সে উপাখ্যানের শেষের একটি বাড়তি তথ্য-
( পুরুরবার ঔরসে উর্বশীর গর্ভে আয়ু জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর প্রপৌত্র পুরু ), লিখেছে, কিন্তু মাঝখানের কিছু অংশকে চেপে গিয়ে মহাভারতকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে অর্জুনের চরিত্রে কালিমা লেপন করার চেষ্টা করেছে; এজন্যই আমি মনে করি নাস্তিকরা অর্ধজ্ঞানী, ক্ষেত্র বিশেষে ধান্ধাবাজ এবং কোনো বিষয়ে তাদের যেমন টোটাল জ্ঞান নেই, তেমনি কোনো বিষয়কে তারা সম্পূর্ণ দেখতেও পায় না।
মহাভারতের একটি উপাখ্যানকে আংশিকভাবে উপস্থাপন করে তুষার ভূইয়া নামের এই ধান্ধাবাজ মুসলমান নাস্তিক হিন্দুধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে, যদিও এই বিষয়গুলো পৌরাণিক এবং যা বাস্তবে পৃথিবীতে কখনো ঘটে নি। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে এমন সব ঘটনা আছে, যেগুলো বাস্তবে ঘটেছে, যেমন- গনিমতের মালের ভাগ থেকে প্রাপ্ত যৌনদাসী, মুহম্মদ, তার নিজের চাচাতো ভাই কাম জামাই আলীকে উপহার দিয়েছিলো, আলী তাকে ধর্ষণের নামে ভোগ করেছে। আরেক ঘটনায়, মুহম্মদ উম কিরফার মেয়েকে ধরে এনে তার চাচা হামজাকে উপহার দিয়েছিলো। এছাড়াও অনেক যুদ্ধ বন্দিনীকে মুহম্মদ নিজে ধর্ষণ করেছে এবং উপহার হিসেবে সেই সব হতভাগী মেয়েদেরকে নিজের জামাই, চাচা, বন্ধু বান্ধবদেরকে দিয়েছে ধর্ষণ করার জন্য, যেগুলো হাদিস কোরান দ্বারা প্রমাণিত এবং যে ঘটনাগুলো পৃথিবীতে ঘটেছে, এগুলো নিয়ে মুসলমানদের কোনো লাজ লজ্জা নেই, তাদের মাথা ব্যথা কিছু পৌরাণিক ঘটনায়, যেগুলো কখনো ঘটে নি এবং যেগুলোর চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো লোকশিক্ষা প্রদান।
মহাভারতের এইসব ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তুষার নামের এই ধান্ধাবাজ মুসলমান বলেছে- এটা ধর্মগ্রন্থ না সার্কাস ? এছাড়াও সে বলেছে, স্বর্গ তো একটা বেশ্যালয়।
মহাভারত যদি সার্কাস হয়, তাহলে খুন-ধর্ষণ-লুঠপাটের নির্দেশ দাতা কোরান হাদিস কী ? কোরান হাদিস তো ব্লু ফিল্ম। আর কোরান হাদিস মোতাবেক ইসলামের বেহেশত তো ব্লু ফিল্মের একটা কারখানা, যেখানে মুসলমানরা একেকজন দিন রাত ৭২টি হুর আর কিছু হিজড়া গেলমানকে নিয়ে সব সময় দোচাদুচিতে মেতে থাকবে।
ব্লু ফিল্মের অভিনেতা হয়ে মিথ্যা সার্কাস নিয়ে এই মুসলমান আবার পরিহাস করেছে, আর করবেই বা না কেনো; এ তো মুহম্মদের ৩০ হর্স পাওয়ার ওয়ালা লিঙ্গ দ্বারা দুচিত, এর চোখে যেমন ভালো কিছু পড়বে না, তেমনি এ চোখে ভালো কিছু দেখবেও না, এটাই তো স্বাভাবিক। তাই মহাভারতের মূল কাহিনী বাদ দিয়ে সে যেমন প্রক্ষিপ্ত উপাখ্যান নিয়ে টানাটানি করেছে, তেমনি যে উপাখ্যানে অর্জুনের চরিত্রের পরীক্ষা নিয়ে অর্জুনকে শ্রেষ্ঠ চরিত্রবান হিসেবে প্রমাণ ও ঘোষণা করা হয়েছে, সেই উপাখ্যানকে আংশিকভাবে উপস্থাপন করে মহাভারত সম্পর্কে কটূক্তি করেছে। এ তো বস্তির কোণে পড়ে থাকা একটি নগ্ন বেশ্যা, যাকে কুত্তাও দুচে না বা দুচবে না।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
"ওঁ সহানা ভবতুঃ" (ঈশ্বর আমাদেরকে রক্ষা করুন)

No comments:
Post a Comment