Monday, 22 June 2020

বেদ সম্পর্কে মুসলমানদের মিথ্যা প্রচারের জবাব - ২


বেদ সম্পর্কে মুসলমানদের মিথ্যা প্রচারের জবাব - ২

এই পর্বে ইসতিয়াকের, বেদে বর্ণিত সূর্য প্রসঙ্গে তার চুলকানির জবাব দিচ্ছি-

এই মুমিন বলেছে, "আমরা জানি সূর্য পৃথিবীর চারদিক ঘুরছে, কিন্তু বেদ বলে সূর্য ঘোড়ার গাড়ির উপর রয়েছে ও এই ঘোড়ার গাড়িটি ৭টি ঘোড়া চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং পৃথিবীর চারেদিকে ঘুড়ছে।" এই কথা নাকি লিখা আছে ঋগ্বেদের ১/৫০/১ নং মন্ত্রে, দেখে নিন সেই মন্ত্রটি এবং তার অর্থ-

"উদু তং জাতবেদসং দেবং বহন্তি কেতবম্। দৃশে বিশ্বায় সূর্যম্।।

এর অর্থ হিসেবে ড. তুলসীরাম দাস তার ইংরেজি অনুবাদে যা লিখেছেন, তার একটি স্ন্যাপশট এই পোস্টের সাথে ফটো হিসেবে যুক্ত করে দিয়েছি, নিশ্চয় সেটা দেখেছেন, আমি এখানে তার সরল অনুবাদটা করে দিচ্ছি; তুলসীরাম দাস যা লিখেছেন, তার সরল বাংলা হলো-

"সূর্যের রশ্মি আলোর প্রভা বহন করে সবকিছুকে প্রকাশ করে।"
সূর্যকে নিয়ে ঘোড়া ছুটছে এরকম কোনো ইঙ্গিত কি এখানে আছে ? নেই। তাহলে এই ধরণের অনুবাদ মুসলমানরা পায় কোথায় ?

এই মুসলমানের পরের প্রলাপ হলো ঋগ্বেদের ১/৫০/৮ নং মন্ত্রে নাকি লিখা আছে,

"হে, উজ্জ্বল সূর্য, হৃত নামক সাত ঘোড়ায় চালিত রথ তোমাকে আকাশে নিয়ে গেছে।" যার ইংরেজি অনুবাদ সে লিখেছে, "O, bright Sun, a chariot named harit with seven horses takes you to sky." নিচে দেখুন সেই মন্ত্রটি এবং তার প্রকৃত অর্থ-

"সপ্ত ত্বা হরিতো রথে বহন্তি দেব সূর্য। শোচিষ্কেশং বিচক্ষণ।।"
হরফ প্রকাশনীর বেদ, যার মালিক একজন মুসলমান, সেই বেদ এ এর অর্থ লিখা আছে, "হে দীপ্তিমান সর্বপ্রকাশক সূর্য, হরিৎ নামক সপ্ত অশ্ব রথে তোমাকে বহন করে, জ্যোতিই তোমার কেশ।"
শেষে যে লিখা হয়েছে, 'জ্যোতিই তোমার কেশ', এর দ্বারাই প্রমান হয় যে হরফের বেদ এ এই মন্ত্রের যে অর্থ লিখা হয়েছে তা ঠিক নয়; কারণ, হরিৎ নামক সাত ঘোড়ার রথের সাথে, জ্যোতিই তোমার কেশ, এই বাক্যের কোনো মিল নেই; নিশ্চয় এই মন্ত্রে প্রকাশ করা হয়েছে অন্য কিছু, সেই অন্য কিছুটা যে কী, তার জন্য আমাদেরকে ঢুকতে হবে তুলসীরাম দাসের অনুবাদে। তুলসীরাম দাস, তার ইংরেজি অনুবাদে এই মন্ত্রের অর্থ লিখেছেন,

"O Sun, self refulgent lord of blazing flames and universal illumination, seven are the colourful lights of glory which like seven horses draw your chariot of time across the spaces. In the same way, seven are the chhandas, metres, which reveal the light of Divinity in the sacred voice of Veda."

এর সরল বাংলা হলো- ও, আপন তেজে বিশ্ব প্রকাশক সূর্য, সাতটি ঘোড়ার মতো তোমার দ্যুতির সাতটি রঙ, তোমার সময়ের রথকে বয়ে নিয়ে যায়; একইভাবে সাতটি ছন্দ, সাতটি তাল, বেদের পবিত্র স্বর্গীয় জ্যোতিকে প্রকাশ করে।"
বিজ্ঞান জানিয়েছে, সূর্যের আলোকে বিশ্লেষণ করলে সাতটি রং পাওয়া যায়, আপাতদৃষ্টিতে সূ্র্যকে যেহেতু চলমান বলে মনে হয়, তাই সূর্যের আলোর সাত রং দ্বারা রূপক অর্থে সাতটি ঘোড়াকে কল্পনা করা হয়েছে এবং সূর্যের আলোর মাধ্যমে যেহেতু সূর্য সর্বত্র পৌঁছায়, সেহেতু ঐ সাত রং, রূপকার্থে যাকে বলা হয়েছে ঘোড়া, তা সূর্যকে টেনে নিয়ে যায় বলে কল্পনা করা হয়েছে। মূলত এখানে সাত ঘোড়া মানে সূর্যের আলোর সাত রং।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, সূর্যের আলো বিশ্লেষণ করলে যে সাতটি রং পাওয়া যায়, বিজ্ঞানীরা এটা জানতে পেরেছে মাত্র গত শতাব্দীতে, কিন্তু সূর্যের আলোতে যে সাতটি রং আছে এই কথা আমাদের মুনি ঋষিরা বলে গেছেন ৮/১০ হাজার বছর আগে। মুনি ঋষিদের বিজ্ঞানের জ্ঞান সম্পর্কে একটু ভাবুন, আপনি অবাক হতে বাধ্য হবেন।
যা হোক, এরপর এই মুমিন বলেছে, যজুর্বেদের ৩৩/৪৩ নং মন্ত্রে নাকি বলা আছে, "হে মানব, আকর্ষণীয় সূর্য সোনার রথের উপর চড়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে এবং পৃথিবীর অন্ধকার দূর করছে।" এর ইংরেজি অনুবাদ হিসেবে সে লিখেছে, " O, man,  the sun who is most attractive, takes round of the earth, on his golden chariot through the sky and remove the darkness of the earth."

এবার দেখে নিন সেই মন্ত্রটি এবং তার প্রকৃত অর্থ-
"আ কৃষ্ণেন রজসা বর্তমানো নিবেশয়ন্নমৃতং মর্ত্যং চ।
হিরণ্যয়েন সবিতা রথেনা দেবো যাতি ভুবনানি পশ্যন।।
এর অর্থ হিসেবে ড. তুলসীরাম দাস লিখেছেন, "Savita, the sun, with his force of gravity and sphere of light revolves (in space), Sustaining all its mortal and Immortal family in place, By the golden chariot of splendor, the lord of light travels on, watching the various worlds of space."

এর সরল বাংলা হলো- সূর্য তার আলোর দ্বারা সোনার রথে করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে মহাশূন্যে আবর্তন করছে এর গ্রহ উপগ্রহসহ; সূর্য আবর্তন করছে মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থান দেখতে দেখতে।

সূর্যের রথ যে প্রতীকী, সেটা আমি উপরে আলোচনা করেছি, এখানে সোনার রথ বলার তাৎপর্য হলো সূর্যের আলো আসলে সোনার রং এর মতোই দেখতে; তাই সাত রং বিশিষ্ট সূর্যের আলোকে সোনার রথ বলা হয়েছে। আর আমরা বিজ্ঞানের প্রাথমিক জ্ঞানে জানি যে, সূর্যকে ঘিরে তার গ্রহ উপগ্রহগুলো ঘুরছে, কিন্তু মহাবিশ্ব সম্পর্কে আল্টিমেট জ্ঞান বলে যে, আমাদের সূর্যের মতো নক্ষত্র মহাবিশ্বে রয়েছে কোটি কোটি এবং এই নক্ষত্র এবং তাদের গ্রহরা মিলে তৈরি করছে ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি এবং সূর্যগুলো গ্যালাক্সির ভেতর কোনো এক বিন্দুকে কেন্দ্র করে গ্যালাক্সির মধ্যে ঘুরছে, গ্যালাক্সির ভেতরে সূর্যের এই চলার গতি সেকেন্ডে ২৩৫ কি.মি; মূলত এই বিষয়টিই এখানে বোঝানো হয়েছে এবং সেজন্য তুলসীরাম দাস তার অনুবাদে Earth শব্দটি ব্যবহার না করে Worlds শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ মহাবিশ্ব।

বেদ এ সূর্য সম্পর্কে কী বলা হয়েছে এবং কীভাবে বলা হয়েছে, তার আলোচনা এতক্ষণ উপরে করলাম, এবার দেখুন সূর্য সম্পর্কে বিজ্ঞানের বিজ্ঞান মহাবিজ্ঞান ইসলাম(!!!) অর্থাৎ কোরান হাদিস, যে কোরান রিসার্চ ছাড়া বিজ্ঞানীরা কোনো কিছু আবিষ্কারই করতে পারতো না বা পারে না (???), সেই কোরান এবং হাদিসে সূর্য সম্পর্কে কী কী বলা আছে-
যে মুসলমানরা বেদের মন্ত্রের বিকৃত ব্যাখ্যা করে সূর্যকে ঘোরাতে চাইছে পৃথিবীর চারপাশে, কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস হলো, সেই মুসলমানদের প্রাণের গ্রন্থ কোরানেই বলা আছে, সূর্য পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরে, প্রমাণ দেখুন নিচের আয়াতগুলোতে-

“ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সূর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে” ।- (কোরান, ২/২৫৮)

এই আয়াতে বলা হচ্ছে, তিনি সূর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে, তার মানে এখানে পৃথিবী স্থির এবং সূর্যকে ঘোরানো হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কী বলে তা সবাই কম বেশি জানে, তাই সে বিষয়ে আর কোনো কথা বললাম না।
এছাড়াও কোরানের ১৮/৮৫ আয়াতে বলা আছে,

"জুলকারনাইন যখন সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছলো, তখন সূর্যকে কর্দমময় জলপ্রণালী মধ্যে অস্তমিত হইতেছে অবস্থায় পাইলো।"

বোঝেন অবস্থা, কোরান সূর্যকে ডুবাচ্ছে কাদার মধ্যে! এই কোরান নাকি লিখেছে আবার মহাজ্ঞানী আল্লা, যে আল্লার মহাবিশ্ব সম্পর্কে দূরে থাক, সৌরজগত সম্পর্কেও কোনো জ্ঞান ছিলো না। শুধু এখানেই শেষ নয়, কোরানের ১৮/৯০ আয়াতে বলা হচ্ছে-

"জুলকারনাইন যখন সূর্যের উদয় ভূমি পর্যন্ত পৌঁছলো, তখন তাকে এক সম্প্রদায়ের উপরে প্রকাশ পাইতেছে অবস্থায় পাইলো।"

এই দুই আয়াতের মূল ব্যাপার হচ্ছে, জুলকারনাইন নামের এক মুসলমান ভূ-বিজ্ঞানী (!) পৃথিবীর শেষ প্রান্ত কোথায় তা দেখা জন্য পশ্চিমে যাত্রা করে, তখন সে এক জায়গায় গিয়ে সূর্যকে কর্দমাক্ত জলাশয়ে ডুবতে দেখে এবং তারপর সে সূর্যের উদয় স্থান দেখার জন্য পূর্ব দিকে যাত্রা করে এবং সেখানে এক সম্প্রদায়ের উপর উদিত হতে দেখে।
এছাড়াও কোরানের ৫৫/৫ আয়াতে বলা আছে, "চন্দ্র ও সূর্য হিসাব মতো চলে।" এবং ১৩/২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে বশীভূত রাখিয়াছেন, প্রত্যেকে নির্ধারিত সময়ে সঞ্চরণ করিতেছে।"

আবার কোরানের ২১/৩৩ নং আয়াতে বলা আছে, “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।”

"তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র” এই কথা কে বলেছে- মুহম্মদ, না আল্লা ? যদি আল্লা বলতো তাহলে বাক্যটা হতো এরকম, “আমিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র”, তারপরও নাকি কোরান আল্লার বাণী। যা হোক, এরপর বলা হচ্ছে, সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” চন্দ্রের তো একটা কক্ষপথ আছে বুঝলাম, কিন্তু সূর্যের কক্ষপথ কোনটা ? তাছাড়া দিন বা রাতের কক্ষপথটাই বা কোনটা ? মুমিনগন, জবাব আছে তো ?
এ ছাড়াও কোরানের ৩১/২৯ নং আয়াতে বলা আছে, “আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন, তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।”

এখানে বলা হচ্ছে, আল্লা দিনকে রাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন, আর রাতকে দিনের মধ্যে- ব্যাপারটা বুঝতে গিয়ে যেন মাথা গরম করে ফেলবেন না, কারণ যা বিজ্ঞান ও যুক্তিসম্মত নয়, তা বোঝার চেষ্টা না করে হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া ভালো, একজন আরেক জনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়, বিজ্ঞান দ্বারা এটাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না হলেও আমার কিন্তু সমকামী সেক্স এর উদাহরণটি মাথায় এসেছে, আমি আর তার ব্যাখ্যা না দিলেও আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

এই আয়াতে আরও বলা হচ্ছে, তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” এর মানে হলো চন্দ্র ও সূর্য আল্লার দাস, অবশ্য চন্দ্র ও সূর্যের আল্লার দাস হতে আপত্তি নেই, যদি আল্লা চন্দ্র ও সূর্যকে সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু যে আল্লার জন্মই মুহম্মদের হাতে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে হেরা গুহায়; সেই আল্লা সূর্যকে ৪৬০ কোটি বছর আগে কিভাবে সৃষ্টি করবে ? এখানে বলে রাখি উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে ৪৬০ কোটি বছর আগে আমাদের এই সৌরজগতের জন্ম, সেই সময়ই আমাদের সৌরজগতের সকল গ্রহ ও সূর্যের জন্ম। কিন্তু সৌরজগতের জন্মের কিছু পর নবীন পৃথিবী ও মহাকাশের কোনো বস্তুর সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর একটা অংশ ভেঙ্গে ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে চাঁদের জন্ম হয়, এই ঘটনা কমপক্ষে হলেও ৪০০ কোটি বছরের পুরোনো। তাহলে এই চাঁদকেও আল্লা সৃষ্টি করবে কিভাবে ?
যা হোক, এই ৩১/২৯ আয়াতের মূল কথা হলো, পৃথিবী স্থির এবং চন্দ্র ও সূর্য তার চারপাশে ঘুরছে, কিন্তু বিজ্ঞান কি তা বলে ? মুসলমানদের কাছে শুধু তার জবাব ই চাই না, সেই সাথে এটাও বলতে চাই যে, বেদে বিজ্ঞানের ভুল না খুঁজে কোরান আগে ভালো করে পড়; কারণ, নিজের ছিদ্রকে ঢেকে রেখে অন্যের কাল্পনিক ছিদ্র নিয়ে কথা বলা উচিত কর্ম নয়।

এছাড়াও কোরানের ৩৬/৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে” এবং ৩৬/৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, " সূর্যের জন্য উপযুক্ত হয় না যে, সে চন্দ্রকে প্রাপ্ত হয় এবং রজনী দিবার অ্গ্রগামী নয়, গগনমণ্ডলে সমুদায়ই চলিতেছে।"

পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান যে ব্যাপার তাতে মনে হয়, চন্দ্র ও সূর্য পৃথিবীকে আবর্তন করে, উপরের এই দুই আয়াতে আসলে সে কথা ই বলা হয়েছে, সেকারণেই বলা হয়েছে, 'গগনমণ্ডলে সমুদায়ই চলিতেছে।' পৃথিবীর চারপাশে চন্দ্র ঘুরে, তাই আকাশে চাঁদ চলতে পারে, কিন্তু আকাশে সূর্য কেমনে চলে ? কোরানে বিজ্ঞানের জ্ঞানের যে অবস্থা, তা থেকে স্পষ্ট যে, উপরের এই আয়াতে এই কথা বলা হয়েছে যে- "সূর্য পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরে", কিন্তু সূর্য কী পৃথিবীর চারেদিকে ঘুরে ? ঘুরে না।

কিন্তু বিজ্ঞান যখন এই কথা বললো যে, সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরে এবং সমস্ত গ্রহকে সাথে নিয়ে সূর্যও নক্ষত্রজগত গ্যালাক্সির মধ্যে ঘুরে, তখন বিপদ বুঝতে পেরে মুসলমানরা বলা শুরু করলো, এখানে সূর্যের ঘোরা বলতে সেই গ্যালাক্সির মধ্যে ঘোরার কথা ই বলা হয়েছে, পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরার কথা বলা হয় নি। এই ব্যাপারটা এমন যে- ক্লাস টু এর জ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে সূর্য ঘুরছে বলেই শিশুরা বিশ্বাস করে, সেই জ্ঞান নিয়ে মুসলমানরা নাসার বিজ্ঞানীদের মতো কথা বলছে! যে কোরান বলে পৃথিবী সমতল; কারণ কোরানের ১৮/৮৫ এবং ১৮/৯০ অনুসারে সূর্যের একটি উদয়াচল এবং অস্তাচল আছে অর্থাৎ পৃথিবীর দুই প্রান্ত আছে অর্থাৎ পৃথিবী সমতল, সেই কোরান নাকি এই কথা বলবে যে, সূর্য গ্যালাক্সির মধ্যে ঘুরে ! যা হোক, মুসলমানরা যতই স্থির রেখে পৃথিবীকে ঘোরানোর চেষ্টা করুক, কফিনে শেষ পেরেক এর মতো কোরানের ১৩/২ নং আয়াতে বলা আছে, “সূর্য ও চন্দ্র প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে”, তার মানে চন্দ্র যেমন পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরে, তেমনি সূর্যও ঘোরে।

এছাড়াও কোরানের ১৬/১২ নং আয়াতে বলা হচ্ছে, “তিনিই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্রকে।”

এই বাক্যটাও শুরু 'তিনি' দিয়ে, সুতরাং এটিও যে আল্লার বাক্য নয়, এটুকু বলেই এই প্রসঙ্গ শেষ করলাম। এই আয়াতে বলা হচ্ছে- রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্র নাকি মানুষের কাজে নিয়োজিত। তাহলে তো রাত্রি দিন সূর্য ও চন্দ্রকে মানুষের মর্জি মতো চলা উচিত, সময়কেও তো মানুষের কথামতো চলা উচিত; কারণ, এগুলোই নিয়ন্ত্রণ করে সময়কে, কিন্তু এদের কেউ কি মানুষের মর্জি মতো চলে ? চলে না; মানুষদেরকেই এদের মর্জি মতে চলতে হয়।  তাহলে কোরানে যে বলা হলো- রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্র - মানুষের কাজে নিয়োজিত অর্থাৎ মানুষের দাস, সেই কথার বাস্তবতা কোথায় ? এই সব বাল ছাল দিয়ে মুসলমানদেরকে বশে রাখা সম্ভব, কোনো বুদ্ধিমান মানুষকে নয়।

কোরানের ৫৫/৫ আয়াতে যে বলা আছে, "চন্দ্র ও সূর্য হিসাব মতো চলে।" এই হিসাব হলো, চন্দ্র রাতের বেলা এবং সূর্য দিনের বেলা। তবে চন্দ্র রাতের বেলা পরিভ্রমন করে কোথায় যায়, সে ব্যাপারে ইসলাম কিছু বলতে না পারলেও, সূর্য কোথায় যায়, কী করে, সেসব কথা  বলা আছে কোরানের 55/5, 13/2, 21/33, 31/29, 36/38,40, 18/85,90 এবং 16/12 এইসব আয়াতে, যার আলোচনা আপনারা উপরে দেখেছেন এবং SahihBukhari 4:54:421, Sahih Muslim 1:297 এর এইসব হাদিস মতে- 'সূর্য সারাদিন পরিভ্রমন করে অস্ত যাওয়ার পর রাতের বেলা আল্লাহর আরশের নিচে সেজদা দিতে থাকে এবং পরদিন সকালে আবার উদিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করতে থাকে, আল্লা যদি অর্ডার দেয় তাহলে পরদিন সূর্য উদিত হয়।'

এই উদাহরণ থেকে স্পষ্ট যে, ইসলাম মতে, পৃথিবী একটি গোলাকার সমতল সিডি ডিস্ক, যার প্রান্ত আছে এবং পূর্ব দিকে সূর্য উদয় হয়ে সারাদিন ধরে পৃথিবীর বুকে আলো প্রদান করে, সন্ধ্যায় কদর্মাক্ত জলাশয়ে ডুবে যায় এবং আল্লার আরশে নিচে গিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে পরদিন উদয় হওয়ার পারমিশন পাওয়ার জন্য। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, আল্লা থাকে পৃথিবীর নিচে, তাহলে মুহম্মদ যে আল্লার সাথে দেখা করার জন্য বোরাকে চড়ে উর্ধ্ব আকাশে গমন করেছিলো, তার কারণটা কী ?

মুমিনগন, এই ব্যাপারে বিজ্ঞান কী বলে ? সূর্য কি কখনো অস্ত যায় ? সূর্য যদি অস্ত যেত তাহলে সারা পৃথিবীতে একসাথে অন্ধকার নেমে আসতো, আবার উদয় হওয়ার পর এক সাথে আলোকিত হয়ে যেতো। কিন্তু এই রকম ঘটনা কী পৃথিবীতে ঘটে ? কোরান খুব বিজ্ঞানময় গ্রন্থ তাই না ? এত বিজ্ঞান যে, কোরান থেকে বিজ্ঞান উপচে উপচে পড়ছে! এই রকম উদ্ভট বিজ্ঞানের প্রবক্তা যে মুহম্মদ, তার কথায় বিশ্বাস করে আপনারা জীবনটাকে মাটি করে দিচ্ছেন, সত্যিই আপনাদের মূর্খতা দেখলে করুণা হয়।

এছাড়াও বুখারির ৪/২৯৬১ হাদিস মতে, কেয়ামত ঘটানোর পূর্বে আল্লা সূর্যকে আদেশ দেবেন পশ্চিম দিক থেকে উদিত হতে, এই ঘটনাও প্রমান করে যে, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘুরছে। কিন্তু এখানে অন্য প্রসঙ্গ হলো- সৌরজগত সম্পর্কে যার ন্যুনতম জ্ঞান আছে, তার পক্ষেও এটা বোঝা সম্ভব যে, সূর্য কখনোই পশ্চিম দিক থেকে উঠতে পারে না, যদি কখনো এই ঘটনা ঘটে, তাহলে তা হবে পৃথিবীর কক্ষচ্যুতের ফলে, আর এটা হলে ঐ ঘটনা দেখার জন্য পৃথিবীতে কেউ জীবিত থাকবে না; কারণ এক সেকেণ্ডের মধ্যে পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তখন সূর্য আস্তে আস্তে পশ্চিম দিকে উঠবে না, পৃথিবী যদি কখনো তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয় তাহলে মূহুর্তের মধ্যে হয় পৃথিবী আমাদের সৌরজগত থেকে ছিটকে বেরিয়ে অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে যাবে বা সূ্র্যের মধ্যে গিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধরণের কক্ষচ্যুতের ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি; কারণ এখন পর্যন্ত এই ধরণের ঘটনা মহাবিশ্বে ঘটেছে বলে শোনা যায় নি, যা ঘটেছে তা ব্ল্যাক হোলের ঘটনা, আর এটা ঘটলে সূর্য আস্তে আস্তে নিভে গিয়ে সমস্ত সৌরজগত অন্ধকারে ডুবে যাবে। বিজ্ঞানের এই সব তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ইসলামে বর্ণিত কেয়ামত পৃথিবীতে কোনোদিনই ঘটবে না। তাই ইসলামের কেয়ামত এবং চন্দ্র ও সূর্য সম্পর্কিত গল্পগুলো- শুধু গালগল্প নয়, বালগল্প।

মুসলমানদেরকে বলছি, আমি কিন্তু ইহুদিদের থিয়োরিতে বিশ্বাস ও কাজ করি। ২০১৪ সালে ফিলিস্তিনি মুসলমানরা ৩ জন ইজরাইলিকে মেরেছিলো, এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইহুদিরা প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মারে, ঘর-বাড়ি ভাঙ্গে কয়েক হাজার। তোরা বেদে বর্ণিত সূর্য নিয়ে হিন্দুদেরকে একটু খুঁচিয়েছিস, তার বিনিময়ে তোদেরকে সেই সূর্য নিয়েই কত বড় আর কতগুলো বাঁশ দিলাম, সেটা একটু গুনে দেখ। এরপর যখন খোঁচাবি, একটু ভেবে চিন্তে খোঁচাস; কারণ, হিন্দুধর্ম সম্পর্কে জাকির নায়েকের এবং তার থেকে ধার করা কটূক্তির জবাব দেওয়ার জন্য, হিন্দু সমাজে- 'জাকিরের বাপ' নয়, জাকিরের "বাপের বাপ" এর জন্ম হয়েছে।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম। জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment