Sunday, 7 June 2020

প্রসঙ্গ : যাদবশত্রু কালযবন


প্রসঙ্গ : যাদবশত্রু কালযবন

যাদব বংশের কুলগুরু ছিলেন গর্গ্য মুনি। এই গর্গ্যের পুত্র ছিলেন মহর্ষি গার্গ্য। ইনি যাদব বংশেই বিবাহ করেছিলেন, কিন্তু ব্রহ্মচর্য ধারণ হেতু কখনো স্ত্রীসহবাস করতেন না। এর ফলে তার এক শ্যালক তাকে নপুংসক বলে উপহাস করেন। এতে গার্গ্য ক্ষেপে গিয়ে যাদব বংশ বিনাশকারী এক পুত্রের কামনায় ১২ বছর ধরে মহাদেবের স্তব করেন, ফলে মহাদেব তার স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে যাদব বংশের ক্ষতি করতে সমর্থ এমন একটি পুত্রের বর দেন।

সেই সময় যবন নামে এক রাজ্য ছিলো, যার রাজাকে বলা হতো যবনরাজ, যে ছিলো যাদবদের চিরশত্রু। সেই যবনরাজ, গার্গ্যের এই বর লাভের সংবাদ জানতে পেয়ে গোপালী নামের এক নারীকে তার সঙ্গে মিলিত হতে পাঠায়, ফলে গার্গ্যের ঔরসে ও গোপালী গর্ভের এক পুত্রের জন্ম হয়, যার নাম কালযবন। এই কালযবনকে যবনরাজ নিজের কাছে রেখে পুত্রের ন্যায় বড় করে, ফলে যবনরাজের মুত্যুর পর কালযবন ঐ রাজ্যের রাজা হয়।

কংসের শ্বশুর জরাসন্ধ ছিলো কালযবনের এক মিত্র রাজ্য। শ্রীকৃষ্ণ, বালক বয়সে কংসকে হত্যা করলে জরাসন্ধের সাথে কৃষ্ণের শত্রুতার শুরু হয়; কালযবন, জরাসন্ধের মিত্র হওয়ায়, শ্রীকৃষ্ণের সাথে কালযবনের শত্রুতা আরও বৃদ্ধি পায়। কালযবন ছিলো শ্রীকৃষ্ণেরও অবধ্য। ফলে কালযবন ও জরাসন্ধের মিলিত আক্রমনে যাদব তথা মথুরাবাসীর অনেক ক্ষতি হতে থাকে, এই ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য শ্রীকৃষ্ণ কৌশলগত কারণে, মথুরাবাসীদেরকে তিনদিকে জলবেষ্টিত দ্বারকা নগরীতে স্থানান্তর করেন।

ভুল প্রচারের ফলে সাধারণভাবে অনেকেই মনে করে যে- কালযবন ছিলো গ্রীসের রাজা বা গ্রীসদেশের কেউ। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। শ্রীকৃষ্ণের সময় মিশরীয় সভ্যতার সূচনা হচ্ছিলো মাত্র, আর গ্রিক সভ্যতার জন্ম তখনো হয় নি। গ্রীসদের সাথে ভারতীয় সভ্যতার যোগাযোগ গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের মাধ্যমে, যেটা শ্রীকৃষ্ণের সময় থেকে প্রায় ২৭০০ বছর পর, তাই কালযবন গ্রীক ছিলো, এটা ভুল প্রচার মাত্র।

যা হোক, পরে এক সময় শ্রীকৃষ্ণ ঋষি মুচকুন্দের মাধ্যমে কালযবনকে হত্যা করেন।

আশা করছি উপরের আলোচনার মাধ্যমে প্রশ্নকারী বন্ধুসহ আমার অন্যান্য বন্ধুকে বিষয়টি বোঝাতে পেরেছি।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment