হিন্দুধর্মে নারীর অধিকার কি ইসলামের চেয়ে কম ?
Suman kaeser Asique
হিন্দু বা সনাতন ধর্মে নারীর অধিকার কীরকম, এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্যের জবাব পরে দিচ্ছি, তার আগে দেখে নিন আপনার ইসলাম নারীদেরকে কতটা অধিকার দেয়-
'তালাক দিয়ে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে তার কাছ থেকে সংসারের সকল অধিকার কেড়ে নেওয়া।'- (কোরান, ৩৩/৪৯, ২/২৩৬, ২/২৩৭, ২/২৪১, ২/২২৯, ২/২৪০)
'যুদ্ধে বন্দিনী নারীদেরকে ধর্ষণ।'- (কোরান, ৪/৩, ২৩/৫, ৬)
'মুতা বিবাহের নামে নারীদেরকে বেশ্যা বানানো এবং মোহরানার নামে নারীদেহ কেনা।'- (কোরান, ৪/২৪)
এছাড়াও-
১. পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল।-(Quran 4:34); নারীর চেয়ে পুরুষ শ্রেষ্ঠ।"-(কোরান, 2/228)
২. নারীদের বিচার-বুদ্ধি পুরুষের অর্ধেক অর্থাৎ একজন পুরুষের সাক্ষী = দুইজন নারীর সাক্ষী। (Quran 2:282, 4:11 Sahih Bukhari 3:48:826)
৩. মুসলমানদের গৃহকর্মীরা প্রকৃতপক্ষে পুরুষদের যৌন দাসী।- (কোরান, ৭০/৩০) অর্থাৎ সাধারণ নারীরাও ধর্ষিতা।
৪. নারীরা পুরুষের অধিকৃত সম্পত্তি।- (Sahih Bukhari 5:59:524)
৫. নারীর কুকুরের সমতুল্য।- (Sahih Bukhari 1:9:490, 1:9:493, 1:9:486 Sahih Muslim 4:1032,
4:1034, 4:1038-39 Abu Dawud 2:704)
৬. নারীরা ভালোবাসার অযোগ্য।- (Sahih Bukhari 7:62:17 Abu Dawud 41:5111)
৭. নারীদেরকে বন্ধক রাখা যায়।- (Sahih Bukhari 5:59:369)
৮. ঋতুচক্র চলাকালীন নারীরা অপবিত্র।- (Quran 2:222 Al-Tabari Vol.1 p.280)
৯. নারীরা নিকৃষ্ট।-(Sahih Bukhari 9:88:219)
নারীরা বুদ্ধিহীন।-(Sahih Bukhari 2:24:541)
নারীরা অকৃতজ্ঞ।- (Sahih Bukhari 1:2:28)
নারীরা হাড়ের মত বক্রতা যুক্ত।- (Sahih Muslim 8:3466-68, Sahih Bukhari 7:62:113, 7:62:114, 4:55:548)
১০. নারীরা পুরুষের চাষযোগ্য ক্ষেত্র।- (Quran 2:223; Abu Dawud 11:2138)
১১. নারীরা শয়তানের রূপ।- (Sahih Muslim 8:3240)
১২. নারীদের মাঝে নিহিত আছে যাবতীয় খারাপ।- (Sahih Bukhari 4:52:110, 4:52:111)
১৩. নারীরা বিশ্বাস ঘাতক।- (Sahih Bukhari 4:55:547)
১৪. নারীরা পুরুষের জন্যে ক্ষতিকারক।- (Sahih Bukhari 7:62:33)
১৫. নারীরা নেতৃত্ব দেওয়ার অযোগ্য।- (Sahih Bukhari 9:88:219)
১৬. নারীরা প্রার্থনা ভঙ্গ হওয়ার কারণ।- (Sahih Bukhari 1:9:490, 1:9:493)
১৭. ইচ্ছা না থাকলেও নারীরা স্বামীর যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে বাধ্য।- (Sahih Muslim 8:3368)
১৮. নারীদেরকে পুরুষ কর্তৃক ধর্ষনের অনুমোদন।- (Quran 70:29-30, Abu Dawud 11:2153, 31:4006 Sahih Bukhari 5:59:459, Sahih Bukhari 8:77:600, 8:3432, 8:3371)
১৯. নারীরা হজ্ব করার অযোগ্য।- (Sahih Bukhari 1:6:302)
২০. পুরুষ পারবে চারজন স্ত্রী রাখতে অর্থাৎ নারীর জন্য উপহার সতীনের সংসার।- (Quran 4:3)
২১. স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার স্ত্রীর নেই।- (Sahih Bukhari 8:4871-82 Mishkat al-Masabih, Book 1, duties of parents, Hadith No. 15)
২২. স্ত্রীকে পেটানোর অধিকার রয়েছে পুরুষের।- (Quran 4:34, Sahih Muslim 4:2127)এবং এই পেটানো জবাবদিহিতামুক্ত।- (Abu Dawud 11:2142)
২৩. বেহেস্তে পুরুষের জন্যে রয়েছে বহু (Virgin) রমনী সম্ভগের ব্যাবস্থা।- (Quran 33:48, 44:51-54, 55:56-58, 78:31-35; Ibn Kathir Tafsir of 55:72, Sahih Muslim 40:6795, 40:6796 Sahih Bukhari, 4:54:476 Al-Tirmidhi, Sunan. Vol. IV Chap. 21 Hadith: 2687 Sunan Ibn Maja, Zuhd-Book of Abstinence 39), কিন্তু নারীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।
২৪. শুধুমাত্র নীরবতাই নারীদের বিয়ের সম্মতি।- (Sahih Bukhari 9:86:100, 9:86:101, 9:85:79); অর্থাৎ ইসলামে নারীর মতামত মূল্যহীন।
২৫. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য পুরুষের কাছাকাছি হওয়া নিষিদ্ধ (Sahih Bukhari 4:52:250) অর্থাৎ ইসলাম মনে করে অন্য পুরুষের কাছাকাছি হলেই মেয়েরা বেশ্যা হয়ে যাবে।
২৬. নারীদের একমাত্র কাজ পুরুষের সেবা করা (Mishkat al-Masabih, Book 1, Duties of Husband and Wife, Hadith Number 62 Mishkat al-Masabih, Book 1, duty towards children Hadith Number 43) অর্থাৎ, নারীরা সর্বাবস্খায় পুরুষদের দাসী।
২৭. নারীদের সর্বদায় নিজেদের আবদ্ধ রাখতে হবে পর্দায়। (Sahih Bukhari 5:59:462, 6:60:282) অর্থাৎ, সকল নারী সকল অবস্থায় পুরুষের কামনার বস্তু, তাই তাদের নিজ দায়িত্বে নিজেদেরকে ঢেকে রাখতে হবে।
২৮. মৃত্যুর পর নারীদের অধিকাংশের জন্যে রয়েছে দোজখের আগুন (Sahih Muslim 36:6596, 36:6597; Sahih Bukhari 7:62:124, 1:2:29, 7:62:124, 2:18:161)
এরপরেও কি আপনার মনে হয় ইসলাম নারীদেরকে কোনো সম্মান দিয়েছে ?
এবার দেখা যাক, হিন্দুধর্মে নারীদের অধিকার প্রসঙ্গে আপনি যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলো আদৌ সঠিক কি না ?
১ নং অভিযোগে আপনি বলেছেন, ঋগ্বেদের ১০/৯৫/১৫ নং মন্ত্রে নাকি বলা আছে, "নারীদের সাথে কোনো স্থায়ী বন্ধুত্ব হতে পারে না, নারীদের হৃদয় হচ্ছে হায়েনাদের হৃদয়।"
কিন্তু এই মন্ত্রটি হলো-
“পুরূরবো মা মৃথা মা পপ্তো মা ত্বা বৃকাসো আশিবাস উ ক্ষন্ ।
ন বৈ স্ত্রৈণানি সখ্যানি সন্তি সালাবৃকাণাং হৃদয়ান্যেতা।।”- (ঋগ্বেদ, ১০/৯৫/১৫)
এবং এর অর্থ হলো -“তবে তোমার প্রণয়ী অদ্য পতিত হোক, আর কখনো যেন উত্থিত না হয়, সে যেন বহু দূরে দূর হয়ে যায়, সে যেন নিঃঋতির অঙ্কে শায়িত হয় এবং বলবান বৃক যেন তাকে ভক্ষণ করে।”
ঋগ্বেদের উল্লিখিত এই শ্লোকে- উর্বশী ও পুরুরবা নামের দুইজন নারী পুরুষ, যারা পরস্পর স্বামী স্ত্রী, তাদের কথোপকথন বর্ণনা করা হয়েছে; এখানে স্ত্রীটি স্পষ্টতঃ অভিমানী, যে তার স্বামী পুরুরবার সাথে থাকতে চায় না বা তাকে কামনা করে না; কিন্তু পুরুরবা, উর্বশীকে চায়, এ নিয়েই চলছে দুই জনের মধ্যে কথাবার্তা। অভিযোগ যে শ্লোকের বিরুদ্ধে, সেখানে পুরুরবা তার স্ত্রীকে ম্যানেজ করতে না পেরে ক্ষোভে অভিমানে ঐ সব কথা বলেছে।
পুরুরবা নিজের জন্য এবং নিজেকে নিয়েই এসব কথা বার্তা বলেছে, বিস্তারিত দেখতে হলে বেদ খুলে রেফারেন্স দেখে নিতে পারেন। এখানে নারী বিদ্বেষী কোনো কথা বার্তা নেই, বরং নারীদের ব্যক্তি স্বাধীনতাই ফুটে উঠেছে, যেখানে নারী তার স্বামীর সাথে থাকতে চাইছে না এবং এর জন্য তার স্বামীও সেই নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে খুব বেশি জোর করছে না, শুধু নিজের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে মাত্র। শুধু তাই নয়, স্বামী এরূপ কথাবার্তা বললে, স্ত্রী তাকে বলছে, এরূপ মৃত্যু কামনা করো না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরপর আপনি মনুসংহিতার যেসব রেফারেন্স দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে বলছি- মনুসংহতিা হিন্দুধর্মের কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থ নয়, এটা আর্য সভ্যতার এক রাজা, মনুর রাজ্য পরিচালনার সংবিধান। আর্য সভ্যতা যেহেতু হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত ছিলো, সেহেতু হিন্দুধর্মের নানা বিধি বিধান এখান থেকে উঠে এসেছে। একারণে হিন্দুরা এক সময় মনুসংহিতাকে হিন্দুধর্মীয় গ্রন্থ বলে মনে করলেও চুলচেরা বিশ্লেষণে বর্তমানে এটা প্রমাণিত যে মনুসংহিতা হিন্দু ধর্মের প্রামাণ্য কোনো গ্রন্থ নয়, তাই মনুসংহিতায় যেসব বিধি বিধানের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো চুড়ান্ত কিছু নয়, কিন্তু যেহেতু কালচক্রে টিকে থাকা সভ্যতার প্রতিটি গ্রন্থই গুরুত্বপূর্ণ, তাই মনুসংহিতার যেসব বিধি বিধান সমাজ ও মানুষের জন্য উপকারী, সেগুলোকে আমরা গ্রহন করতেই পারি, আর যেগুলো অবৈজ্ঞানিক ও যুক্তিহীন, সেগুলোকে আমরা অনায়াসে বর্জনও করতে পারি। তারপরও মনুসংহিতাকে ভিত্তি করে আপনি যেসব অভিযোগ হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে তুলেছেন, দেখা যাক সেগুলো বাস্তবসম্মত কি না ?
১ নং এ যেটা বলেছেন, নারীদের হৃদয় হচ্ছে হায়েনার হৃদয়, এটা যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, সেটা তো উপরে প্রমাণ করেই দিয়েছি।
২ নং এ বলেছেন, " একজন স্বামী যতই খারাপ হোক, স্ত্রী তাকে দেবতা জ্ঞান পূজা করবে।"
-সনাতন ধর্ম পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে এবং পূর্বজন্মের কর্মের ফলেই মানুষ এজন্মের ভাগ্য বা দুর্ভাগ্য লাভ করে। বিশেষ করে কারো স্বামী বা স্ত্রী কেমন হবে, সেটা জন্মের সময়ই নির্ধারিত। এখন পূর্বজন্মের খারাপ কর্মের ফলে যদি কারো এ জন্মে খারাপ স্বামী লাভ হয়, সেটা তার পূর্বজন্মের খারাপ কর্মের ফলে অর্জিত দুর্ভাগ্য, এই দুর্ভাগ্য তো তাকে ভোগ করতেই হবে। স্বামী যেমনই হোক, কোনো নারী যদি তাকে ত্যাগ করে অন্য কোনো পুরুষের কাছে যায়, সে আর সতী থাকে না, সে হয় চরিত্রহীনা, বেশ্যা। যেমন হয় তালাক প্রাপ্তা মুসলিম নারীরা একের পর এক বিয়ে করে ও তালাক খেয়ে। আপনি কি মনুসংহিতার এই বাণীর সমালোচনা করে হিন্দু নারীদেরকে কিছু কিছু মুসলিম নারীর মতো বেশ্যা বানাতে চাইছেন ?
৩ নং এ বলেছেন, "স্বামী মারা যাওয়ার পর সেই নারী কখনোই অন্য কোনো পুরুষের নাম মুখে নিতে পারবে না।"
-তাকিয়াবাজি অর্থাৎ মিথ্যাচার ক'রে অমুসলিমদের ধোকা দেওয়া আপনাদের অর্থাৎ মুসলমানদের জন্মগত স্বভাব, এখানেও তাকিয়াবাজি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই শ্লোকে বলা হয়েছে- "পতি মৃত হলে বিধবা স্ত্রী ব্যভিচারবুদ্ধিতে পরপুরুষের নামোচ্চারণও করবে না।" স্বামী মারা যাক বা না যাক নিকটাত্মীয় পুরুষদের সাথে মুসলিম নারীদের শোওয়া তো একটা সাধারণ ব্যাপার। আপনি কি এই শ্লোকের বিকৃত অুনবাদ করে বিধবা হিন্দুনারীদেরকে বেশ্যা হতে উৎসাহিত করছেন নিজের মা বোনদের মতো ? বা হিন্দু নারীদেরকে মুসলিম নারীদের লেভেলে নামিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন ?
৪ নং এ বলেছেন, "স্বামীর প্রতি দায়িত্ব লঙ্ঘনের দ্বারা একজন স্ত্রী এই পৃথিবীতে অসম্মানিত হবে, মৃত্যুর পর তার এই পাপের শাস্তিস্বরূপ একটি শৃগালের গর্ভে বিভিন্ন রোগ দ্বারা নির্যাতিত হতে থাকবে।"
-যদি আমি ধরে নিই যে, আপনি এখানে যা বলেছেন, তা ই মনুসংহিতায় লেখা আছে, তাতেও বা সমস্যা কী ? আপনি কি চান আপনার স্ত্রী আপনার প্রতি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করুক ?
তাকিয়াবাজ মিথ্যুক, জেনে রাখ, এই শ্লোকের প্রকৃত অর্থ হলো- "স্ত্রীলোক পরপুরুষের সাথে ব্যাভিচারের দোষে স্বামীকে দূষিত করলে জগতে নিন্দনীয়া হয় এবং পরকালে শৃগাল যোনীতে জন্মগ্রহন করে এবং কুষ্ঠাদি পাপরোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত পীড়া ভোগ করে।"
নারীরা যাতে স্বামী ব্যতীত অন্য পুরুষকে কখনো কামনা না করে, এখানে সেই ব্যাপারেই সাবধান করা হয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের এসব কথা ভালো লাগবে কেনো ? তারা তো প্রত্যেকে এক একজন লম্পট, তারা প্রত্যেকে নিজে চায় পরস্ত্রীর সাথে বিছানায় শুতে, কিন্তু সেই পরস্ত্রীও যে কারো না কারো স্ত্রী, সেটা তাদের খেয়াল থাকে না। আরে বলদা, তুই যদি অন্যের স্ত্রীর সাথে বিছানায় সময় কাটাস, তাহলে তোর স্ত্রীও যে অন্যের সাথে বিছানায় সময় কাটায় না কাটাবে না, সেটা তুই নিশ্চিত কিভাবে ? মনুসংহিতার এই বাণী তোর ভালো লাগছে না, এর মানে হলো- তোর স্ত্রী যদি অন্যের সাথে বিছানায় সময় কাটায়, তাতে তোর কোনো আপত্তি নেই, তাই তো ?
৫ নং অভিযোগে যে বলা হয়েছে, "নারীদের মৃত্যুর পর তাদের মৃতদেহ সৎকারের সময় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু পাঠ করা যাবে না", এখানেও রয়েছে তাকিয়াবাজি; প্রকৃতপক্ষে এই শ্লোকে বলা হয়েছে- "পুরুষদের মতো স্ত্রীলোকদেরও শরীরসংস্কার বা দেহশুদ্ধির সংস্কার নির্দিষ্টকালে এবং যথা নির্দিষ্টক্রমে সম্পন্ন করতে হয়, কিন্তু তাদের পক্ষে ঐ সমস্ত অনুষ্ঠানে কোনো মন্ত্রের প্রয়োগ থাকবে না।" এখানে মৃতদেহ সম্পর্কে কিছু বলাই নেই। আর মন্ত্রের অনুবাদে যে বলা হয়েছে- তাদের পক্ষে ঐ সমস্ত অনুষ্ঠানে কোনো মন্ত্রের প্রয়োগ থাকবে না, এটি সম্ভবত অনুবাদকের ভুল; কারণ, বিবাহও নারীর জন্য একটি প্রধান সংস্কার এবং তাতে প্রচুর মন্ত্রের প্রয়োগ করতে হয়। এর শুদ্ধ অনুবাদ হবে সম্ভবত এরকম- কোনো সংস্কার অনুষ্ঠানে নারীকে কোনো মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে না, যেকারণে হয়তো বিবাহের অনুষ্ঠানে নারীকে কোনো মন্ত্র বলতে হয় না, যা বলতে হয় সব- বর এবং কন্যার পিতা এবং দেবতাদের উদ্দেশ্যে পুরোহিতকে।
সুতরাং ৫ নং অভিযোগ নিয়ে মুসলমানদের যে চুলকানি, সেটা যে বৃথাই চুলকানি, সেটা প্রমাণিত।
৬ নং অভিযোগে যে বলা হয়েছে, "স্ত্রীরা পুরুষের সৌন্দর্য বিচার করে না, যুবা কি বৃদ্ধ তাও দেখে না, সুরূপ হোক বা কুরূপ হোক পুরুষ পেলেই তার সাথে সম্ভোগের জন্য লালায়িত হয়।"
-এখানেও রয়েছে তাকিয়াবাজি; প্রকৃতপক্ষে এই শ্লোকের মধ্যে বলা আছে, নারীরা যার প্রতি আকৃষ্ট হয়, সে দেখতে যেমন হোক, তাতে নারীদের কোনো সমস্যা নেই।
তো এখানে মুসলমানদের সমস্যা কোথায় ? এখানে তো নারী চরিত্রের একটি চিরন্তন সত্যকে প্রকাশ করা হয়েছে এবং এই সত্য মুসলমান সমাজের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। যেকারণে ১৩ বছরের মেয়ে ৬৫ বছরের বৃদ্ধকে বিয়ে করতে পিছপা হয় না।
এরপর ৭ নং এ যে বলা হয়েছে- নদী যেমন সমুদ্রের সাথে মিশে লবনাক্ত সমুদ্রের গুন প্রাপ্ত হয়, তেমনই নারী বিয়ের পর স্বামীর গুনযুক্ত হয়।
-মূর্খ হলে এই এক সমস্যা, সমালোচনার সময় কোনো কথা বলা উচিত, আর কোন কথা বলা উচিত নয়, সেই জ্ঞানও থাকে না। এই শ্লোকেও নারী চরিত্রের এক চিরন্তন বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, তাহলে এটা নিয়ে সমালোচনার কী আছে ? বরং নারী সম্পর্কে এরকম একটি বৈশিষ্ট্যের কথা আমাদেরকে জানানোর জন্য তো মনু মহাশয়ের ধন্যবাদ পাওয়ার কথা, আর কেউ যদি এটাকে হিন্দুধর্মের কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থ মনে করে, তার তো হিন্দুধর্মকে প্রশংসা করা উচিত, নারী সম্পর্কে এরকম একটি চিরসত্য বাণী উচ্চারণ করার জন্য।
এরপর ৮ নং এ যে বলা হয়েছে- কেবলমাত্র সন্তান জন্মদানের জন্য নারী এবং সন্তান উৎপাদন করতে পুরুষ সৃষ্টি হয়েছে, এখানে সমস্যা কী ? মানব সন্তানের জন্মের উপরই তো সমাজ সভ্যতা টিকে রয়েছে, আর নারী পুরুষের কাজই তো হলো বিবাহের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়ে সমাজ সভ্যকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তো সেই বিধানে সমস্যা কোথায় ? নাকি সন্তানের জন্ম বাদ দিয়ে নারীরা শুধু মুহম্মদের স্ত্রীদের মতো সন্তানহীন সতীনের সংসার করবে, আর পুরুষেরা মাদ্রাসার হুজুরদের মতো সমকামী সেক্স করে বেড়াবে ? আসলে কোন কথার সমালোচনা করা উচিত আর কোন কথার নয়, সেই সাধারণ জ্ঞানও মুসলমানদের নেই।
এরপর ১০ নং এ যে বলা হয়েছে- নারীরা ধর্মাজ্ঞ নয়, এরা মন্ত্রহীন এবং মিথ্যার ন্যায় অশুভ; এখানে শুধু মনুসংহিতার অনুবাদকের সমস্যা নয়, মুসলমানদের তাকিয়াবাজিও রয়েছে।
যদিও নারীরা ধর্মাজ্ঞ নয় বলতে, এই মুসলমান- নারীরা ধর্ম জ্ঞানী নয় বোঝাত চেয়েছে, কিন্তু ধর্মাজ্ঞ নয় দ্বারা ধর্মে অজ্ঞ নয় অর্থাৎ ধর্মজ্ঞানীকে বোঝায়। মুসলমান তো, এরা এক পাতা বাংলা শুদ্ধ করে লিখতে পারবে, এমন বিশ্বাস ও আশা আমি করি না। যা হোক, প্রথমত নারীরা ধর্মাজ্ঞ, এবং দ্বিতীয়ত নারীরা মিথ্যার ন্যায় অশুভ, এমন কোনো কথা এই শ্লোকে বলা নেই, এগুলো মুসলমান এবং অনুবাদকের অনুমান। এখানে বলা হয়েছে- ধর্ম ব্যবস্থায় নারীক্রিয়ায় নারীদের কোনো মন্ত্র উচ্চারণের ব্যবহার নেই, যেজন্য আগেই উল্লেখ করেছি বিবাহের সময় নারীদের কোনো মন্ত্র পাঠ করতে হয় না।
মনুসংহিতার এই বিষয়গুলো ছাড়াও এই মুসলমান ৯ ও ১১ নং এ দুটি রেফারেন্স দিয়েছে,. এগুলো সে আয়েশার বোরকার নিচে পেয়েছে, না মুহম্মদের জাঙ্গিয়ার নিচে পেয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু বলে নি। আর রেফারেন্স দেখেও বোঝার উপায় নেই যে আসলে এগুলো কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া, তাই এগুলোকে রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের ঘেউ ঘেউ মনে করে গুরুত্বহীন বলে মনে করছি।
তালাকের ভয়হীন এবং সতীনহীন সংসারের অধিকার একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে বড় অধিকার, এই অধিকার, যে ইসলাম নারীদেরকে দেয় নি, সেই ইসলামের অনুসারী মুসলমানরা আবার সমালোচনা করতে এসেছে হিন্দুধর্মে নারীর অধিকার নিয়ে, যে হিন্দুসমাজে নারীরা শুধু তালাকের ভয়হীন, সতীনহীন নিশ্চিন্ত জীবন যাপনই করে না, নিজ সংসারে রানীর মতো রাজত্বও করে। অর্থাৎ রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এক ভবঘুরে পতিতা, (তালাক পাওয়ার পর প্রত্যেকটি মুসলিম মেয়ের এই অবস্থা ই হয়) যার নিজেরই কোনো নির্দিষ্ট আশ্রয় নেই, স্বামী সংসার, সন্তানের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই, সে এক রাজরানীর দিকে আঙ্গুল তুলে বলছে- তোর তো কোনো অধিকার নেই, তোর ধর্ম ও সমাজ তোকে কোনো অধিকার দেয় নি ! এই রকম মানসিকতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি কি সুস্থ ?
জয় হিন্দ।
No comments:
Post a Comment