শিবরাত্রি পালন উপলক্ষ্যে হিন্দুরা শিবের মাথায় দুধ ঢালবে, আর এটাকে অপচয় বলে কিছু মূর্খ গলা ফাটাবে, তাদের সেই চিল্লাচিল্লির জবাব দিলাম এই পোস্টে-
শিবের মাথায় দুধ ঢালা, আসলে কতটা অপচয় ?
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘যাকে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’। এখানে ‘নারি’ শব্দের পূর্ণ রূপ হচ্ছে ‘না পারি’, তাহলে এই প্রবাদ বাক্যের মানে দাঁড়ালো, যাকে দেখতে না পারি, তার চলন বাঁকা, মানে সে অসহ্যকর।
হিন্দু বিদ্বেষীদের অবস্থাও ঠিক এই রকম। পৃথিবীতে একটি মানুষও পাওয়া যাবে না, যে হিন্দুধর্ম ও হিন্দুদের সামাজিক কালচারের সবকিছুকে খারাপ বা অযৌক্তিক বলার ক্ষমতা রাখে। প্রবল হিন্দু বিদ্বেষীকেও এটা স্বীকার করতে হয় বা হবে যে, হিন্দুদের সমাজ ব্যবস্থা পৃথিবীর যে কোনো জাতি বা ধর্মের সমাজ ব্যবস্থার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর। কারণ, হিন্দুরা একাধিক বিয়ে করে সংসারকে নরক বানিয়ে মেয়েদেরকে যন্ত্রণা দেয় না; কাজিনদেরকে বিয়ে করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছোটবেলা থেকেই কাকাতো, মামাতো, জেঠাতো, মাসতুতো বোনকে কামের চোখে দেখে না বা তাদেরকে বিয়ে করে জেনেটিকলি ডিসঅর্ডার প্রজন্মের জন্ম দেয় না; নিজেদের লম্পট মানসিকতা যেখানে সেখানে যাতে প্রকাশ হয়ে না পড়ে সেজন্য পর্দার নামে মেয়েদেরকে বস্তায় বন্দী করে তাদের স্বাধীনতা বা স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে না; বলার মতো রয়েছে এরকম বহু বিষয়। মুসলমানদেরকে, হিন্দুদের এই বিয়ষগুলো নিয়ে প্রশংসা করতেই হয়, কিন্তু হিন্দুদের সব কিছুকে নিয়ে প্রশংসা করলে তো মনের দিক থেকে তারা হিন্দুই হয়ে যাবে, তাই বলে-
“আপনাদের সব কিছুই ভালো লাগে, শুধু ঐ মূর্তি পূজাটা ছাড়া”।
আরে মূর্খ, যে থিয়োরির সব কিছু ভালো, সেখানে কোনো একটা বিষয় খারাপ হয় কী করে ? তোর কাছে কোনো একটা বিষয় খারাপ লাগছে, তার মানে, সেটা তুই ভালো করে বুঝিস নি।
দিনের ২৩ ঘণ্টা এবং বছরের ১১ মাস হিন্দু কালচার পালন করলেও, বেহেশতের ৭২ হুরের লোভে মুসলমানরা যেহেতু ইসলামকে ছাড়তে পারে না এবং এবং হিন্দুত্বকে গ্রহন করতে পারে না, সেহেতু তারা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে আপাতদৃষ্টিতে হিন্দুদের ছোটো খাটো দোষ-ত্রুটি, যার মাধ্যমে হিন্দুদের সমালোচনা ক’রে নিজের বিলুপ্তপ্রায় মুসলমানিত্বকে টিকিয়ে রাখায় যায়, এমনই একটি অভিযোগ হলো-
“শিবের মাথায় দুধ ঢেলে হিন্দুরা দুধের অপচয় করে !”
আর কিছু না বুঝে মুসলমানদের সেই অভিযোগকে সমর্থন ক’রে কথা বলে কিছু নির্বোধ হিন্দুও। কিন্তু এই নির্বোধ কুলাঙ্গার হিন্দুরা, আত্মবিশ্বাসের অভাবে বা না জানার কারণে বা মুসলমানদেরকে অসন্তুষ্ট না করার জন্য এই কথা বলতে পারে না যে, গাছে ফল ধরলে, তার ২/৪টা ফল, পাখি খেয়েই হোক বা পেকে পচে গিয়েই হোক নষ্ট হয় বা হতেই পারে, কিন্তু তার চেয়ে ক্ষতিকর হলো সেই গাছটিই কেটে ফেলা।
হিন্দু বিদ্বেষীদের একটা চরম চিন্তার বিষয় হলো- “শিবের মাথায় যে দু ঢালা হয়, তা অপচয়, এই দুধ অপচয় না ক’রে তা গরীব বাচ্চাদের খাওয়ালে উপকার হতো বা সমাজের কাজে লাগতো।”
কিন্তু যারা এই কথা বলে, তারা দেখতে পায় না যে, মুসলমানরা প্রতিবছর কোটি কোটি দুধের উৎসকে জবাই করে দুধের উৎপাদনকেই চিরতরে শেষ করে দেয় !
শিবলিঙ্গে দুধ ঢালা হয় বছরে একদিন, তারপরও এটা সব হিন্দু অত নিষ্ঠা নিয়ে পালন করে না, যেমন আমি ই কোনো দিন শিবলিঙ্গে দুধ বা জল ঢালি নি। তারপরও ধরে নিলাম, প্রতিটি মুসলমানের জন্য বছরে একটি করে পশু কোরবানীর মতো, প্রতিটি হিন্দু বছরে একবার করে শিবলিঙ্গে দুধ ঢালে এবং দুধের পরিমান জনপ্রতি ২৫০ গ্রাম; তাহলে একটি পরিবারের জন্য গড়ে দুধের খরচ ১ লিটার। যদিও প্রায় কোনো হিন্দুই বাড়ি থেকে দুধ নিয়ে মন্দিরে যায় না, মন্দির কর্তৃপক্ষই সবার সুবিধার জন্য শিবলিঙ্গের পাশে এক বালতি জলের মধ্যে এক/দুই লিটার দুধ ঢেলে- দুধ আর জল মিশ্রিত করে রাখে এবং ভক্তরা, সেখান থেকে কোষাকুষি নামের একটি পূজার উপকরণ দ্বারা শিবলিঙ্গের মাথায় একটু একটু করে ঢেলে দেয়। এই ভাবে দিলে একজন হিন্দুর জন্য ১০ গ্রাম করে দুধও লাগে না। তারপরও ধরে নিলাম, প্রতিটি হিন্দু ২৫০ গ্রাম করে দুধ ঢালে এবং পরিবার প্রতি গড়ে ১ লিটার করে দুধ লাগে, কিন্তু এটাই বা কত বড় অপচয় ?
গ্রামের প্রায় সব হিন্দু পরিবারে এক বা একাধিক গাই গরু থাকে এবং সেই গরুগুলো দেশী হলেও প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ২ লিটার করে দুধ দেয়, এই হিসেবে একটি গরু তার ১ টি বাচ্চা প্রসবকালে দুধ দেয় মিনিমাম ৫০০ লিটার। সেখান থেকে যদি ১ লিটার কোনো কারণে খরচ করা হয়, সেটা কি বিরাট অপচয় ?
যে বাড়িতে গরু থাকে এবং গরুর দুধ থাকে, সেই বাড়িতে বছরে এক বা একাধিক দিন কোনো না কোনো কারণে দুধ মাটিতে পড়ে যায় বা দুধ চুলার উপর উথলে গিয়ে বা পুড়ে গিয়ে অপচয় হয়। এই দুধের অপচয় কত, সেই বিষয়ে মুসলমানদের কোনো গবেষণা বা মাথা ব্যাথা নাই ? থাকলে জাতি উপকৃত হতো এটা জেনে যে, এই ভাবে দুধ পড়ে গিয়ে বা পুড়ে গিয়ে বছরে আসলে কত দুধের অপচয় হচ্ছে এবং তাতে দেশের জিডিপির কী পরিমান ক্ষতি হচ্ছে!
এছাড়াও যেকোনো হিন্দু বাড়িতে গরুর বাচ্চা হলে, সেই গরুর দুধ পরিবারের লোকজনের খাওয়ার আগে, যে দুর্বা ঘাস এবং জল গরুর দুধের প্রধান উৎস, শ্রদ্ধা বা সম্মান সূচক কিছু পরিমান দুধ রাস্তার পাশের সেই দুর্বা ঘাসের উপর এবং কিছু পরিমান দুধ পুকুর বা নদীর জলে দেওয়া হয়, এটাও কিন্তু একটা বিরাট অপচয়, ইসলামি চিন্তাবিদ এবং গবেষকদের কিন্তু এই হিসেবও করা দরকার যে, এতে দেশের জিডিপির কী পরিমান ক্ষতি হচ্ছে!
শুধু তাই নয়, যে বাড়িতে দুধেল গাই থাকে, সেই বাড়িতে বছরে এক বা একাধিক দিন এই এ্যাকসিডেন্ট ঘটেই যে, বাছুর চান্স পেয়ে গরুর সব দুধ খেয়ে ফেলে এবং এত পরিমান দুধ একসাথে খেয়ে ফেলায় সেই বাছুর তা হজম করতে না পেরে পেটের সমস্যা বাধিয়ে পাতলা পায়খানার সৃষ্টি করে, এর জন্য তখন সেই বাছুরকে ঔষধ খাইয়ে সুস্থ করতে হয়। এটাও কিন্তু দেশের জিডিপির ক্ষতির একটি অন্যতম কারণ! হিন্দু বিদ্বেষীগণ, ঠিক বললাম তো ?
মুসলমানদের উচিত এই সবগুলো হিসেব এক সাথে করে দেখা যে, গরুর দুধের অপচয়ের ফলে দেশের কী পরিমান ক্ষতি হচ্ছে এবং এটাও তুলনা করে দেখানো উচিত যে, সেই ক্ষতি, প্রতি বছর যে প্রায় ১ লক্ষ+ মুসলমান হজ করার জন্য গড়ে ৩ লক্ষ+ টাকা করে খরচ করে যে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকা অপচয় করে, তার চেয়ে কত বেশি ?
শিবলিঙ্গে ঢালা দুধের অপচয় নিয়ে যে সব লোক খুব চিন্তিত, তাদেরকে বলছি, মহরমের দিন উন্মাদ মুসলমানরা যে অবলীলায়- “হায় হাসান, হায় হোসেন” ব’লে চিৎকার করতে করতে গায়ের রক্ত ঝরায় এবং রাস্তা লাল কর ফেলে, সে সম্পর্কে আপনাদের কোনো চিন্তা আছে কী ? না, এটা মনে করেন যে, ওটা ওদের ধর্মীয় ব্যাপার, ওটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। ওটা যদি ওদের ধর্মীয় ব্যাপার হয়, তাহলে এটা কি আমাদের ধর্মীয় ব্যাপার নয় ? এটা নিয়ে কথা বলেন কেনো ? না, এটা নিয়ে কথা বললে, গলা কাটা যাবার সম্ভাবনা নেই বলেই বলেন ? তাই যদি হয়, তাহলে প্রস্তুত থাকেন, অযথা হিন্দুধর্মের জন্য ক্ষতিকারক কথা বললে, সেই মুখ কিভাব বন্ধ করতে হয়, সেই ব্যবস্থার দিকে আমরা দ্রুত এগোচ্ছি।
একবার হাঁটতে শেখার পর কোনো লোক গরুর দুধ না খেলে আর মরে না, কিন্তু মানুষের রক্ত কিন্তু খুব এমার্জেন্সি জিনিস, এক ব্যাগের রক্তের অভাবে যে কোনো সময় একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে। সুতরাং গরুর দুধের অপচয়ের জন্য যারা উদ্বিগ্ন, তাদের কিন্তু মহররমের দিন মুসলমানদের রক্তের অপচয়ের ব্যাপারে বেশি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।
উপরে ফলের অপচয় রোধ করার জন্য গাছ ই কেটে ফেলার একটা উদাহরণ দিয়েছি, এতে যে কী বলার চেষ্টা করেছি, সেটা সম্ভবত আর কারো বুঝতে বাকি নেই, তবু এ ব্যাপারটা আরো একটু ক্লিয়ার করার জন্য বলছি-
ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান দিতে গিয়ে বছরে হয়তো একজন হিন্দু কিছু পরিমান দুধ, যেমন- ৫০ বা ১০০ গ্রাম অপচয়ের জন্য দায়ী, কিন্তু ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান দেওয়ার জন্য একজন মুসলমান একটি গরু হত্যার কারণ হওয়ায় গরুর দুধের টোটাল উৎসকে বন্ধ করার জন্যই দায়ী। তাহলে কোনটা বেশি ক্ষতিকর, খেজুর গাছের রস একদিন মাটিতে পড়ে যাওয়া, না সেই খেজুর গাছকেই কেটে ফেলা ?
এই যুক্তি থেকে পিঠ বাঁচানোর জন্য মুসলমানরা বলবে, আমরা তো গাই গরু কুরবানি দিই না এবং বয়স্ক গরুকে জবাই করে তার মাংস খাই। এটা বলতে বেশ সুবিধা, কারণ এটা নিয়ে হিন্দুরা তো আর বেশি তর্কে যাবে না। কিন্তু বাস্তব সত্য এটাই যে, কসাইরা বিজনেসের জন্য গরুর বয়স যেমন বিবেচনায় নেয় না, তেমনি অনেক মুসলিম পরিবার নানা অর্থনৈতিক অসুবিধায়, নিজেদের বাড়ির গাই গরুকে কুরবানী করতেও দ্বিধা করে না; কারণ, তখন তাদের কাছে দুধ বেশি প্রয়োজনীয় নয়, প্রয়োজন পশু কুরবানী করার আল্লার নির্দেশ।
এছাড়াও শকুনের দেশে যেমন কোনো মৃতদেহ পচে না, পচার আগেই তারা তা খেয়ে ফেলে, তেমনি মুসলমানদের বাড়িতে কোনো রোগাক্রান্ত গরু-ছাগলও মরে না, মরার সম্ভাবনা দেখা দিলেই তারা তা জবাই করে ফেলে, চিকিৎসায় যে সেই গরু সুস্থ হতেও পারে, তারা সেই রিস্কটাও নেয় না; সেক্ষেত্রে সেটা দুধেল গাই, না গাভীন গরু সেটা কোনো বড় ব্যাপার নয়, বড় ব্যাপার সেই গরুর মাংস।
ঢাকাসহ সারাদেশে গরুর দুধের ভয়াবহ অভাব। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া প্রায় সব দুধ শুধু ভেজালই নয়, রীতিমত নকল। এটা নিয়ে মুসলমানদের অভিযোগ এবং হাহাকারের অভাব নেই। বাধ্য হয়ে মুসলমানদের সাথে সাথে হিন্দুরাও এসব খেতে বাধ্য হচ্ছে এবং সংখ্যাগুরুর পাপের ফল সংখ্যালঘুদের ভোগ করতে হচ্ছে।
যাই হোক, গো হত্যার পাপের জন্য আমি তো মনে করি, মুসলমানদের গরুর দুধ পাওয়া ই উচিত নয়।
জয় হিন্দ।
No comments:
Post a Comment