#Arya_Ranodip_Barman,
গীতার ১৫/১৭ নং শ্লোকে বলা আছে,
"এই ক্ষর ও অক্ষর হইতে উত্তম যে পুরুষ, তিনিই পরমাত্মা বলিয়া কথিত হন। তিনি ত্রিলোকে প্রবিষ্ট হইয়া সকলকে পালন করিতেছেন, তিনি অব্যয়, তিনি ঈশ্বর।"
এই শ্লোকের ভিত্তিতে আপনারা মনে করেন, যেহেতু এই কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন এবং তিনি কোনো এক ঈশ্বরের কথা বলেছেন, সেহেতু শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর নন।
যখন কোনো বিষয় সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয় বা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন সেই বিষয়ের ক্ষুদ্র একটি অংশ না দেখে বিষয়টির সামগ্রিক রূপ দেখে তারপর সেই বিষয়ে কথা বলা উচিত বা বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্ত আপনারা তো তা করেন না, আর সেটা করবেনই বা কিভাবে, আপনারা তো ৭০০ শ্লোকের গীতা পড়েন না, পড়েন নিজেদের বানানো ৭০ শ্লোকের গীতা; তাই মূল বিষযটি আপনারা বুঝতে পারেন না। যদি ৭০০ শ্লোকের গীতা ঠিক মতো পড়তেন আর বুঝতেন, তাহলে উপলব্ধি করতে পারতেন যে- এই ১৫/১৭ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে 'ক্ষর' ও 'অক্ষর' পুরুষ কী, সেটা বোঝাচ্ছেন । গীতার ১৫/১৭ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ যে ঈশ্বরের কথা বলেছেন, সেটা যে তিনি নিজেই, তা বোঝা যাবে এর আগের এবং পরের দুটি শ্লোক বুঝলে-
১৫/১৫ নং শ্লোকে শ্রীকৃ্ষ্ণ বলেছেন,
"আমি সকল প্রাণীর হৃদয়ে অন্তর্যামীরূপে আছি, আমা হইতেই প্রাণীগণের স্মৃতি ও জ্ঞান হয় এবং আমা হইতেই প্রাণীগণের স্মৃতি ও জ্ঞানের বিলোপ সাধিত হয়। আমিই বেদসমূহের একমাত্র জ্ঞাতব্য, আমিই বেদান্তের অর্থ প্রকাশক এবং আমি বেদবেত্তা।"
-কেউ ঈশ্বর না হলে কি এইকরম কথা বলতে পারে ?
'ক্ষর' ও 'অক্ষর' পুরুষ কী, এটা বোঝাতে গিয়ে অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ গীতার ১৫/১৬ নং শ্লোকে বলেছেন- ক্ষর ও অক্ষর নামে দুটি পুরুষ আছে, ক্ষর পুরুষ হলো প্রকৃতজড়িত সর্বভূত পুরুষ অর্থাৎ দেহধারী সাধারণ মানুষ এবং অক্ষর পুরুষ হলেন কূটস্থ পুরুষ অর্থাৎ নির্গুন ব্রহ্ম।
অর্জুনকে এই তত্ত্ব জানিয়ে শ্রীকৃষ্ণ গীতার ১৫/১৮ নং শ্লোকে বললেন,
"যেহেতু আমি ক্ষরের অতীত এবং অক্ষর হইতেও উত্তম, সেহেতু আমি পুরাণে এবং বেদে পুরুষোত্তম বলিয়া খ্যাত।"
এই ভাবে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ক্ষর ও অক্ষর পুরুষ বোঝাতে গিয়ে ১৫/১৭ নং শ্লোকে যে ঈশ্বরের কথা বলেছেন, সেটা তিনি নিজেই; এটা আর্য সমাজীরা বোঝে না বলে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে মানে না, আর আমরা এটা বুঝি বলেই শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বা পুরুষোত্তম বলে মানি এবং তাঁরই ভজনা করি, যে কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন গীতার ১৫/১৯ নং শ্লোকে, এভাবে-
"হে ভারত, যিনি মোহমুক্ত হইয়া এই ভাবে আমাকে পুরুষোত্তম বলিয়া জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ হন এবং সর্বতোভাবে আমারই ভজনা করেন।"
আর গীতার ৮/১৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ ওঁ নাম জপ করে কাকে স্মরণ করতে বলেছেন, সেটা ঐ শ্লোকেই বলা আছে, দেখুন নিচে-
"ইন্দ্রিয়ের সমস্ত দ্বারকে সংযত করিয়া, হৃদয়ের মধ্যে মনকে আবদ্ধ করিয়া, প্রাণকে ভ্রুযুগলের মধ্যে ধারণ করিয়া, আত্মসমাধিরূপ যোগে অবস্থিত হইয়া, ওঁ- এই ব্রহ্মাত্মক একাক্ষর উচ্চারণপূর্বক আমাকে স্মরণ করিতে করিতে যে যোগী দেহত্যাগ করেন, তিনি পরমগতি লাভ করেন।"
খেয়াল করুন, শ্রীকৃষ্ণ এখানে বলেছেন, "ওঁ- এই ব্রহ্মাত্মক একাক্ষর উচ্চারণপূর্বক আমাকে স্মরণ করিতে করিতে" তাই ওঁ এর মাধ্যমে যে শ্রীকৃষ্ণকেই স্মরণ করা হয়, সেট গীতা দ্বারাই প্রমাণিত। সুতরাং ওঁ দ্বারা যেমন পরমাত্মা রূপী শ্রীকৃষ্ণের স্মরণ এবং ভজনা করা হয়, তেমনি "হরে কৃষ্ণ" দ্বারাও শ্রীকৃষ্ণেরই স্মরণ এবং ভজনা করা হয়; কারণ, "হরে" মানেও 'শ্রীকৃষ্ণ' (গীতা, ১৮/৭৭)।
ওঁ দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে যোগীরা যেমন পরমগতি লাভ করেন, তেমনি সাত্ত্বিকীপ্রকৃতি সাধু পুরুষগণ 'হরে কৃষ্ণ' নাম দ্বারাও শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করেন, যে কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন গীতার ৯/১৩,১৪ নং শ্লোকে এভাবে-
"হে অর্জুন, যাহারা সাত্ত্বিকীপ্রকৃতিকে আশ্রয় করেন, সেই মহাত্মাগণ আমি সর্বভূতের কারণ এবং অব্যয় স্বরূপ ইহা জানিয়া একমনে আমার উপাসনা করিয়া থাকেন। তাঁহারা সর্বদায় আমার নামকীর্তন করিয়া, যত্নশীল ও দৃঢ়ব্রত হইয়া ভক্তিসহ আমাকে প্রণাম করিয়া নিত্যযোগ সহকারে আমার উপাসনা করেন।"
সুতরাং 'ওঁ' এর পাশাপাশি 'হরে কৃষ্ণ' দ্বারাও যে পরমেশ্বর রূপী শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করা যায়, সেটাও গীতা দ্বারাই প্রমাণিত।
আশা করছি- উপরের আলোচনা থেকে রনদীপ বর্মনের কমেন্টের জবাব দিতে পেরেছি, এবার মনি বর্মনের কমেন্টের দিকে নজর দিই-
#Moni_Barman,
আমাকে মূর্খ বলা সহজ, কিন্তু আমাকে মূর্খ প্রমাণ করা এবং আমার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করা সহজ নয়, বলতে গেলে অসম্ভব।
আপনি বার বার যজুর্বেদের ১১/২ মন্ত্র আমাকে পড়তে বলছেন কেনো ? ঐ মন্ত্রে কী বলা আছে, সে সম্পর্কে পোস্ট লিখে সাধারণ হিন্দুদেরকে তা জানাচ্ছেন না কেনো ? নাকি আপনার মতো আর্য সমাজীদের, আমার পোস্টে এসে কমেন্ট করে ফাইজলামো করার সময় আছে, কিন্তু পোস্ট লিখে সাধারণ হিন্দুদেরকে বেদ শিক্ষা দেবার কোনো সময় নেই ?
আর ইংরেজিতে বলার পূর্বে, ইংরেজিটা আগে ভালো করে শিখে নিয়েন, শব্দটা DONT নয়, DON'T; আর হাতির ইংরেজি ELEPHENT নয় ELEPHANT। এছাড়াও হাতি কখনো লাফায় না, লাফায় আপনাদের মতো আর্য সমাজী বানররা।
পরিশেষ হিন্দি বানানে নাম লেখা আর্যসমাজীকে বলছি-
আমার উদ্যোশো নয়, উদ্দেশ্য হলো- সাধারণ হিন্দুদেরকে সনাতন ধর্মের প্রকৃত সত্যকে জানানো, যাতে তারা কোনো মত বা পথের অনুসারী হয়ে নিজের অমূল্য মানবজীবনকে বৃথা নষ্ট না করে। কারণ, গীতা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে- শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কোনো মানুষের কোনো উদ্ধার বা মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই; তাই কেউ যেন- চৈতন্য, নিতাই, অনুকূল, রামকৃষ্ণ, জগদ্বন্ধু, হরিচাঁদের মতো ব্যক্তিদের কাছে মুক্তির প্রার্থনা না করে, শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের কাছেই প্রার্থনা করে, সাধারণ হিন্দুদেরকে এটা বোঝানোই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য।
আশা করছি- রনদীপ এবং মনির মতো, আপনিও আপনার কমেন্টের জবাব পেয়েছেন।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment