Sunday, 31 May 2020

প্রসঙ্গ : রামকৃষ্ণদেব এবং যত মত তত পথ


প্রসঙ্গ : রামকৃষ্ণদেব এবং  যত মত তত পথ

ফটো পোস্টে দেখুন সাধন দাস নামের এই ব্যক্তি আমাকে প্রশ্ন করেছে, As a hindu do u believe on Ramkrishna Paramhansa, মানে হলো- একজন হিন্দু হিসেবে আপনি কি রামকৃষ্ণ পরমহংসকে বিশ্বাস করেন ?
হুমায়ূন আজাদ বিশ্বাস অবিশ্বাস প্রসঙ্গে বলেছেন, সব বিশ্বাসই অপবিশ্বাস, এর সরল মানে হচ্ছে যা মিথ্যা তাকেই বিশ্বাস করতে হয়, যা সত্য তাকে বিশ্বাস করতে হয় না; এই সূত্রে যেসব তথাকথিত ধর্ম, (আমার মতে ব্যক্তিগত মতবাদ) বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত সেগুলো টোটালি বোগাস; কিন্তু আমি সব সময় বলি এবং এখনও বলছি- হিন্দুধর্ম কোনো বিশ্বাসের ব্যাপার নয়, হিন্দুধর্ম হলো বাস্তব; পৃথিবীর যা কিছু বাস্তব তাই সনাতন ধর্ম, এমনকি সনাতন ধর্মের ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণও পৃথিবীতে এসে তাঁর কর্ম ও বাণীর মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন যে তিনি ঈশ্বর, তাই হিন্দুধর্মকে বোঝার জন্য কোনো কিছু বিশ্বাস করার দরকার নেই।

এ প্রসঙ্গে সাধন বাবুকে বলছি, রামকৃষ্ণদেব পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলেন, তিনি কালী ভক্ত ছিলেন, তাঁর শিষ্য ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণদেবের কর্মস্থল ছিলো কোলকাতা, তার নামে প্রতিষ্ঠিত আশ্রমের নাম রামকৃষ্ণ মিশন, সুতরাং তার অস্তিত্বে অবিশ্বাস করার তো কোনো কারণ নেই। কিন্তু আপনি যদি বলেন রামকৃষ্ণদেবের আদর্শে বা থিয়োরিতে বিশ্বাস করেন কি না, আমি বলবো- না, রামকৃষ্ণদেবের আদর্শে আমি বিশ্বাসী নয়; কারণ, রামকৃষ্ণদেবের আদর্শ হিন্দুধর্মের কোনো আদর্শ নয়, ওটা তার ব্যক্তিগত মতবাদ এবং তার মতবাদের দ্বারা হিন্দুধর্ম ও সমাজের কোনো উপকার হয় নি, বরং ক্ষতিই হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

রামকৃষ্ণদেবের প্রসঙ্গে আপনি "যত মত তত পথ" এর কথা উল্লেখ করেছেন। এই 'যত মত তত পথ' থিয়োরি দিয়ে রামকৃষ্ণদেব পৃথিবীর তথাকথিত সকল ধর্মমতকে স্বীকার করে নিয়েছেন, যেটার উপর ভিত্তি করে রামকৃষ্ণ মিশন, সর্বধর্ম সমন্বয়ের সভা ও সর্বধর্ম সমন্বয়ের চেষ্টা ক'রে হিন্দু সমাজ ও হিন্দুদের পাছায় আচাঁছা বাঁশ দিয়ে যাচ্ছে, যেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আপনাদের মতো ভাববাদীদের নেই।

রামকৃষ্ণদেব "যত মত তত পথ" ব'লে সকল ধর্মকে স্বীকার করে নিয়ে তিনি আসলে এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তিনি আসলে- ধর্ম কী সেটাই জানতেন না বা ধর্মের সংজ্ঞাই বুঝতেন না। যদি বুঝতেন, তাহলে তিনি এটা জানতেন যে, পৃথিবীতে ধর্ম একটাই সেটা সনাতন ধর্ম, বাকিগুলো সব ব্যক্তিগত মতবাদ। ব্যক্তিগত মতবাদগুলোকে তিনি ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রকৃত ধর্ম সনাতনকে শুধু অপমানই করেন নি, সনাতন ধর্মের প্রভূত ক্ষতিও করেছেন।

রামকৃষ্ণদেব নাকি বিভিন্ন ধর্মমতে সাধনা ক'রে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন, এসব কথা বার্তা মূর্খদেরকে বিশ্বাস করানো সম্ভব, প্রকৃত জ্ঞানীদেরকে নয়। সনাতন ধর্ম ছাড়া অন্য মতবাদগুলো যেখানে ধর্মই নয়, সেখানে তিনি সেসব মতবাদ অনুসারে সিদ্ধিলাভ করেছেন কিভাবে ? ভুল পথে কি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব ?

কোন কোন ধর্ম অনুযায়ী রামকৃষ্ণদেব সাধনা করেছিলেন, সেসব ডিটেলস জানা না গেলেও তিনি যে ইসলামের চর্চা করেছিলেন, সেটা জানা যায়; এই ইসলাম চর্চা করতে গিয়ে তিনি নাকি নামায পড়তেন এবং মুসলিম হিসেবে এক পর্যায়ে তার নাকি গরুর মাংস খাওয়ার ইচ্ছাও জেগেছিলো, এই শখ পূরণে নাকি রামকৃষ্ণদেব, কুকুর রূপ ধারণ করে গঙ্গা দিয়ে ভেসে যাওয়া একটা মরা গরুর মাংসও খেয়েছিলেন, এসব কাহিনী তার ভক্ত শিষ্যরা তাদের বিভিন্ন বইতে উল্লেখ করেছেন। মুসলমান হলেই গরুর মাংস খেতে হবে, এটা এই ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের একটা জারজ স্বভাব, ইসলামের জন্মভূমি আরবের লোকজন এখনও গরুর মাংস খায় না, ইসলামের প্রবর্তক মুহম্মদ কখনো গরুর মাংস খায় নি, এমনকি গরু কুরবানী দেওয়ার বিধানও কোরানে নেই, কোরানে উট কুরবানী করার বিধান আছে; সুতরাং ভেতরে মুসলিম ভাবধারা লালন করলেই যে গরুর মাংস খেতে হবে, আগেই বলেছি এটা একটা জারজ বিশ্বাস, এই বিশ্বাসকে মনে লালন করতেন রামকৃষ্ণদেব, সুতরাং তিনি কত বড় জ্ঞানী সেটা এবার নিজেই বিচার করেন।

যা হোক, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রামকৃষ্ণদেব যে নামায পড়তেন, তিনি কি জানতেন, নামাযে দাঁড়িয়ে তিনি যে সূরাগুলো আবৃত্তি করতেন, সেগুলোতে মানুষকে অভিশাপ দেওয়ার, আল্লা ও মুহম্মদে অবিশ্বাসী অর্থাৎ হিন্দুদেরকে হত্যা করার কথা বলা আছে, হিন্দুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন করতে মুসলমানদেরকে নিষেধ করা আছে, হিন্দুদের সম্পত্তি লুঠ করে খেতে মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেওয়া আছে, গনিমতে মাল হিসেবে হিন্দুমেয়েদেরকে ধর্ষণ করার কথা বলা আছে; রামকৃষ্ণদেব কি ইসলাম সম্পর্কে এই বিষয়গুলো জানতেন ? আমি নিশ্চিত, তিনি জানতেন না; জানলে নামায পড়তে পারতেন না বা ইসলামের চর্চা করতে পারতেন না। কারণ, কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ যেমন মুসলমান হতে পারে না, তেমনি কোনো জ্ঞানী মানুষ ইসলামকে সাপোর্ট করতে পারে না। রামকৃষ্ণদেবের ইসলাম চর্চা এটাই প্রমাণ করে যে ইসলাম সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই ছিলো না, তাহলে তিনি কিভাবে জ্ঞানী ? আর জ্ঞান ছাড়া কেউ কিভাবে মহাপুরুষ হতে পারে ?

এবার আসুন দেখা যাক- যত মত তত পথ এবং এই থিয়োরি থেকে উদ্ভব রামকৃষ্ণ মিশনের "সর্বধর্ম সমন্বয়ের চেষ্টা" কিভাবে হিন্দুধর্ম ও হিন্দু সমাজের ক্ষতি করছে ?

ধরে নিলাম আপনি রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষিত একজন হিন্দু, তো আপনি আদর্শিকভাবে রামকৃষ্ণদেবের থিয়োরিতে বিশ্বাস করেন এবং নিজে বা রামকৃষ্ণ মিশনের আশ্রমে নিয়ে গিয়ে সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে ছেলে মেয়েদেরকে শিখাচ্ছেন যে সকল ধর্মই সত্য; তো আপনার ছেলে মেয়ে এই শিক্ষা নিয়ে বড় হলো যে সকল ধর্মই সত্য এবং সকল পথেই ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। এরপর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বা পড়াশোনা শেষে চাকরি করার সময় তার খ্রিষ্টান বা মুসলিম কোনো ক্লাসমেট বা কলিগের প্রেমে পড়ে গেলো এবং সে যেহেতু এটা বিশ্বাস করে যে, সকল ধর্মই সত্য, সুতরাং সে অনায়াসে তার প্রেমিক বা প্রেমিকার ধর্মের দীক্ষিত হয়ে হিন্দু সমাজ ত্যাগ করলো; আপনি যেহেতু তাকে শিখিয়েছেন যে সকল ধর্মই সত্য, সুতরাং তার এই ধর্মত্যাগের ডিসিসানে আপনি কিছু করতে বা বলতে পারবেন না। এভাবে হিন্দু সমাজের একজন জনসংখ্যা কমলো এবং মুসলিম বা খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ সমাজের একজন জনসংখ্যা বাড়লো এবং তার সন্তান সন্তুতির মাধ্যমে সেই সংখ্যা আরো বাড়বে এবং হিন্দু সমাজের জনসংখ্যা আরো কমবে এবং এইভাবে জনসংখ্যা হারিয়ে সমগ্র হিন্দু সমাজ আস্তে আস্তে কোনঠাসা হয়ে পড়বে বা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

একটি জাতি বা সমাজ টিকে থাকে তার জনসংখ্যার উপর, জনসখ্যার জোরে; রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এভাবে সব হিন্দু যদি এক সময় অন্য ধর্মে কনভার্ট হয়ে যায়, বাঙ্গালি হিন্দু সমাজের অস্তিত্ব থাকবে কোথায় ? আর কে তখন রামকৃষ্ণ আশ্রমে গিয়ে নপুংসক সন্ন্যাসীদের মুখে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বক্তৃতা শুনবে ? কারণ, কোনো অহিন্দু তো ঐ সব হিজড়া সন্ন্যাসীদের মুখে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বক্তৃতা শুনে এ পর্যন্ত হিন্দুধর্মে দীক্ষা নেয় নি এবং ভবিষ্যতেও নেবে না, আর সম্পূর্ণ সনাতন ধর্ম অবিরোধী সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে সাধু সন্ন্যাসী মহারাজরাও তো বিয়ে শাদী করে সন্তানের জন্ম দেয় না, তাহলে সনাতন সমাজ টিকে থাকবে কিভাবে ?

এখন আপনারাই বুঝে নিন, রামকৃষ্ণ মিশন কিভাবে হিন্দুধর্ম ও সমাজের ক্ষতি করছে এবং কেনো আমি বলেছি যে রামকৃষ্ণ মিশন এই মূহুর্তে হিন্দুদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর একটি সংগঠন ?

হিন্দুদের জন্য একমাত্র আদর্শ পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, শুধু তাকে ফলো করুন, অবশ্যই তথাকথিত রাধা এবং শ্রীকৃষ্ণের তথাকথিত বহু বিবাহকে বাদ দিয়ে; কারণ, এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধা বলে যেমন কেউ নেই, তেমনি তার জীবনে রুক্মিণী ছাড়া অন্য কোনো স্ত্রী নেই। মোদীর মতো রাষ্ট্রনায়ক, যাদের ধ্যান জ্ঞান দেশ ও জাতি, তারা ছাড়া, কোনো সাধারণ মানুষ যদি বিয়ে না করে এবং সন্তানের জন্ম না দেয়, সমাজ ও ধর্মের ব্যাপারে তার কোনো ভূমিকা নেই; এই সূত্রে হিন্দু সমাজের উপকারে কোনো ভূমিকা নেই চৈতন্য, রামকৃষ্ণসহ অসংখ্য নিঃসন্তান সাধু সন্ন্যাসী মহারাজের, এদের চেয়ে শতগুনে শ্রেষ্ঠ একজন নিরক্ষর অশিক্ষিত সাধারণ গৃহস্থ হিন্দু, যে বিবাহ করেছে এবং কমপক্ষে একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে; কারণ, সে হিন্দু সমাজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একটি গাছ লাগিয়েছে, এই গাছ একদিন শুধু নিজেই হিন্দু সমাজকে যে ছায়া দেবে, তাই নয়, সেই গাছের ফল বা বীজ থেকে অনাগত ভবিষ্যতে হয়তো আরো এমন বৃক্ষের জন্ম হবে, যার ছায়ায় সমগ্র হিন্দু সমাজ আশ্রয় পাবে, এক্ষেত্রে চৈতন্য বা রামকৃষ্ণদের মতো নিঃসন্তান দিব্যজ্ঞানীদের ভূমিকা কী ?

আমার বাবা একজন অশিক্ষিত হিন্দু ছিলেন, কিন্তু তিনি ৭টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং তাদেরকে বড় করার চেষ্টা করেছেন, এজন্য আমি খুব গর্বের সাথে বলতে পারি যে, আমার বাবা- চৈতন্য এবং রামকৃষ্ণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন; কারণ, তার সাত সন্তানের একজন, আমার মধ্যে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ সনাতন ধর্মের প্রকৃত সত্যের এমন জ্ঞান এবং কর্ম ক্ষমতা দিয়েছেন যে, যে জ্ঞান এবং কর্ম হিন্দু সমাজকে সনাতন ধর্মের প্রকৃত সত্যের পথে আমূল পাল্টে দিয়ে যাবে; যে কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। এটা সম্ভব হচ্ছে শুধু আমার বাবার বিয়ে করা এবং আমাকে জন্ম দেওয়ার কারণে, তাহলে এবার নিজেই বিবেচনা করুন, কে শ্রেষ্ঠ, আমার বাবার মতো সাধারণ হিন্দুরা, নাকি বিয়ে শাদী না করা বা সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম নপুংসক সাধু, সন্ন্যাসী মহারাজরা ?

আরেক দিক দিয়েও সাধারণ গৃহস্থ হিন্দুরা, আশ্রমে থেকে শুয়ে বসে থাকা সাধু-সন্ন্যাসী-মহারাজদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ; কেননা, একজন সাধারণ গার্হস্থ্য হিন্দু নিজে পরিশ্রম করে নিজের পেটের ভাত যোগাড় করে, তার স্ত্রী পুত্র কন্যা পিতা মাতার ভরণ পোষণ করে, অভাবী দুঃস্থদের দান করে, অভূক্ত অনাহারীদের সেবাও দেয়। অন্যদিকে সাধু সন্ন্যাসীরা আয় রোজগার মূলক কোনো কাজ করে না, তারা কোনো উৎপাদনমূলক কাজ করে না, সাধারণ গৃহস্থ হিন্দুরা পুন্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যে দান ভিক্ষা দেয়, তাই খেয়ে এরা বেঁচে থাকে; এক কথায় সাধু সন্ন্যাসীরা হলো পরগাছা, যেহেতু তারা নিজেরা কোনো উৎপাদনশীল কাজের সাথে জড়িত নয়; এখন আপনিই বিচার করুন, কে শ্রেষ্ঠ, একজন সাধারণ গার্হস্থ্য হিন্দু, না অকর্মা সাধু সন্ন্যাসীরা ?

এখানে আরেকটি বিষয় বলে রাখি- বাংলায় যেহেতু নপুংসকদের আস্তানা হিন্দুধর্মীয় সংগঠন আশ্রমের অভাব নেই, সেহেতু আপনি সমাজের যে স্তরের লোকই হোন না কেনো, আপনার যোগ্যতা যা ই হোক না কেনো, একটি আশ্রমে গিয়ে আপনার পক্ষে সাধু-সন্ন্যাসী-মহারাজ হওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। পক্ষান্তরে আপনি যদি বিয়ে করে সংসার করতে চান, দেখবেন আপনাকে কোন কোন কোয়ালিটি ফেস করতে হয়, বিয়ে করার জন্য আপনাকে কোন কোন যোগ্যতা প্রদর্শন করতে হয় ? ভালো যোগ্যতা না থাকলে আপনি কোনো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতেই পারবেন না, আর কোনো রকম আয় রোজগার করার ক্ষমতা না থাকলে তো একটি প্রতিবন্ধী মেয়েকেও বিয়ে করার কথা স্বপ্নে ভাবতে পারবেন না। তার মানে বিয়ে করে সংসারী হওয়ার জন্য গুন ও যোগ্যতা লাগে, কিন্তু সাধু-সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য কোনো যোগ্যতা লাগে না, তাহলে একজন সাধু সন্ন্যাসী কোন বিচারে একজন গৃহী মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ?

আর ধর্মজ্ঞানের কথা বলছেন ? এস এস সি বা মাধ্যমিক পাশ করতে একজন স্টুডেন্টকে যে পরিমাণ পড়াশোনা করতে হয়, মোটামুটি ধর্ম জ্ঞান অর্জন করার জন্য আমাদের সনাতন ধর্মীয় টেক্সটগুলোর পরিমাণ তার চেয়ে বেশি নয়; তার মানে প্রতিদিন ২/৩ ঘন্টা করে যদি বছর খানেক আপনি ধর্ম পুস্তক পড়েন বাজারে চলার মতো ধর্মীয় জ্ঞান আপনি অনায়াসেই অর্জন করতে পারবেন; সুতরাং সাধু-সন্ন্যাসীদের ধর্মজ্ঞান দেখে নিজেকে ছোট ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে বাজারে প্রচলিত সনাতন ধর্মের বই পুস্তক পড়লেই আপনি প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাবেন না; কারণ, গীতার সাতশত শ্লোক ছাড়া সনাতন ধর্মের প্রতিটি গ্রন্থ কোনো না কোনো ভাবে বিকৃত, কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসার জন্য আপনাকে ঐ বিষয়ে বাজারে প্রচলিত সমস্ত গ্রন্থ দেখতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে বিচার করে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে, তাহলেই আপনি প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাবেন। আমি আমার প্রতিটি পোস্ট লিখি এই ভাবে সমস্ত গ্রন্থকে গুলে খেয়ে, তাই বেশি কষ্ট স্বীকার না করতে চাইলে, আপনি যদি প্রতিদিন আমার একটি করে পোস্ট বছর দুয়েক পড়েন, শুধু সনাতন ধর্মের প্রকৃত সত্যের সন্ধানই পাবেন না, পৃথিবীর এমন কোনো ধর্মগুরু নেই যে আপনাকে যুক্তি তর্কে পরাজিত করতে পারে বা আপনার ধর্মীয় জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

যা হোক, সাধন বাবু তার কমেন্টের এক পর্যায়ে বলেছে, "ভেদজ্ঞানই অধর্ম, অভেদ জ্ঞানই ধর্ম।" আপনার এই কথা যে সত্য তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু আপনি এই কথা কাদের উদ্দেশ্যে বলছেন এবং কোন জাতির অংশ হয়ে আপনি এই্ কথা বলছেন, সেটা সম্ভবত আপনার বোধে নেই ।

আপনি কি জানেন, হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানের ক্ষমার সুযোগ নিয়ে মুসলমান মুহম্মদ ঘোরী পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে এবং সেই পৃথ্বীরাজ চৌহানকেই পরে পরাজিত করে এবং তাকে হত্যা করে, তারপর মুসলমানরা দিল্লীর ক্ষমতা দখল করে এবং একের পর এক হিন্দু রাজাকে পরাজিত ও হত্যা করে তাদের প্রজাদেরকে হত্যা করতে থাকে অথবা ইসলাম গ্রহনের শর্তে তাদেরকে জীবিত রাখে। মুহম্মদ ঘোরী থেকে শুরু করে টিপু সুলতান পর্যন্ত এই ৭/৮ শ বছর ধরে মুসলমানরা কোটি কোটি হিন্দুকে হত্যা করেছে, জোর করে তাদেরকে মুসলমান বানিয়েছে, নয় তো জিজিয়া করের বিনিময়ে তাদেরকে হিন্দু হিসেবে বাঁচতে দিয়েছে, এই্ সময় ভারতের এমন কোনো বড় মন্দির ছিলো না যেগুলোকে মুসলমানরা ধ্বংস করে নি বা সেগুলোকে মাদ্রাসা বা মসজিদে রূপান্তরিত করে নি, এদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আপনি অভেদ জ্ঞানের কথা বলছেন ?

মধ্যযুগের কথা বাদ দিলেও, এই আধুনিক যুগে ১৯৪৬ সালে, ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের এক সাথে থাকা সম্ভব নয় বলে তারা আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তানের দাবী তোলে এবং সেই দাবী আদায়ে ১৬ থেকে ১৯ আগস্ট মাত্র আড়াই দিনে কোলকাতার প্রায় ২০ হাজার হিন্দুকে হত্যা করে, তারপর বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালিতে ১০ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রায় হাজার খানেক হিন্দুকে তারা হত্যা করে, ১২ থেকে ৫২ বছরের প্রায় সকল হিন্দু নারীকে তারা ধর্ষণ করে এবং এবং জীবিত সকল হিন্দুকে তারা জোর করে মুসলমান বানায়, এদেরকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আপনি অভেদ জ্ঞানের কথা বলছেন ?

এগুলো ছাড়াও, এই বাংলার টোটাল জনসংখ্যা এক সময় হিন্দু ছিলো, ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজি বাংলায় আসার পর হিন্দুদের উপর সে এমন অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে যে অত্যাচার থেকে বাঁচতে দলে দলে হিন্দু মুসলমান হতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয় ১৯৪৭ সালেও পূর্ব বাংলায় হিন্দু জনসংখ্যা ছিলো ২৯%, বর্তমানে সেটা ৯% এর নিচে, এত হিন্দু কি শখ করে ভারতে পালিয়ে গেছে ? শখ করে কি কেউ জন্মভূমি ত্যাগ করে ? যাদের অত্যাচারে হিন্দুদের মান সম্মান জন্মভিটা এবং জীবন বিপন্ন, সেই মুসলমানদেরকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আপনি অভেদ জ্ঞানের কথা বলছেন ? মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করা অবশ্যই অধর্ম, কিন্তু জানোয়ার আর মানুষকে আপনি যদি এক করে ফেলেন, সেটাই ধর্ম নয়, সেটা অধর্ম। কোরান হাদিস এবং আচরণের বিচারে পৃথিবীর একজন মুসলমানও মানুষ নয়, জানোয়ার; সেই জানোয়ারদের প্রসঙ্গে আপনি অভেদ জ্ঞানের কথা কেনো বলছেন ? পাগলা কুকুরকে আপনি যদি না মারেন, পাগলা কুকুরই আপনাকে কামড় দেবে এবং তাতে আপনি মারা যাবেন। জানোয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে আপনি যদি প্রতিরোধ গড়ে না তোলেন, আজ হোক বা কাল হোক, তারা আপনাকেই ছোবল মারবে, সুতরাং তাদের সাথে অভেদ জ্ঞান কেনো ? ছোবল খেয়ে মরার জন্য ? আমি ছোবল খেয়ে মরতে রাজী নই, তাই কোনো পাগলা কুকুর যদি আমাকে কামড়াতে আসে আমিও তাকে কামড় দিতে প্রস্তুত; কারণ, আমার অস্তিত্ব আমি টিকিয়ে রাখতে চাই; কেননা, আপনি মরে গেলেই আপনার সকল গল্প শেষ।

এরপর আপনি প্রশ্ন করেছেন, হিন্দুধর্মের কোথায় বলা আছে অন্যের বিশ্বাসে আঘাত করতে ?

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো উদাহরণ নেই, যেখানে হিন্দুরা প্রথমে অন্য কাউকে আঘাত করেছে, কোনো কারণে; কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার পরও কি আপনি বাঁচার জন্য আক্রমন করবে না ? এই বাংলায় মুসলমানরা প্রতিবছর কতগুলো মূর্তি ভাঙে এবং কত মন্দিরে আগুন লাগায়, সেই পরিসংখ্যান কি আপনি জানেন ? এগুলো কি হিন্দু ধর্মবিশ্বাসে মুসলমানদের আঘাত নয় ? কিন্তু বাংলার কোনো হিন্দু কি মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত লাগে এমন কিছু করে ? করে না। তাহলে মুসলমানরা কেনো নিয়ম করে প্রতি বছর মূর্তি ভেঙ্গে চলেছে ? মুসলমানরা যখন হিন্দুধর্মে আঘাত করে, তখন সেটাকে আপনার ভেদজ্ঞান মনে হয় না ? আর আমি যখন শুধু তাদের অনাচারের বিরুদ্ধে লিখি, সেটাকে কেনো আপনার ভেদজ্ঞান মনে হয় ? সেকুলারগিরি ছেড়ে হিন্দু হোন, তাহলে শুধু নিজেকেই নয়, সমাজকেও বাঁচাতে পারবেন। আর সেকুলারগিরি মারালে আপনার ছেলে বা মেয়েই কোনো মুসলমানকে বিয়ে করে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে আপনার ভুলের উচিত শিক্ষা আপনাকে দিয়ে যাবে, কথাটা মনে রাইখেন।

শেষে আপনি বলেছেন, আপনি যদি আপনার প্রশ্নের জবাব আমার নিকট থেকে পান, তাহলে পরে আরো অগ্রসর হবেন।

আপনি কতদূর অগ্রসর হবেন ? আপনি যদি এক মাইল হাঁটার পরিকল্পনা করে থাকেন, মনে রাখবেন আমি ১০০ মাইল হেঁটে বসে আছি এবং আমার এই কথা সত্য কি না, সেটা আমাকে প্রশ্ন করে আপনি যাচাই করতে পারেন।
মহাভারতে একটি বাণী আছে- যে যা আচরণ করবে, তার সাথে সেই আচরণ করারই ধর্মনীতি। একারণেই ছলনার মাধ্যমে দুর্যোধনের বিজয়ী হওয়া দূতক্রীড়ার পরিণতি হিসেবে ঘটা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ছলনার মাধ্যমেই শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের বিজয়ী করেছেন এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি জানি প্রকৃত ধর্ম কী, তাই এমন লিখি, আপনি আমার কথার বিরোধিতা করেছেন, এর মানে হলো- ধর্ম কী, সেটা আপনি জানেন না; তাই মহাসমুদ্র শ্রীকৃষ্ণের উদাহরণ না টেনে বদ্ধ জলাশয় রামকৃষ্ণ পরমহংসের উদাহরণ টেনেছেন।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment