Friday, 22 May 2020

সাংখ্যদর্শন, ব্রহ্মসূত্র বা বেদান্তদর্শনের জ্ঞান প্রকৃতপক্ষে কার ?


সাংখ্যদর্শন, ব্রহ্মসূত্র বা বেদান্তদর্শনের জ্ঞান প্রকৃতপক্ষে কার  ?

এই প্রবন্ধে আমি যে পোস্টের জবাব দিচ্ছি, তার লেখক বিক্রমাদিত্য আর্য, যা আপনারা ফটো হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন, এই বিক্রমাদিত্য আসলে সেই পুরোনো বিক্রম বর্মন; কিন্তু এটা পোস্ট করেছে ঘোষ রূপা, এই ঘোষ রূপা সম্ভবত বিক্রমের বউ; কারণ, বিক্রম যেমন তার বিভিন্ন পোস্টে তার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য ৩ হাজা বা ৫ হাজার বছর সময় দেয়, তেমনি দেখলাম, রূপাও তার একটি পোস্টে ১ হাজার বছর সময় দিয়েছে। এদের জ্ঞানের এত অহংকার যে, এরা ভাবে তাদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব হাজার বছরে কেউ দিতে পারবে না, তাই সময় নিয়ে এমন ঔদ্ধত্য দেখায়, কিন্তু যে পোস্টের জবাব দেওয়ার জন্য বিক্রম ৩ হাজার বছর সময় দিয়েছিলো, ব্যবসায়িক ও সাংসারিক ব্যস্ততার মধ্যেও আমি সেই পোস্টের জবাব দিয়েছি মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে, যদিও সম্পূর্ণ ফ্রি সময় থাকলে সেটা দিতাম মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে। যা হোক, বিক্রমের এই প্রবন্ধের জবাবও দিচ্ছি, পোস্টটি আমার নজরে আসার মাত্র তিনদিনের মধ্যে।

এই পোস্টে বিক্রমের অভিযোগ হলো গীতার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ, মহর্ষি কপিলের সাংখ্য দর্শন এবং মহর্ষি ব্যাসদেবের ব্রহ্মসূত্র ও বেদান্তদর্শনের জ্ঞানকে কপি পেস্ট করেছে। কপিল এবং ব্যাসদেব যে প্রকৃতপক্ষে কে, সেই জ্ঞান যদি বিক্রমের থাকতো, তাহলে এই প্রশ্নই সে তুলতে পারতো না বলেই আমার বিশ্বাস।

যা হোক, কপিল এবং ব্যাসদেব সম্পর্কে আলোচনা করার আগে বিক্রমের "মহর্ষি" প্রেম সম্পর্কে একটু আলোচনা করে নিই।

মহর্ষি কাকে বলে, বিক্রম সেটাই জানে না, তাই যার তার নামের আগে সে মহর্ষি বসিয়ে দেয়, সেটাও আবার ভুল বানানে (মহির্ষী; প্রসঙ্গ যেহেতু এসেই গেলো, সেহেতু বিক্রমের বানান ও বাক্যজ্ঞান নিয়ে একটু আলোচনা সেরে নিই।

বিক্রমকে বলছি,

বিক্রম, লিখতে গিয়ে যে ছাত্রের বানান ভুল হয় এবং যার বাক্য গঠন ঠিক হয় না, সে কিন্তু ক্লাসে কখনো প্রথম হতে পারে না। তুমি জ্ঞানের এত বাহাদুরী দেখাও, কিন্তু আজ পর্যন্ত তোমার ভুল বানান এবং বাক্য গঠন ঠিক হলো না।এখনও তুমি 'যাই' এর স্থলে 'যায়' লিখো, মানে 'গীতাই' বোঝাতে গিয়ে 'গীতায়' লিখো, এগুলো কি তোমার জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করে ? এর বিপরীতে আমার লেখা কোনো প্রবন্ধ থেকে একটি ভুল বানান এবং একটি ভুল বাক্য গঠন, পারলে বের করে দেখিও, তত্ত্ব উপলব্ধির কথা না হয় বাদই দিলাম। আমি মনে করি আমার এই জ্ঞান, আমার প্রতি ঈশ্বরের বিশেষ দান বা অস্ত্র, তোমাদের মতো কৃষ্ণ বিদ্বেষী অসুরদের সাথে লড়াই করার জন্য।

ফিরে যাই মহর্ষি প্রসঙ্গে। ঋষিদের মধ্যে যারা মহান, তাদেরকে বলে মহর্ষি, আর ঋষি তাঁরাই, যারা বেদের মন্ত্র রচনা করেছেন। কপিল, বেদের কোনো মন্ত্র রচনা করেন নি, তাই তিনি ঋষিই নন, মহর্ষি তো দূরের কথা; একই কথা প্রযোজ্য ব্যাসদেবের ক্ষেত্রেও, ব্যাসদেবও নিজে বেদের কোনো মন্ত্র রচনা করেন নি, তাই তিনিও ঋষি নন। কপিল এবং ব্যাসদেব দুজনেই মুনি এবং মুনি তারাই, যারা বেদের মন্ত্রগুলো নিয়ে বিশেষভাবে অধ্যয়ণ ও অধ্যাপনা করেছেন। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ এই দুজনকেই মুনি হিসেবে উল্লেখ করেছেন; কারণ, বাস্তবে তারা মুনিই, ঋষি বা মহর্ষি নন। যার তার নামের আগে মহর্ষি লাগানোর অভ্যাসটা সম্ভবত আর্য সমাজীরা পেয়েছে দয়ানন্দের নামের আগে মহর্ষি লাগানোর ফলে। এই প্রসঙ্গে আর্য সমাজীদের কাছে একটি প্রশ্ন করছি, দয়ানন্দের নামের আগে যে আপনারা মহর্ষি লাগান, তো দয়ানন্দ কি বেদের কোনো মন্ত্র রচনা করেছে ? বেদের কোনো মন্ত্র রচনা না করায়, দয়ানন্দ তো ঋষিই নয়, সে আবার মর্হষি হয় কিভাবে ?

যা হোক, ফিরে যাই মূল আলোচনায় এবং দেখার চেষ্টা করি কপিল ও ব্যাসদেব আসলে কে, তাহলেই বুঝতে পারবেন সাংখ্যদর্শন, ব্রহ্মসূত্র বা বেদান্তদর্শনের জ্ঞান আসলে কার জ্ঞান ?

গীতার দশম অধ্যায়ের ২৬ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "সিদ্ধানাং কপিলো মুনিঃ",এর অর্থ হলো- সিদ্ধপুরুষগণের মধ্যে আমি কপিল মুনি।

আবার দশম অধ্যায়ের ৩৭ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,"মুনিনামপ্যহং ব্যাসঃ" এ অর্থ হলো- মুনিদের মধ্যে আমি ব্যাস।

তো শ্রীকৃষ্ণ যেখানে নিজেই বলেছেন যে, আমিই কপিল মুনি, আমিই বেদব্যাস; তাহলে বেদব্যাস বা কপিল মুনির জ্ঞান আসলে কার জ্ঞান ? ঈশ্বর হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ নিজ হাতে কোনো শাস্ত্রগ্রন্থ লিখেন নি, তিনি মহর্ষি ভৃগু হিসেবে আবির্ভূত (গীতা, ১০/২৫) হয়ে যেমন বেদ মন্ত্র রচনা করেছেন, তেমনি বেদব্যাস হিসেবে আবির্ভূত হয়ে বেদমন্ত্রগুলো সংকলন করেছেন, ব্রহ্মসূত্রসহ শাস্ত্রগ্রন্থগুলো রচনা করেছেন, তেমনি কপিল মুনি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে সাংখ্যদর্শনও রচনা করেছেন। তাই সাংখ্যদর্শন, ব্রহ্মসূত্র বা বেদান্তদর্শনের জ্ঞান যে শ্রীকৃষ্ণেরই জ্ঞান, সেটা আর্য সমাজীদদের মতো মূর্খ ছাড়া আর সকলেই বুঝবে। কপিল বা বেদব্যাসের জ্ঞান শ্রীকৃষ্ণ চুরি করেছে, এটা- পিতার কাছ থেকে পুত্রের পাওয়া সম্পদকে, আবার পিতা চুরি করেছে, এমনটা বলার ধৃষ্টতা দেখানো; যে দৃষ্টতা দেখাচ্ছে আর্য সমাজীরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে দয়ানন্দের তুলনা করে বা শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে নানা বাজে কথা প্রচার করে।

এবার, এই পোস্টে বিক্রম, গীতার যে শ্লোকগুলো তুলে ধরে শ্রীকৃষ্ণের সমালোচনা করেছে, সেগুলোতে সে কতটা সত্য বলেছে, সেদিকে নজর দিই-

গীতার ১৫/২০ নং শ্লোক বিক্রম উল্লেখ করেছে এভাবে

"ইতি গুহ্যতমম্ শাস্ত্রম্ ইদম্ উক্ত্যম্ ময়া অনঘ ।
এতত্ বুদ্ধা বুদ্ধিমান স্যাত্ কৃত কত্যঃ চ ভারত ।।"

কিন্তু এর প্রকৃত রূপ হলো-

"ইতি গুহ্যতমং শাস্ত্রমিদমুক্তং ময়ানঘ।
এতদবুদ্ধা বুদ্ধিমান্ স্যাৎ কৃতকৃতশ্চ ভারত।।

এবং এর অর্থ হিসেবে বিক্রম লিখেছে - হে নিস্পাপ অর্জুন এনটিই বৈদিক শাস্ত্রের সবচেয়ে গোপনিয় অংশ, এবং আমি তোমার কাছে প্রকাশ করলাম। যিনি এই তত্ত অব গত হয়েছেন, তিনিই প্রকৃত বুদ্ধিমান এবং তিনিই কৃতার্থ হয়েছেন।

কিন্তু জগদীশচন্দ্র ঘোষের গীতা অনুযায়ী এর অর্থ হলো-

"হে নিষ্পাপ, আমি এই অতি গুহ্য কথা তোমাকে কহিলাম, যে কেহ ইহা জানিলে জ্ঞানী ও কৃতকৃত্য হয়।"

ভালো করে খেয়াল করে দেখুন তো, এই শ্লোক এবং তার অনুবাদে বেদের কোনো কথা আছে কি না, নেই। অথচ এর অনুবাদে বিক্রম বেদকে ঢুকিয়ে দিয়ে অুনুবাদ করেছে-" হে নিস্পাপ অর্জুন এনটিই বৈদিক শাস্ত্রের সবচেয়ে গোপনিয় অংশ"। আর্য সমাজীরা মন্ত্র বা শ্লোকের অর্থ পাল্টানোর স্বভাব পেয়েছে সম্ভবত তাদের গুরু দয়ানন্দের কাছ থেকে; কারণ, দয়ানন্দের স্বভাব ছিলো কোনো বিষয়কে নিজের পক্ষে আনার জন্য বা নিজের মত অনুযায়ী করার জন্য অর্থ পাল্টিয়ে ফেলা, গুরু যেমন মিথ্যুক, তার শিষ্যরাও তেমনি মিথ্যুক হবে, এতে আর আশ্চর্য কি ?
বিক্রমের বানান জ্ঞান নিয়ে শুরুতেই বলেছি, এখানেও দেখুন লিখেছে ' গোপনিয়', কিন্তু এর সঠিক বানান হলো গোপনীয়।

এরপর বিক্রম যে গীতার আরো তিনটি শ্লোক তুলে ধরেছে, সেগুলোও সম্পূর্ণ বিশুদ্ধভাবে তুলে দেওয়া হয় নি, খুব গুরুত্বপূর্ণ না হওয়ায় সেই আলোচনায় আর গেলাম না। এই সব শ্লোক তুলে দেওয়ার মাধ্যমে বিক্রম প্রমাণ করতে চেয়েছে যে- শ্রীকৃষ্ণ গীতার এই সব শ্লোকে সাংখ্যদর্শনের জ্ঞানকে কপি পেস্ট করেছে, কিন্তু সাংখ্যদর্শন কার লেখা এবং তিনি যে প্রকৃতপক্ষে কে, সেটা উপরেই আলোচনা করেছি, তাই এ বিষয়ে আবার কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি না; কারণ, কথায় আছে- অর্ধেক বললেই মর্দে বুঝে, আমার পাঠকরা যে আমার কথা বুঝে গিয়েছে, সেটা আমি জানি, যারা বুঝবে না বা বুঝতে চাইবে না, তারা হলো আর্য সমাজী; কারণ, আর্য সমাজীরা জ্ঞানের খুব বড়াই করে, কিন্তু এক পাতা বাংলা শুদ্ধ করে লিখার জ্ঞান তাদের নেই, এই জ্ঞান নিয়ে তারা আবার নিজদেরকে ক্লাসের ফার্স্ট মনে করে। উন্মাদরা নিজেদেরকে অনেক কিছুই মনে করে, তাতে অন্যদের কিছু যায় আসে না, যায় আসে না আমারও। কিন্তু আর্য সমাজীরা নিজেদের মল মূত্র ত্যাগ করে সামাজিক পরিবেশকে যেভাবে দূষিত করছে বলে, সেগুলো পরিষ্কার করার দায়িত্ব তো কাউকে না কাউকে নিতেই হবে, আমি আসলে সেই দায়িত্বই পালন করছি, সমাজে সুস্থভাবে বসবাস করার স্বার্থে।

আর্য সমাজীরা না বুঝলেও, আমার পাঠকবন্ধুরা আমার কথা যে বুঝতে পেরেছে, সেটা আমি নিশ্চিত।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
ঔঁ সহানা ভবতুঃ ( ঈশ্বর আমাদেরকে রক্ষা করুন আর্য সমাজীদের এই  উৎপাত থেকে)

No comments:

Post a Comment