Thursday, 7 May 2020

চৈতন্যদেব কি সন্ন্যাসী ?


চৈতন্যদেব কি সন্ন্যাসী ?

হাজার বছরের ভুল ব্যাখ্য এবং মিথ্যা প্রচারের ফলে সাধারণ হিন্দুরা এটাই মনে করে যে- যে ব্যক্তি গৃহ বা সংসার ত্যাগ করেছে বা যিনি বিয়ে ক'রে সংসার না ক'রে সাধুর বেশে ঘুরে বেড়ান- তিনিই সন্ন্যাসী; কিন্তু শ্রীমদ্ভগ্বদগীতায় পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ একথা বলেন না। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেন- কর্মফলের আকাঙ্ক্ষা না করিয়া যিনি কর্তব্য কর্মগুলি করিয়া যান, তিনিই সন্ন্যাসী, তিনিই যোগী। যিনি যজ্ঞাদি শ্রৌতকর্ম অথবা শারীরকর্ম ত্যগ করিয়াছেন, তিনি নহেন।

দেখে নিন গীতার এই শ্লোকটি-

"অনাশ্রিতঃ কর্মফলং কার্যং কর্ম করোতি যঃ।
স সন্ন্যাসী চ যোগী চ ন নিরগ্নির্নচাক্রিয়ঃ।।"- (গীতা, ৬/১)

এই সূত্রে যেসব ছেলে যুবক বয়েস বিয়ে শাদী না ক'রে, সংসার রচনা না ক'রে, পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন না ক'রে, কোনো মঠ বা আশ্রমে চলে যান বা গেরুয়া পোষাক প'রে সাধুর বেশে ঘুরে বেড়ান, তিনি কি সন্ন্যাসী ? মোটেই নন। এই সূত্রে সন্ন্যাসী নন চৈতন্যদেবও।

সনাতন ধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবন ব্যবস্থা। সনাতন ধর্মে পরিষ্কার করে বলা আছে কোন বয়সে মানুষকে কী করতে হবে। সনাতন ধর্মে মানুষের সমগ্র জীবনকে- ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বাণপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস- এই চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ব্রহ্মচর্য আশ্রমের সময় কাল ২৫ বছর পর্যন্ত, এই সময়ে একজন মানুষকে শরীর গঠন এবং শিক্ষা অর্জন করতে হবে। ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাকে বিয়ে করে সংসারে প্রবেশ করে ছেলে মেয়ের জন্ম দিতে হবে এবং স্ত্রী, পিতা-মাতা এবং ছেলে-মেয়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করে তাদেরকে মানুষ করতে হবে, ছেলে মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে হবে; একে বলে গার্হস্থ্য আশ্রম। ৫০ বছর বয়সের পর, সেই ব্যক্তিকে সংসারের দায়িত্ব ছেলের হাতে অর্পণ করে কোনো ধর্মীয় সংগঠন বা আশ্রমের অধীনে গিয়ে তার নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী সমাজের জন্য কাজ করতে হবে, একে বলে বাণপ্রস্থ আশ্রম; এই আশ্রমের সময়কাল ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত। বাণপ্রস্থ আশ্রমের কাল শেষ হলে সেই ব্যক্তি সন্ন্যাস নিতে পারবে, সন্ন্যাস মানে পূর্ণ অবসর, এই সময়ে সংসার বা সমাজ কোনো কিছুর প্রতিই তার কোনো দায়িত্ব থাকবে না, এই সময়ে ব্যক্তি শুধু ভগবানের নাম জপ বা ধ্যান করে মোক্ষলাভের উদ্দেশ্যে দিন অতিবাহিত করবে।

সনাতন ধর্মের এই আশ্রম প্রথার মাধ্যমে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছে যে কোনো বয়সে ব্যক্তির কী কর্তব্য। কোনো ব্যক্তি যেমন শরীর গঠন ও শিক্ষাগ্রহন না করে সংসারে প্রবেশ করতে পারে না, তেমনি সে সংসারের অভিজ্ঞতা না নিয়ে বাণপ্রস্থে যেতে পারে না, আবার বাণপ্রস্থে সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে কেউ সন্ন্যাসেও যেতে পারে না। কাউকে সন্ন্যাস নিতে হলে আগের তিনটি স্তর- ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য ও বাণপ্রস্থ অতিক্রম করে আসতে হবে এবং এইভাবে কেউ যদি সন্ন্যাস স্তরে পৌঁছে সে অবশ্যই মোক্ষ লাভ বা মোক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু কেউ যদি গার্হস্থ্য আশ্রমে সংসারে প্রতি দায়িত্ব পালন না করে, সে কিছুতেই সন্ন্যাস নিতে পারে না, তার সকল ধর্ম আচরণই বৃথা।

মহাভারতে বলা হয়েছে- যে পুরুষ, সন্তানের জন্ম না দিয়ে মারা যাবে সে কখনো স্বর্গে যেতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে স্বর্গলাভ এবং মোক্ষপ্রাপ্তি সম্পর্কে কিছু বলা আবশ্যক বলে মনে করছি-

স্বর্গ-নরক হলো মানুষের জন্ম মৃত্যু চক্রের সিস্টেমের একটি অংশ। মানুষ মারা গেলে তার কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গ বা নরকের ফল ভোগ করে এবং তারপর পুনরায় পৃথিবীতে জন্ম নেয়। কিন্তু কোনো মানুষ যদি মোক্ষ লাভ করে, তাকে আর পৃথিবীতে জন্ম নিতে হয় না। সনাতন ধর্মে বলা হচ্ছে- সন্তানের জন্ম না দিয়ে মারা গেলে কেউ স্বর্গই পায় না, তাকে নরক ভোগ করে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে হয়; এই যখন প্রকৃত সত্য, তখন যুবক অবস্থায় কোনো পুরুষ যদি বিয়ে-শাদী না ক'রে সংসার ত্যাগ ক'রে সন্ন্যাসীর ভান ধরে ঘুরে বেড়ায়, তার কি মোক্ষ লাভের কোনো সম্ভাবনা আছে ? মোটেই নেই, সে তো স্বর্গে যাওয়ার অধিকারীই নয়, তার মোক্ষপ্রাপ্তি তো বহুত দূরের ব্যাপার। বিষয়টি এমন- পরীক্ষায় যে পাশই করতে পারবে না, সে চিন্তা করছে গোল্ডেন জিপিএর !
সনাতন ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা একজন মানুষকে বাঁচায়, তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে এবং তার মাধ্যমে সমাজ সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। কিন্তু বর্তমানে চৈতন্যদেবের অনুসারীদের মাধ্যমে সমাজে সন্ন্যাসের নামে যা চলছে, তাতে সমাজ সংসারের বিকাশ তো দূরের কথা, হিন্দু সমাজ ধ্বংস বা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এই বিষয়টি বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার দরকার নেই, খুব সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়, যুবক বয়সে কেউ যদি সংসার ত্যাগ করে, তার দ্বারা সমাজের বিন্দুমাত্র উপকার হয় না। কারণ, তার সংসারে ত্যাগের ফলে একটি সনাতনী মেয়ে স্বামী পায় না, সে বিধর্মীদের হাতে চলে যেতে পারে বা যায়, সেই ছেলেকে নিয়ে তার পিতা মাতার যে স্বপ্ন তা ভঙ্গ হয়, তাদের বৃদ্ধ বয়সের সুরক্ষা অনিশ্চিত হয়, এছাড়াও সেই পরিবারে কোনো ছেলে মেয়ের জন্ম না হওয়ায় সেই পরিবারটি এক সময় বিলুপ্ত হয়, এভাবে সমাজের জনসংখ্যা কমতে থাকে।
সমাজ টিকে থাকে জনসংখ্যায়, জনসংখ্যা যদি কমে যায়, তাহলে সেই সমাজের সকল মাহাত্ম্য ব্যর্থ। কারণ, সমাজে লোক যদি না থাকে, আপনি কার কাছে ধর্মপ্রচার করবেন বা কার কাছে হরিনাম বিলি করবেন ? চৈতন্যদেব হরিনাম বিলিয়েছেন, কিন্তু তিনি কি কোনো সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ? সংসারের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন ? বৃদ্ধা মাতার অবলম্বন ছিলেন ? তিনি কি সন্ন্যাস নেওয়ার বয়সে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন ?

এই সকল প্রশ্নের উত্তর হলো- না।

তাহলে চৈতন্যদেব কিভাবে সমাজের কল্যানে কোনো কাজ করে গিয়েছেন ?

চৈতন্যদেবের দ্বারা সমাজের কোনো কল্যান হয় নি, বরং ক্ষতি হয়েছে প্রভূত এবং এখনও হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি যদি চৈতন্যদেবের জীবনাদর্শকে অনুসরণ করে তার পরিবার বিলুপ্ত হতে বাধ্য, যেমন বিলুপ্ত হয়েছে চৈতন্যের নিজের পরিবার। এভাবে প্রত্যেকে যদি চৈতন্যের আদর্শকে অনুসরণ করে, শুধু সমাজ নয়, সন্তান জন্মের অভাবে মাবনসভ্যতা ই এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে, যা ঈশ্বরের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে।

আচ্ছা, চৈতন্যদেব যে বিয়ে করার পরেও স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন না ক'রে, বৃদ্ধা মায়ের ভরণ পোষণ নিরাপত্তার কথা চিন্তা না ক'রে, সংসার থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেলেন, এটা করতে তাকে কে বলেছিলো বা এই নির্দেশ সে কোথা থেকে পেয়েছিলো ? শ্রীকৃষ্ণ হলেন মানব জীবনের আদর্শ, শ্রীকৃষ্ণ কি এমন কিছু করেছিলেন বা এমন কিছু করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ? শ্রীকৃষ্ণ পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন, বিয়ে করেছেন, সংসার করেছেন, সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যুদ্ধ করেছেন, রাজ্য পরিচালনা করেছেন, অধর্মের বিনাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। অর্থাৎ একজন মানুষকে তার সারাজীবনে যা করতে হয় তার সবই করেছেন। তাহলে যে চৈতন্যদেব, কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে পাগল হয়েছিলেন, সেই চৈতন্য, শ্রীকৃষ্ণের কোন আদর্শটিকে অনুসরণ করেছেন ? বস্তুত চৈতন্যদেব, শ্রীকৃষ্ণের কোনো আদর্শকেই অনুসরণ করেন নি, এমনকি মানব জীবনের যে সাধারণ ধর্ম, সেটাও তিনি পালন করেন নি, তাহলে এই চৈতন্যদেব কিভাবে কোনো মানুষের আদর্শ হতে পারে ?

আমার দৃঢ় বিশ্বাস- সংসারের প্রতি দায়িত্ব পালন না করায় এবং সমাজকে ভুল পথে চালিত করায়, চৈতন্যদেব মোক্ষলাভ তো দূরের কথা, তিনি স্বর্গই পান নি; কারণ, শাস্ত্র অনুযায়ী তিনি সন্ন্যাসীই নন। সুতরাং এই চৈতন্যদেবের অনুসরণে যেসব যুবক ছেলে সংসার ত্যাগ করে চলে যায়, বিয়ে করে কোনো নারীর দায়িত্ব নেয় না, সমাজের ভবিষ্যৎ অবলম্বন সন্তানের জন্ম দেয় না, বৃদ্ধ পিতা মাতার দায়িত্ব পালন করে না, তারা গেরুয়া পোষাক প'রে কপাল থেকে নাক পর্যন্ত লম্বা তিলকসহ দ্বাদশ অঙ্গে তিলক এবং মাথা ন্যাড়া করে মাথায় বড় একটি টিকি রাখলেই তারা সন্ন্যাসী নয়, তাদের পায়ে প্রণাম করলে যেমন আপনার পাপ হবে, তেমনি তাদের উদরপূর্তির জন্য দক্ষিনা দিলেও আপনার অধর্ম হবে; কারণ, সেই ব্যক্তিই শ্রদ্ধা ভক্তি পাওয়ার যোগ্য, সমাজ সংসারে যার অবদান আছে; আর সেই ব্যক্তিই পূজ্য, যার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ আছে।

আমরা পাঠক বন্ধুদের মধ্যে যারা, মাঝে মাঝে বা বছরে দু এক বার ধর্মসভা বা আলোচনার সভার আয়োজন করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা ভুলেও কখনো এমন কোনো ব্যক্তিকে ধর্ম আলোচনার জন্য ডাকবেন না বা আমন্ত্রণ করে নিয়ে যাবেন না- যিনি যুবক বয়সে সংসার ত্যাগ করেছেন বা বিয়ে শাদী করেন নি বা সংসারের অভিজ্ঞতা যার নেই। কারণ, এই ধরণের ব্যক্তি নিজেই শাস্ত্র অনুযায়ী স্পষ্টতই ভুল পথে আছে, সে আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে কিভাবে ? সে কিভাবে বুঝবে আপনার সংসার প্রতিপালনের সমস্যার কথা ? এই ধরণের সংসার বিরাগী বা দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে সংসার থেকে পলায়ন করা অকর্মা ব্যক্তির কথা শুনলে এবং তার কথা বিশ্বাস করলে আপনি নিজেও একসময় ভুল পথে পরিচালিত হবেন, আপনার মানব জীবন ব্যর্থ হবে।

মনে রাখবেন, আপনি যদি ধর্ম সম্পর্কে কিছুই না জানেন, আপনি যদি শুধু বিয়ে করেন, সন্তানের জন্ম দেন, তাদেরকে মানুষ করার চেষ্টা করেন, পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন করেন, আপনি আমার কাছে চৈতন্যদেবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, বয়সে বড় হলে আপনার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে আমার কোনো আপত্তি নেই, আর বয়সে ছোট হলে আপনার জন্য আমার আশীর্বাদ বা শুভ কামনা চিরকালীন; কারণ, আপনি শ্রীকৃষ্ণের পথে আছেন, চৈতন্যদেব বা তার অনুসারীদের মতো ভুল পথে নেই।

পরিবার, সংসার এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করায় উপর্যুক্ত কারণেই আমার নিরক্ষর পিতাকে আমি চৈতন্যদেবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করি। কারণ, তিনি আমার মতো একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং যার কারণে আমি হিন্দু সমাজ, ধর্ম ও হিন্দু জাতির কল্যানের জন্য কিছু ভাবতে পারছি বা করতে পারছি। যারা আমার কর্ম ও চিন্তা সম্পর্কে অবগত বা আমার কর্ম ও চিন্তার সাথে যুক্ত, তারা জানেন হিন্দুধর্ম ও সমাজের কল্যানের জন্য আমি কিভাবে কাজ করছি, আর এটা সম্ভব হচ্ছে আমার পিতা মাতার দ্বারা আমার জন্মের কারণেই। সুতরাং আমার কর্মের সমস্ত পুণ্যফলে আমার পিতা মাতার যেমন স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটবে, তেমনি আমিও যদি তেমন কোনো সন্তানের জন্ম দিতে পারি, তার কর্মের পুণ্যফলে আমারও স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটতে পারে বা মোক্ষলাভ হতে পারে। কিন্তু এর কোনোটিই ঘটবে না, যদি আমি বিয়ে না করে সংসার না করতাম বা সন্তানের জন্ম না দিই।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে চৈতন্যদেবের মত বা পথ একটি বোগাস মত বা পথ। কারণ, এর দ্বারা আপনার ইহকাল বা পরকাল, কোনো কালেরই কোনো প্রকার কল্যাণ হওয়ার কোনোকরম সম্ভাবনা নেই।

উপরে গীতার রেফারেন্সে বলেছি- "কর্মফলে আকাঙ্ক্ষা না করিয়া যিনি কর্তব্য কর্মগুলি করিয়া যান, তিনিই সন্ন্যাসী, তিনিই যোগী।"

এখানে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ নিষ্কাম কর্মের কথা বলেছেন। নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট এবং সঠিক ধারণা নেই। নিষ্কাম কর্ম মানে কর্মের ফল আশা না করা নয়, ঈশ্বর আমাকে দিয়ে কর্ম করাচ্ছেন এমন মনোভাব নিয়ে কোনো কর্ম করা। সকাম ও নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে আমার একটি প্রবন্ধ আছে, সেখানে এই বিষয়ের ডিটেইলস আলোচনা আছে।

যা হোক, উপরের এই আলোচনা থেকে আশা করছি, আমি আমার পাঠক বন্ধুদেরকে এটা বোঝাতে পেরেছি যে- চৈতন্যদেব নামে সন্ন্যাসী হলেও বাস্তবে শাস্ত্রমতে তিনি কোনো সন্ন্যাসী নন; কারণ, তিনি গার্হস্থ্যধর্ম ঠিক মতো পালন করেন নি, মানব জাতির আদর্শ শ্রীকৃষ্ণের আদর্শকে অনুসরণ করেন নি, এই ভুল পথে চলার জন্যই তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন নি, মাত্র ৪৮ বছর বয়সে পুরীর মন্দিরের পাণ্ডাদের হাতে নিহত হয়েছেন।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
------------------

বি.দ্র # বাংলাদেশে যারা বিভিন্ন ধর্মসভার জন্য আলোচক বা বক্তার খোঁজ করছেন, তারা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি এমন ব্যক্তির সন্ধান আপনাদেরকে দেবো, যিনি আপনাদেরকে মিথ্যা শেখাবেন না, ভুল পথে পরিচালিত করবেন না, সনাতন ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা এবং মানব মুক্তির সঠিক পথ দেখাবেন। এ প্রসঙ্গে আরো জানিয়ে রাখি, আমি একটা ধর্মীয় সংগঠনের পরিকল্পনা করেছি, যেখানে সনাতন ধর্মের চার আশ্রম ব্যবস্থার বিধি অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ আমার সংগঠনে সংসার ত্যাগী কোনো যুবক ছেলেকে পার্মানেন্টলি নেয়া হবে না, আমার সংগঠনে তারাই পার্মানেন্টলি স্থান পাবে, যারা গার্হস্থ্য ধর্ম পালন করেছে এবং যাদের বয়স ৫০ এর উপরে। তারা আমার সংগঠনে এসে বাণপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস ধর্ম পালন করতে পারবে। আর আমার সংগঠনে যোগ দেওয়ার জন্য কাউকে কখনো পার্মানেন্টলি সংসার ত্যাগ করতে হবে না। কারণ, সংসার ত্যাগের বিধান সনাতন ধর্মে কোথাও নেই। সংসারে থেকেই সকল শ্রেণীর হিন্দু আশ্রমের সাথে যুক্ত থেকে ধর্ম শিক্ষা করতে পারবে এবং বয়স ৫০ বছর পার হলেও কেবল সংসারে দায়িত্ব ছেলের হাতে অর্পণ করে আশ্রমে পূর্ণ সময় কাটাতে পারবে এবং আশ্রমের বিধি মোতাবেক সমাজের কাজে নিজেকে নিয়োগ করতে পারবে। এভাবে কাজ করার পর কেউ যদি ৭৫ বছর বয়সের পর জীবিত থাকে, সে সন্ন্যাস নিতে পারবে এবং সমাজ সংসারের দায়িত্ব থেকে পূর্ণ অবসর নিয়ে শুধু ভগবানের নাম জপ ও ধ্যান করে দিন অতিবাহিত করতে পারবে।

No comments:

Post a Comment