Friday, 22 May 2020

Arya_Nirmol এর মন্তব্যের পয়েন্ট টু পয়েন্ট জবাব


#Arya_Nirmol এর মন্তব্যের পয়েন্ট টু পয়েন্ট জবাব :

আর্য সমাজীদের সাথে আমার বিরোধ, শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানা এবং না মানা নিয়ে। তো এই বিষয়ে নির্মল নামের এক আর্য আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলেছে, এই প্রবন্ধে দেবো তার জবাব, তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক-


আমার বিরুদ্ধে নির্মলের প্রধান অভিযোগ হলো, আমি নাকি বলেছি- শ্রীকৃষ্ণ বেদ মানতে নিষেধ করেছেন, তাই আমি বেদ মানি না !

অনলাইনে আমার লেখা কয়েকশত প্রবন্ধ এবং প্রায় হাজারখানেক ফটোপোস্ট আছে, এর কোনো একটির দ্বারা রেফারেন্সসহ নির্মল যদি প্রমাণ দিতে পারে যে- "শ্রীকৃষ্ণ বেদ মানতে নিষেধ করেছেন এবং তার ফলে আমি বেদ মানি না", এমন কথা কোথাও বলেছি, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি- আর্যদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নেবো এবং তাদের বিরুদ্ধে আর কোনোদিন কোনো কিছু লিখবো না। কিন্তু নির্মল যদি তার অভিযোগকে প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে তাকে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না, তাদেরকে শুধু শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে, আর্যরা এই প্রস্তাবে রাজী আছে ?

বেদ সম্পর্কে মুসলমানদের সকল কটূক্তির জবাব আমিই প্রথম যুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে অনলাইনে প্রকাশ করেছি, কোনো আর্য কিন্তু মুসলমানদের ঐ সকল কটূক্তির জবাব দিয়ে বেদের পক্ষে দাঁড়ায় নি, আমি যদি বেদ না মানি, তাহলে কিভাবে ঐ সকল প্রবন্ধ লিখতে পেরেছি ? আমি এটাও খেয়াল করেছি, বেদ নিয়ে কটূক্তি করে মুসলমানরা যখন তৃপ্তির হাসি হাসতে থাকে, তখন বেদের তথাকথিত ধারক বাহক আর্যরা, গর্তে ঢুকে থাকে, মুসলমানদের ঐসব কটূক্তির জবাব দিতে সামনে আসে না, তাই বাধ্য হয়ে ঐসব মুসলমানকে দমন করতে আমাকেই কলম ধরতে হয় বা হয়েছে।

বেদ সম্পর্কে আমার মন্তব্য হলো- বেদ, সনাতন ধর্মের ভিত্তি এবং সনাতন ধর্মের প্রা্থমিক জ্ঞান, কিন্তু গীতা হলো সনাতন ধর্মের উচ্চতর জ্ঞান; যেকারণে একটি প্রবন্ধে আমি বলেছি, গীতা যদি মাস্টার্স লেভেলের জ্ঞান হয়, তাহলে বেদ হলো মাধ্যমিক লেভেলের জ্ঞান, আমার এই কথা শুনে অনেক আর্যর নাকি হাসতে হাসতে লুঙ্গি খুলে গিয়েছিলো, পরে তারা নাকি তাদের লুঙ্গিই আর খুঁজে পাচ্ছিলো না। যা হোক, একমাত্র উন্মাদরাই তাদের লুঙ্গি খুঁজে পায় না। সুস্থ মস্তিষ্ক্যের লোকের লুঙ্গি কখনো হারায় না, তারা যেকোনো কথার যুক্তি সম্মত সমালোচনা করে।
বেদের মূল বিষয় হলো দেব-দেবীদের উদ্দেশ্যে স্তুতি, প্রার্থনা এবং যজ্ঞ। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, এর মাধ্যমে পার্থিব ফল লাভ করা যায়, স্বর্গ লাভ করা যায়, কিন্তু চুড়ান্ত মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করা যায় না। কিন্তু মানুষের চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করা, যে জ্ঞান বেদে নেই, আছে গীতায়। এজন্যই গীতার জ্ঞানকে আমি সনাতন ধর্মের চুড়ান্ত জ্ঞান মনে করি এবং যে কারণে সনাতন ধর্মীয় সকল গ্রন্থের উপরে আমি গীতাকে স্থান দিই।

অথচ আমার এই বক্তব্যকে বুঝতে না পেরে আর্যরা ধরে নিয়েছে আমি বেদকে মানি না, শ্রীকৃষ্ণও বেদকে মানতে নিষেধ করেছে বলে নাকি আমি প্রচার করি! এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ তো উপরেই দিয়েছি, দেখি কোন আর্যের লুঙ্গি কত শক্ত করে বাঁধা ?

গীতার ৩/১৫ নং শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে নির্মল বলেছে- "কর্ম উৎপন্ন হয় বেদ হইতে আর বেদ উৎপন্ন হয় অক্ষর ব্রহ্ম হইতে।" এ আর আশ্চর্য কী, শুধু বেদ কেনো জগতের সমস্ত কিছুই তো পরমব্রহ্ম হতে উৎপন্ন। এই কথা তো বলেছে শ্রীকৃষ্ণই, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ বেদকে মানতে নিষেধ করেছেন, সেই কথা আমি বলতে পারি কিভাবে ?
এরপর নির্মল, গীতার ৪/৩১,৩২ নং শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে বলেছে-

"একমাত্র যজ্ঞ দ্বারাই সেই সনাতন ব্রহ্ম কে লাভ করা যায়, যারা যজ্ঞ করেনা তারা এই লোকেও সুখদায়ক তো হয়না, পরলোকে তো দূরের কথা। এই সমস্ত যজ্ঞের কথা (ব্রহ্মণো মুখে) বেদে কথন করা আছে। এই সমস্ত যজ্ঞ করলেই একমাত্র কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় ।"

কিন্তু এরপরের শ্লোকেই যে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "দ্রব্যময় যজ্ঞ হইতে জ্ঞানযজ্ঞ শ্রেয়। কেননা সর্বকর্ম জ্ঞানের বিকাশে শেষ হইয়া যায়-(৪/৩৩)", সেটা আর্যদের চোখে পড়ে না।

এখানে জ্ঞানযজ্ঞ বলতে গীতার অধ্যয়ন বা পঠন পাঠনকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু তাই বলে শ্রীকৃষ্ণ দ্রব্যময় যজ্ঞ করতে নিষেধ করেন নি, তিনি দ্রব্যময় যজ্ঞের চেয়ে জ্ঞানযজ্ঞ শ্রেষ্ঠ বলে দ্রব্যময় য়জ্ঞ করতে নিরুৎসাহিত করেছেন মাত্র। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যই মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি কখনো এক স্তরের হবে না, কেউ হবে চুড়ান্ত লেভেলের জ্ঞানী, কেউ হবে মধ্যম লেভেলের জ্ঞানী, কেউ হবে স্বল্প জ্ঞানী, যারা চড়ুান্ত লেভেলের জ্ঞানী, তাদের জন্য জ্ঞানযজ্ঞ, আর যারা মধ্যম বা স্বল্পজ্ঞানী, তাদের জন্য দ্রব্যময় যজ্ঞ।

 

এরপর গীতার ৮/২৮ নং শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে নির্মল বলেছে, " বেদ পাঠ, যজ্ঞ, দান, তপস্যা আদির ফল দ্বারা সেই পরমস্থান কে প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ মোক্ষ লাভ হয় । "

এখানে বেদপাঠ, দান, তপস্যা ঠিক আছে, কিন্তু যজ্ঞ বলতে কি শ্রীকৃষ্ণ বেদোক্ত দ্রব্যময় যজ্ঞকে বুঝিয়েছেন ? শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন শুধু যজ্ঞের কথা, আর যেহেতু তিনি গীতার ৪/৩৩ নং শ্লোকে বলেছেন দ্রব্যময় যজ্ঞের চেয়ে জ্ঞানযজ্ঞ অর্থাৎ গীতাপাঠ শ্রেষ্ঠ, সেহেতু আমরা এখানে ধরেই নিতে পারি যে এই যজ্ঞ বলতে শ্রীকৃষ্ণ জ্ঞানযজ্ঞ বা গীতাপা্ঠকেই বুঝিয়েছেন, তার মানে শ্রীকৃষ্ণ এই শ্লোকে বলেছেন- বেদ পাঠ, যজ্ঞ (গীতাপাঠ), দান, তপস্যা আদির ফল দ্বারা সেই পরমস্থান কে প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ মোক্ষ লাভ হয় । অর্থাত শ্রীকৃষ্ণ বেদকে সনাতন ধর্মের ভিত্তিমূলে রেখে গীতা পাঠ এবং দান ও তপস্যার কথা বলেছেন। শুধু বেদ পাঠেই যদি মানুষের মোক্ষলাভ হতো এবং যজ্ঞ বলতে যদি শ্রীকৃষ্ণ বেদের যজ্ঞকেই বোঝাতো, তাহলে তিনি দান এবং তপস্যার কথা বলতেন না।
এরপর নির্মল গীতার ১৩/৪ নং শ্লোকের রেফারেন্স টেনে বলেছে- "এই ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞর জ্ঞান ঋষিগণ বৈদিক শাস্ত্রে বর্ননা করেছেন। ব্রহ্মসুত্রে তা বিশেষ ভাবে যুক্তি যুক্ত সিদ্ধান্ত সহকারে বর্নিত আছে।"

কিন্তু জগদীশচন্দ্র ঘোষের গীতা অনুযায়ী ১৩/৪ নং শ্লোকের প্রকৃত অর্থ হলো- "ঋষিগণ কর্তৃক নানা ছন্দে পৃথক পৃথক নানা প্রকারে এই ক্ষেত্র ক্ষেত্রজ্ঞ তত্ত্ব ব্যাখ্যাত হইয়াছে। ব্রহ্মসূত্রপদসমূহেও যুক্তিযুক্ত বিচারসহ নিঃসন্দিগ্ধরূপে এই বিষয় ব্যাখ্যাত হইয়াছে।"

খেয়াল করে দেখুন এই শ্লোকের অনুবাদে কিন্তু বেদ এর কোনো কথাই নেই, কিন্তু নির্মল তার অনুবাদে বেদকে টেনে এনে বলেছে-"এই ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞর জ্ঞান ঋষিগণ বৈদিক শাস্ত্রে বর্ননা করেছেন।" এ হলো- 'যাকে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা', এর বিপরীত, 'যাকে পছন্দ করি, তার সবই সুন্দর' এর মতো অবস্থা। এ প্রসঙ্গে নির্মল আরও বলেছে- 'কৃষ্ণ জী এখানে মহর্ষি ব্যাসজীর লিখা ব্রহ্মসূত্র অর্থাৎ বেদান্ত দর্শনের কথা বলেছে । কৃষ্ণের আবাল ভক্ত রা কি জীবনেও ব্রহ্মসূত্র ছুঁয়েও দেখেছে ? যদি দেখতো তাহলে কখনোই কৃষ্ণ কে ঈশ্বর বলে চিল্লাতেই পারতোনা।'

কৃষ্ণ যদি এখানে ব্রহ্মসূত্র বা বেদান্তদর্শনের কথাই বলে থাকেন, তাহলে আপনি এর মধ্যে বেদকে ঢোকালেন কেনো ? বেদ আর বেদান্ত দর্শন কি এক ? আপনার কথা মতোই ধরে নিলাম, কৃষ্ণের ভক্তরা বেদান্তদর্শন বা ব্রহ্মসূত্র কখনো ছুঁয়ে দেখে নি, কিন্তু সেই ব্রহ্মসূত্র বা বেদান্তদর্শনের জ্ঞান লাভ করে সেই জ্ঞানকে আপনারাই বা কেনো নিজেদের পাছার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন ? কেনো সেই বিষয়ে একাধিক প্রবন্ধ লিখে সাধারণ হিন্দুদেরকে তা জানান নি ? জ্ঞানার্জনের সার্থকতা তখনই, যখন তা অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয় বা সেই জ্ঞানে অন্যকে জ্ঞানী করে তোলা যায়। ব্রহ্মসূত্রের জ্ঞান লাভ করে, আজ পর্যন্ত কয়জনকে সেই জ্ঞানে জ্ঞানী করে তুলেছেন ? কিন্তু আমি একজন কৃষ্ণ ভক্ত, একথা জোর দিয়ে এবং অহঙ্কারের সাথে বলছি যে, ঈশ্বরের কৃপায়, আমার মধ্যে ধর্ম বিষয়ে যখন যে জ্ঞান সঞ্চিত হয়েছে, তখন তা আমি আমার মধ্যে পুষে না রেখে যত দ্রুত সম্ভব তা সাধারণ হিন্দুদেরকে জানানোর জন্য অনলাইনে প্রকাশ করে দিয়েছি। ব্রহ্মসূত্র বা বেদান্তদর্শনের উপর আজ পর্যন্ত কয়টি প্রবন্ধ লিখে তা সাধারণ হিন্দুদেরকে জানিয়েছেন, তা আপনার কাছে জানতে চাই।


এরপর নির্মল, গীতার ২/৪২-৪৪ শ্লোকের যে অর্থ করেছে, সেটার সাথে প্রকৃত অর্থের পার্থক্য বুঝলে না হেসে পারবেন না। গীতার এই সব শ্লোকের অর্থ নিজেদের পক্ষে আনতে এরা অর্থের বিকৃতি করতেও পিছপা হয় নি। মন মানসিকতায় এরা যে কতখানি অসৎ, এই অংশের আলোচনা থেকে আপনারা সেটা বুঝতে পারবেন। যা হোক, গীতার ২/৪২-৪৪ শ্লোকের অর্থ হিসেবে নির্মল লিখেছে,

"পদার্থঃ ( অবিপশ্চিতঃ) {বিপশ্চিত্ বলা হয় পন্ডিতদের আর যিনি বিপশ্চিত্ নয় তাকে বলা হয় 'অবিপশ্চিতঃ'} সেই অবিপশ্চিত ব্যক্তিগণ (বেদবাদরতাঃ) বেদ কে না বুঝে (যামিমাম্) এই বাণী কে (পুষ্পিতাম্) অর্থপাদরূপ কথন করে (ন,অন্যত্, অস্তি) বেদে অন্য কোনো পরমার্থের উপদেশ নেই (ইতি বাদিনঃ) এই প্রকার মানেন অর্থ্যাৎ বেদ কে না বুঝে অবিপশ্চিত পুরুষ রা অনেক প্রকারের অর্থাভাস করে ।।
#বৈদিক গীতা আর্যমুনি ভাষ্য
অর্থঃ এখানে সেই ব্যক্তিদের কথা বলা হয়েছে সে সমস্ত মূর্খ অবিবেকী ব্যক্তিগণ বেদ কে না বুঝে উল্টো পাল্টা অর্থাভাস করে । এই অধ্যায়ের ৪৩,৪৪ শ্লোকে এই সমস্ত অবিপশ্চিত কর্মের কথা বলেছে । এখানে কোথায় বলা হয়েছে বেদ কে মানা যাবেনা ?? "

কিন্তু জগদীশচন্দ্র ঘোষের গীতায় এই শ্লোকগুলোর অর্থ লিখা হয়েছে, এভাবে-

"হে পার্থ, অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিগণ বেদের কর্মকাণ্ডের স্বর্গফলাদি প্রকাশক প্রীতিকর বাক্যে অনুরক্ত, তাহারা বলে বেদোক্ত কাম্যকর্মাত্মক ধর্ম ভিন্ন আর কিছু ধর্ম নাই, তাহাদের চিত্ত কামনা কলুষিত, স্বর্গই তাহাদের পরম পুরুষার্থ, তাহারা ভোগৈশ্বর্য লাভের উপায়স্বরূপ বিবিধ ক্রিয়াকলাপের প্রশংসাসূচক আপাতমনোরম বেদবাক্য বলিয়া থাকে; এই সকল শ্রবণ রমণীয় বাক্য দ্বারা অপহৃতচিত্ত, ভোগৈশ্বর্যে আসক্ত ব্যক্তিগণের কার্যাকার্য নির্ণায়ক বুদ্ধি এক বিষয়ে স্থির থাকিতে পারে না( ঈশ্বরে একনিষ্ঠ হয় না)।"

যাদের কাছে জগদীশ ঘোষের গীতা আছে, তারা এই অংশটি বের করলে দেখতে পাবেন, সেখানে গীতার শ্লোকের সংস্কৃত শব্দগুলোর প্রত্যেকটির বাংলা অর্থ দেওয়া আছে, এই অনুবাদের ভিত্তিতে আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন নির্মল যে অনুবাদ দিয়েছে, সেটা কতখানি পক্ষপাতদুষ্ট। মুসলমানরা যেমন ইসলামকে পজিটিভ করে তুলে ধরার জন্য কোরানকে বিকৃতভাবে অনুবাদ করে, আর্যরাও তেমনি গীতার এই সব শ্লোকের অনুবাদ
নিজেদের পক্ষে আনার জন্য বিকৃতভাবে অনুবাদ করেছে।

নির্মলের দেওয়া গীতার ২/৪২-৪৪ শ্লোকের অনুবাদ এবং আমার দেওয়া জগদীশ ঘোষের গীতার অনুবাদ পাশাপাশি রেখে পড়ুন, বুঝতে পারবেন, নির্মল যা বলেছে, গীতার ঐসব শ্লোকের অুনবাদ মোটেই তা নয়।
গীতার ২/৪২-৪৪ নং শ্লোক পড়লে, সাধারণদৃষ্টিতে মনে হবে শ্রীকৃষ্ণ এখানে বেদ বিরোধী কথাবার্তা বলেছেন, কিন্তু একটু গভীরদৃষ্টিতে বিবেচনা করলে বোঝা যাবে, শ্রীকৃষ্ণ আসলে এখানে, অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা বেদ সম্পর্কে যা ভাবে, সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন এবং এখানে আর্যরা বেদ সম্পর্কে যা ভাবে, সেই বিষয়টিই আসলে শ্রীকৃষ্ণ তুলে ধরেছেন।

এই প্রসঙ্গের আলোচনার শেষে নির্মল বলেছে- " মূর্খ অনেক প্রকারের দেখা যায় যেমন- মুসলিম, খ্রিস্টান, চার্বাক, জৈন,কবীর পন্থী কিন্তু পৌরাণিক আবাল হিন্দুদের মতো মূর্খ এই দুনিয়ায় আর নেই ।"

প্রকৃত মূর্খ যে কে বা কারা, সেটা কি এই প্রবন্ধ থেকে বা গীতার ২/৪২-৪৪ শ্লোকের আলোচনায় তা প্রমাণিত হয় নি ?

এরপর নির্মল বলেছে- " কৃষ্ণ কে অপমান করা আমার উদ্দেশ্য নয় কেননা যোগীরাজ কৃষ্ণ কে আমি শ্রদ্ধা করি 🙏🙏 । কিন্তু আপনারা যদি কৃষ্ণ কে ঘুরে ফিরে কৃষ্ণ কে ঈশ্বর বানিয়ে চালাতে জান তাহলে আমি কৃষ্ণ কে কুরআনের আল্লাহর সাথে তুলনা করবো, এবং কৃষ্ণ কে আল্লাহর মতো মূর্খও বানাতে পারবো ! দেখবেন আবাল কৃষ্ণ ভক্তগণ ? ঠিক আছে দেখুন---"

আপনি নিজেই বলেছেন, কৃষ্ণকে অপমান করা আমার উদ্দেশ্য নয়, কিন্তু কৃষ্ণভক্তরা যদি কৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে প্রচার করে, তাহলে কৃষ্ণকে আপনি মূর্খ হিসেবে প্রমাণ করবেন।

আমি চৈতন্যদেবের সমালোচনা করি, চৈতন্যদেবের প্রকৃত অবস্থান মানুষকে বোঝানোর জন্য, তাকে অপমান করার জন্য বা তাকে তার প্রকৃত অবস্থান থেকে টেনে নিচে নামানোর জন্য নয়। চৈতন্যদেবের এই সমালোচনা আসলে চৈতন্যদেবের প্রতি আমার বিদ্বেষ নয়, চৈতন্যদেব সম্পর্কে মানুষকে প্রকৃত সত্য জানানো। কিন্তু আপনি বলেছেন, কৃষ্ণকে আপনি মূর্খ প্রমাণ করবেন, আবার বলেছেন, কৃষ্ণকে অপমান করা আপনার উদ্দেশ্য নয়। আপনার মাথা ঠিক আছে তো ? যদি কৃষ্ণের চরিত্রে কোনো কলঙ্ক না থাকে, তাহলে কৃষ্ণের চরিত্রে আপনি কিভাবে কলঙ্ক লাগাবেন ? কৃষ্ণের চরিত্রে আপনি জোর করে কলঙ্ক লাগাবেন, এর মানে হচ্ছে আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা বলবেন। আপনি বলেছেন, কৃষ্ণকে অপমান করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আসলে শুধু আপনি কেনো, জগতের কারো পক্ষেই কৃষ্ণকে অপমান করা সম্ভব নয়। কৃষ্ণ সম্পর্কে কেউ কোনো কটূক্তি করলে, সে সত্য বলে তা পারবে না, বলতে হবে মিথ্যা বলে এবং আপনি যে সেটা পারেন, সেটা তো আপনি গীতার ২/৪২-৪৪ শ্লোকের অনুবাদেই তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।

এরপর নির্মল, গীতার ১৮/৪৬ নং শ্লোকের অনুবাদ হিসেবে বলেছে, "যে পরমেশ্বর ভগবান থেকে সমস্ত জীবের উৎপত্তি, যিনি এই সমগ্র বিশ্বে ব্যপ্ত আছেন, তাকে মানুষ তার কর্মের দ্বারা অর্চনা করে সিদ্ধি লাভ করে।"
কিন্তু জগদীশ ঘোষের গীতা অনুযায়ী এই শ্লোকের অর্থ- যাহা হইতে ভূতসমূহের উতপত্তি বা জীবের কর্মচেষ্টা, যিনি এই চরাচর ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া আছেন, মানব নিজ কর্ম দ্বারা তাঁহার অর্চনা করিয়া সিদ্ধি লাভ করিয়া থাকে।
খেয়াল করে দেখুন এই শ্লোকের মধ্যে পরমেশ্বর ভগবান বলে কোনো শব্দ নেই, কিন্তু নির্মল তার অনুবাদে পরমেশ্বর ভগবান শব্দগুচ্ছটি ঢুকিয়েছে। এই অুনবাদের ক্ষেত্রে যদিও এটি গুরুতর অপরাধ নয়; কারণ, পরোক্ষভাবে এখানে পরমেশ্বর ভগবানের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে- সংস্কৃত শ্লোকে যে শব্দটি নেই, সেই শব্দটি অনুবাদে ঢুকিয়ে লঘুতর অপরাধ করারই বা দরকার কী ? নাকি এটা মিথ্যাচার করার ফলে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ?


এরপর নির্মল ১৮৫/৬২ নং শ্লোকের রেফারেন্স দিয়েছে, যেখানে বলা আছে-

"হে ভারত সর্বত ভাবে তুমি সেই পরমেশ্বর শরনাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরাশক্তি লাভ করবে এবং তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে।"

যা হোক, এরকম দুচারটি শ্লোক, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ পরোক্ষভাবে নিজেকে বুঝিয়েছেন, সেই রকম দুচারটি শ্লোককে বিবেচনায় নিলে মনে হবে শ্রীকৃষ্ণ এখানে ঈশ্বর হিসেবে অন্য কারো কথা বলেছেন। আসলে শুধু এইরকম দু একটি শ্লোককে বিবেচনায় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো- শুধু সমুদ্রের উপরটা দেখে সমগ্র সমুদ্র সম্পর্কে মন্তব্য করা। কিন্তু সমগ্র সমুদ্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে সমুদ্রের গভীরেও ডুব দেওয়া প্রয়োজন, এবার আপনাদেরকে নিয়ে ডুব দিচ্ছি সমুদ্রের সেই গভীরে-

প্রবন্ধটি বড় হয়ে যাচ্ছে বলে গীতার সেই শ্লোকগুলো উল্লেখ করছি না, শুধু অর্থগুলো উল্লেখ করছি, আমার কথায় সন্দেহ থাকলে আপনারা গীতা খুলে দেখে নিতে পারেন।

গীতার ১৮/৪৬ এর ঐ কথা বলার পর শ্রীকৃষ্ণ ১৮/৫৪-৫৮ নং শ্লোকে বলেছেন,

"ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত হইলে তিনি প্রসন্নচিত্ত হইয়া শোক করেন না বা আকাঙ্ক্ষাও করেন না। তিনি সর্বভূতে সমদর্শী হন এবং আমাতে পরাভক্তি লাভ করেন। এইরূপ পরাভক্তি দ্বারা আমাকে স্বরূপত জানিত পারেন, বুঝিতে পারেন, আমি কে, আমার কত বিভাব, আমার সমগ্র স্বরূপ কী ? এবং এইরূপে আমাকে স্বরূপত জানিয়া তদনন্তর আমাতে প্রবেশ করেন। তিনি আমাকে আশ্রয় করিয়া সর্বদা কর্ম করিতে থাকিলে আমার প্রসাদে শাশ্বত অব্যয় পদ প্রাপ্ত হন। মনে মনে সমস্ত কর্ম আমাতে সমর্পণ করিয়া, মতপরায়ন হইয়া, সাম্যবুদ্ধির যোগ অবলম্বন করিয়া, সর্বদা আমাতে চিত্ত রাখ এবং যথাধিকার কর্ম করিতে থাক। আমাতে চিত্ত রাখিলে তুমি আমার অনুগ্রহে সমস্ত সঙ্কট অর্থাত কর্মের শুভাশুভ ফল অতিক্রম করিতে পারিবে। আর যদি আমার কথা না শোন তবে বিনাশ প্রাপ্ত হইবে।"
নির্মলসহ সকল আর্যদের বলছি, আপনারা গীতার শ্লোকে দিয়ে রেফারেন্স দেন, আমিও গীতার শ্লোক দিয়েই রেফারেন্স দিয়ে বলছি, গীতার ১৮/৪৬ এবং ১৮/৬২ নং শ্লোকে যে ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে, গীতার ১৮/৫৪-৫৮ নং শ্লোকে কি প্রমাণ হয় না যে সেই ব্রহ্ম বা ঈশ্বরই হলেন শ্রীকৃষ্ণ ?

এরপর নির্মল গীতার ১৩/১৩ নং শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে বলেছে-

" 'তার হস্ত পদ চক্ষু ও কর্ন মস্তক ও মুখ সর্বত ব্যপ্ত এই ভাবে তিনি সকলকেই আবৃত করে বিরাজমান।'
#এই শ্লোকেও কৃষ্ণ কোন ঈশ্বরের উদ্দেশ্য বলেছে ? এই 'তার' টি কে ? কি গো কৃষ্ণ ভক্তগণ উত্তর দেবেন নাকি গর্তে ঢুকবেন ? "

কৃষ্ণ ভক্তরা কখনো গর্তে ঢুকে না, বুক ফুলিয়ে সাহসের সঙ্গে প্রশ্নকে মোকাবেলা করে; কারণ, কৃষ্ণভক্তরা সব সময় সত্যের সঙ্গে বসবাস করে, যার প্রমান আমার এই প্রবন্ধ। যা হোক, এখানে ঈশ্বর সম্পর্কে বলা হয়েছে- "সর্বদিকে তাহার হস্তপদ, সর্বদিকে তাহার চক্ষু, মস্তক ও মুখ, সর্বদিকে তাহার কর্ণ; এই রূপে এই লোকে সমস্ত পদার্থ ব্যাপিয়া তিনি অবস্থিত আছেন।" আর্যরা বিশ্বাস করে ঈশ্বর বা ব্রহ্ম নিরাকার এবং তিনি কোনোভাবেই আকার নিতে পারেন না। তাহলে সেই নিরাকার ঈশ্বরের হাত, পা চোখ, মুখ আসছে কোথা থেকে ? এই শ্লোক প্রসঙ্গে আমার ব্যাখ্যা হলো- শ্রীকৃষ্ণ যেমন জন্ম নিয়েও বলেন আমি জন্মরহিত, তার মানে শ্রীকৃ্ষ্ণের জন্মমৃত্যু সাধারণ জীবের জন্ম-মৃত্যুর মতো নয়; তেমনি শ্রীকৃষ্ণ এই শ্লোকে বলেছেন- হাত, পা চোখ, মুখসহ আকার নিয়েও তিনি নিরাকার, যে নিরাকারে তিনি সর্বত্র বিরাজমান।

এরপর নির্মল গীতার ১৩/১৪ নং শ্লোকের রেফারেন্স বলেছে-

" 'সেই পরমআত্মা সমস্ত ইন্দ্রিয়ের জ্ঞাতা হয়েও তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয় ইন্দ্রিয় রহিত । যদিও তিনি সকলের পালক তথাপি তিনি সম্পুর্ন অনাসক্ত নির্গুণ হয়েও সমস্ত গুনের ভোক্তা ।'

#এখানে কৃষ্ণ নিজেই বলেছে পরমাত্মা কোনো ইন্দ্রিয় নেই, সে ইন্দ্রিয় রহিত। এইবার কৃষ্ণ ভক্তদের প্রশ্ন করছি যে কৃষ্ণের কি ইন্দ্রিয় ছিলোনা ? এখানে স্পষ্ট ভাবে বলেছে ঈশ্বর এর ইন্দ্রিয় নেই । এই শ্লোকেও পরমাত্মা কে কৃষ্ণ নিজেই 'তিনি' বলে কথন করেছে।"

-শ্রীকৃষ্ণ যে এখানে "তিনি" বলতে যে নিজেকেই বুঝিয়েছেন তার প্রমাণ আছে গীতার ১৩/১২ এবং ১৩/১৮ নং শ্লোকেই।

গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায়ের ৭ থেকে ১৮ নং শ্লোক পর্যন্ত জ্ঞান ও জ্ঞেয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে জ্ঞান মানে জানা এবং জ্ঞেয় মানে জানার বিষয়। ১৩/১২ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, " যাহা জ্ঞাতব্য বস্তু, যাহা হইতে অমৃত অর্থাত মোক্ষ লাভ করা যায়, তাহা অদ্যান্তহীন আমার নির্বিশেষ স্বরূপ ব্রহ্ম।" এবং ১৩/১৮ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, " এই প্রকারে ক্ষেত্র, জ্ঞান ও জ্ঞেয় কাহাকে বলে সংক্ষেপে কথিত হইল। আমার ভক্ত ইহা জানিয়া আমার ভাব বা স্বরূপ বুঝিতে পারেন।"

খেয়াল করুন, এখানে বলা হয়েছে- "আমার ভক্ত ইহা জানিয়া আমার ভাব বা স্বরূপ বুঝিতে পারেন।" এখানে কি শ্রীকৃষ্ণ উপরোল্লিখিত 'তিনি', 'তার' শব্দ দ্বারা নিজেকে বোঝান নি ? ত্রয়োদশ অধ্যায়ের সমস্ত জায়গায় কৃষ্ণ যে তিনি বা তার বলে পরমাত্মা বা পরমব্রহ্মকে বুঝিয়েছেন, সেই পরমাত্মা বা পরমব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণ আসলে নিজেই, সেটা গীতার ১৩/১২ এবং ১৩/১৮ নং শ্লোক দ্বারাই প্রমাণিত। গীতার বাণীর মর্ম এবং শ্রীকৃষ্ণের জীবনী ও কর্ম না বুঝে যারা শ্রীকৃষ্ণকে মানসিক রোগী বলে, মানসিক রোগী আসলে তারাই।

এরপর নির্মল আর্য শব্দ নিয়ে বেশ গর্ব করেছে এবং অনার্য শব্দের অর্থ করেছে- আনাড়ি, মূর্খ অজ্ঞানী। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সংষ্কৃত ভাষায় ‘আর্য’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল সদবংশজাত বা অভিজাত মানুষ। যারা তাদের কর্তব্য কর্ম সঠিকভাবে করে। একজন ক্ষত্রিয় হিসেবে অর্জুনের কর্তব্যকর্ম হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা, মোহগ্রস্থ হয়ে অর্জুন যুদ্ধ করতে অস্বীকার করলে শ্রীকৃষ্ণ তাকে অনার্য বলেছে। এর মানে এই নয় যে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আনাড়ি, মূর্খ, অজ্ঞানী বলেছে; যদি তাই মনে করতো, তাহলে অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ, গীতারর মতো মহান জ্ঞান দিতো না।

যা হোক, নির্মলের পড়াশুনা কোন বিষয়ের উপর সেটা আমি জানি না, যদি তার পড়াশোনা বাংলা সাহিত্যের উপর হতো, তাহলে সে নিশ্চয় জানতো যে- নানাভাবে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে, একারণে শুরুতে শব্দের অর্থ যা হয়, অনেক শব্দের ক্ষেত্রে পরে সেটা আর থাকে না। শব্দের এই অর্থের পরিবর্তন, অনেক সময় শব্দের ধারক বাহক জাতির কর্মকাণ্ডের উপরও নির্ভর করে; যেমন- 'ফাজিল' একটি আরবি শব্দ, এর অর্থ স্নাতক বা বি.এ লেভেলের ডিগ্রী। কিন্তু মুসলমানদের, বিশেষ করে মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষিতদের মুসলমানদের আচরণে এই শব্দটির অর্থ এতটাই নীচে নেমে গেছে যে, বর্তমানে ফাজিল একটি গালি হিসেবে ব্যবহার হয়, বর্তমানে ফাজিল বলতে কেউ শিক্ষিত মুসলমানকে বোঝায় না, ফাজিল মানেই হলো বদমাশ শ্রেণির লোক।

হিন্দুদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্তমানে ঋষি নামে একটি সম্প্রদায় আছে। এরা প্রকৃত পক্ষেই কোনো না কোনো ঋষির বংশধর, তাই এরা ঋষি নামে এবং এদের পাড়া ঋষিপাড়া নামে খ্যাত। ঋষি তাদেরকেই বলা হতো, যাদের মাধ্যমে বেদের মন্ত্র রচিত হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে ঋষি পাড়ার লোকজনের নিম্নস্তরের চিন্তাভাবনা এবং নিম্ন মানের কর্ম বেছে নেওয়ার ফলে ঋষিরা হিন্দু সমাজের একেবারে নিচুস্তরে নেমে গেছে, ঋষি শব্দের এই ভাবে অবনমন ঘটেছে।

আগেই বলেছি, আর্য শব্দের অর্থ অভিজাত বা সদ্বংশজাত মানুষ। বৈদিক সভ্যতার সকল মানুষ এই শ্রেণির ছিলো বলেই তাদেরকে আর্য নামে ডাকা হতো। কালের বিবর্তনে আর্য শব্দটির ব্যবহার সংকুচিত হয় এবং তার স্থলে হিন্দু শব্দটি ব্যবহার হতে থাকে; সুতরাং হিন্দু শব্দটি আর্য শব্দের সমার্থক। বর্তমানে হিন্দু বলতেই চরিত্রবান, প্রতিজ্ঞা রক্ষাকারী, দায়িত্ববান ও বিশ্বস্ত জনগোষ্ঠীকে বোঝায়; যেমন- মুসলমান বলতেই বোঝায়- লম্পট, ধর্ষক, সন্ত্রাসী, ওয়াদা ভঙ্গকারী ও ফাঁকিবাজ জনগোষ্ঠীকে।

সনাতনী সমাজ, যার বর্তমান প্রচলিত নাম হিন্দু সমাজ, তাতে নানা মতের ও নানা গোষ্ঠীর লোক বিদ্যমান। লোকনাথ, রামকৃষ্ণ, অনুকূল, প্রণবানন্দ, জগদ্বন্ধু সনাতন ধর্ম থেকে পৃথক আলাদা কোনো মতবাদ সৃষ্টি করতে না পারলেও, এই ক্ষেত্রে চৈতন্যদেব অনেকটাই সফল, তার প্রবর্তিত মতবাদের নাম বৈষ্ণব মতবাদ এবং তার অনুসারীরা বৈষ্ণব নামে পরিচিত এবং যাদের কালচার, সনাতনীদের থেকে অনেকটাই আলাদা। চৈতন্যদেবের অনুসারীদেরকে যেমন বলে বৈষ্ণব, তেমনি দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারীদেরকে বর্তমানে বলে আর্য, এই ভাবে আর্য শব্দটির অর্থ সংকুচিত হয়ে বর্তমানে ক্ষুদ্র পরিসরে আটকে আছে। তাই বর্তমানে আর্য বলতে, কোনোভাবেই সমগ্র হিন্দুসমাজ, যারা বৈদিক আর্য সমাজের প্রতিনিধি, তাদেরকে বোঝায় না। কিন্তু গীতায় উল্লিখিত আর্য শব্দটি সমগ্র হিন্দুজাতিরই প্রতিনিধিত্ব করে, শুধুমাত্র দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারীদেরকে নয়। তাই আর্য শব্দটির ছায়ায় থেকে দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারীরা যে নিজেদেরকে স্পেশাল ভাবে, এটা আসলে ভিত্তিহীন এবং মূর্খের আত্মতৃপ্তি মাত্র।

যা হোক, আর্য ও হিন্দুর আলোচনা শেষে নির্মল বলেছে, "গীতার ২/২ এই শ্লোক টি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে আর্য, হিন্দু নিয়ে নয়, এই শ্লোক টি দেওয়ার উদ্দেশ্য এই যে এই শ্লোকে কৃষ্ণ অর্জুন কে প্রশ্ন করেছে যে - 'হে অর্জুন ! এই অসময়ে তোমার মধ্যে মোহ কোথা হইতে এলো' ? কৃষ্ণ ভক্তদের মতে কৃষ্ণ হলো সর্ব জ্ঞানী সব কিছুই জানে সর্ব ব্যাপক , তো কৃষ্ণ এই টুকু জানতে পারেনি যে অর্জুনের এই অসময়ে এত অকীর্তিকরম মোহ ভাব কোথায় থেকে ? কৃষ্ণ যে ঈশ্বরের যোগ ছাড়া কিছুই করতে পারবে না তার প্রমাণ এই শ্লোক ।"

ইঁদুর হয়ে হিমালয়ের উচ্চতা বা ওজন বিষয়ে মন্তব্য করতে গেলে যা হয়, নির্মলের আসলে সেই অবস্থা হয়েছে। শিক্ষকগণ, তার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে, এর মানে কি এটা যে সেই শিক্ষক, সেই বিষয়ে জানে না ? শিক্ষকেরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রশ্ন করে তাদের থেকে বিষয়টি জানার জন্য নয়, তাদেরকে বিষয়টি জানানোর জন্য। শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে প্রশ্ন করেছে,, এই সংকট সময়ে তোমার এই মোহভাব কোথা থেকে এলো ? এর মানে এটা নয় যে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মোহভাবের বিষয়টি জানে না। এই প্রশ্ন করার কারণ হলো- এর উত্তরে অর্জুন যা যা বলবে, শ্রীকৃষ্ণ আস্তে আস্তে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে অর্জুনের্ এই দুর্বলতাকে দূর করবে, যেটা শ্রীকৃষ্ণ করেছেন দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৭২টি শ্লোক জুড়ে। সমগ্র গীতা জুড়ে অর্জুন একের পর এক শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছে, আর শ্রীকৃষ্ণ সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে অর্জুনের দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে, যার শুরু হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের সেই প্রশ্নের মাধ্যমে। তাছাড়া যে কৃষ্ণ গীতার মধ্যে- "আমি, তুমি বা এই রাজারা যে ইতোপূর্বে ছিলাম না, তাহাও নহে, কিংবা ইহার পরেও যে সকলে থাকিব না তাহাও নহে"(২/১২) এবং " আমার ও তোমার বহুবার জন্ম হইয়া গিয়াছে, আমি সেই সবই জানি, তুমি তাহা জানো না"(৪/৫)- এই রকম কথা বলতে পারেন, সেই শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনের হৃদয় দৌর্বল্য কেনো ঘটেছে, সেটা জানে না, এটা একমাত্র মূর্খরাই ভাবতে পারে।

পোস্টের একেবারে শেষ অনুচ্ছেদে নির্মল বলেছে, আমি নাকি তার কোনো পোস্টের উত্তর দিতে পারি নি, অথচ আজ পর্যন্ত এমন কোনো আর্য বা মুসলমান নেই, যাদের সনাতন ধর্ম সম্পর্কে কোনো কটূক্তির জবাব আমি দিই নি। যুক্তি-তর্ক না বুঝলে আমার কোনো পোস্টকে কারো কাছে হাস্যকর মনেই হতে পারে, কিন্তু তাদের মর্দানি তখনই, যখন তারা আমার পোস্টের পয়েন্ট টু পয়েন্ট জবাব দিতে পারে, হাসতে হাসতে কারো লুঙ্গি খুলে গেলেই সে বা তারা জ্ঞানী হয় না জ্ঞানী তাদেরকেই বলে যারা কথার অর্থ বোঝে এবং সেই কথার যুক্তিসম্মত উত্তর দিতে পারে।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment