আর্যদের মিথ্যাচারের নমুনা ও জবাব :
আমিও আগেও বলেছি, আবারও বলছি- আর্য ও মুসলমাদের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই। মুসলমানরা যেমন এক কাল্পনিক আল্লায় বিশ্বাস করে, তেমনি আর্যরাও এক কাল্পনিক ব্রহ্মে বিশ্বাস করে। ঈশ্বর যে লোকশিক্ষার জন্য পৃথিবীতে আবির্ভূত হন, গীতার এই কথা তাদের মাথাতেই ঢোকে না বা তারা বিশ্বাস করতে পারে না, তাই গীতাকে তারা ঈশ্বরের বাণী হিসেবে মানে না, অথচ সেই গীতারই একটি শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে তারা এটা প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছে যে মূর্তিপূজা তামসিক! এদের কথা শুনলে তো কুত্তাও হাসবে।
যা হোক, নির্মল নামের এই আর্য, শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে যার চিন্তাভাবনা নির্মল নয়, মলে(গু) ভরা, সে তামসিক জ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে গীতার ১৮/২২ নং শ্লোকের অনুবাদ করেছে এই ভাবে,
"যে জ্ঞান একটি দেহে বা প্রতিমাতে, সম্পূর্ণ আত্মা বা ঈশ্বর এই পর্যন্তই, এরকম অভিনিবেশ করে, সেই অযৌক্তিক অযথার্থ ও তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে।"
মুসলমানদের সাথে আর্যদের আরেকটি মিল হলো- মুসলমানরা যেমন কারণে অকারণে বিনা দ্বিধায় মিথ্যা বলতে পারে, আর্যরাও তেমনি। না হলে গীতার একটি রেফারেন্স, যে গীতা প্রায় সকল হিন্দুর বাড়িতে থাকে, সেই গীতার শ্লোকের অনুবাদে নিজস্ব মতবাদ ঢোকানোর জন্য যা তা লিখে তা গীতার কথা বলে চালিয়ে দিতে পারে ?
আর্য মল, গীতার ১৮/২২ নং শ্লোকের অনুবাদে কী লিখেছে, তা একটু আগেই উল্লেখ করেছি, এখন দেখুন এই শ্লোকের অনুবাদে আসলেই কী বলা হয়েছে, এটি আমি 'শ্রী জগদীশ চন্দ্র ঘোষ' এর গীতা, যে গীতা আমার কাছে বিশুদ্ধতম বলে মনে হয়, সেই গীতা থেকে তুলে দিচ্ছি-
"যাহা প্রকৃত তত্ত্ব, তাহা না বুঝিয়া, ইহাই যাহা কিছু সমস্ত, এইরূপ বুদ্ধিতে কোনো একমাত্র বিষয়ে আসক্ত থাকে, সেই যুক্তিবিরুদ্ধ, অযথার্থ, তুচ্ছ জ্ঞানকে তামস জ্ঞান বলে।"
ইলা প্রকাশনীর ছোট একটি গীতাতেও এই শ্লোকের অর্থ লিখা রয়েছে এইভাবে-
"প্রকৃত তত্ত্ব কী, তাহা না জানিয়া, যে জ্ঞান দ্বারা কোনো একমাত্র বিষয়ে আসক্ত থাকে, সেই যুক্তিবিরুদ্ধ, অযথার্থ তুচ্ছ জ্ঞানকে তামস জ্ঞান বলে।"
-এই শ্লোকের মধ্যে কি দেহ, আত্মা, প্রতিমা, ঈশ্বর এই ধরণের কোনো শব্দ আছে ? নেই। এমনকি নির্মলের ফটোপোস্টেও এই শ্লোকটি হুবহু তুলে দেওয়া আছে, সেখানেও দেখুন তো দেহ, আত্মা, প্রতিমা, ঈশ্বর এই ধরণের কোনো শব্দের ইঙ্গিত আছে কি না ?
এরপর নির্মল, গীতার ৭/২০ নং শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে যা বলেছে তার সরল বাংলা হলো- কামনার দ্বারা বশীভূত হয়ে অবিবেকী ব্যক্তিগণ অন্য দেবতার পূজা করে থাকে। এই শ্লোকের অনুবাদে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হলো এর পরের কয়েকটি শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ কী বলেছেন, সেদিকে দৃষ্টি না দেওয়ায়।
৭/২০ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন, তার প্রকৃতরূপ হলো- সাধারণ মানুষ মোক্ষ বা মুক্তির জন্য আমার পূজা না করে সাংসারিক লাভের জন্য অন্যদেবতাদের পূজা করে থাকে।
কিন্তু সাধারণ মানুষের এই কর্মও যে শাস্ত্রবিরুদ্ধ নয়, সে কথাও তো শ্রীকৃষ্ণ এর পরের দুটি শ্লোকেই বলেছেন, এভাবে-
"যে ভক্ত, যে দেবতার পূজা করতে চায়, আমি সেই দেবতার প্রতি সেই ভক্তের অচলা ভক্তি সৃষ্টি করে দিই এবং সেই দেবতার কাছ থেকে সেই ভক্ত যা লাভ করে, তা আমিই প্রদান করি।" -(গীতা, ৭/২১,২২)
এখানে শ্রীকৃষ্ণ, সাধারণ মানুষ কর্তৃক অন্যদেবতার পূজাকে নিষিদ্ধ করেন নি, নিরুৎসাহিত করেছেন মাত্র। যেহেতু সাধারণ মানুষ তাদের অল্পবুদ্ধির কারণে শ্রীকৃষ্ণকে বাদ দিয়ে তাদের আরাধ্য দেবতাকেই সবকিছু মনে করে। সাধারণ মানুষ কর্তৃক দেবতাদের পূজা নিষিদ্ধ নয় বলেই শ্রীকৃষ্ণ, দেবতাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়াকে পূর্ণ করে থাকেন। ফলতঃ এই দু্টি শ্লোকের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ সাধারণ মানুষ কর্তৃক দেবতাদের পূজাকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন এ্জন্য্ যে- সকলের পক্ষে একজনমে তাকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বহু জন্মের পুন্যের ফলে মানুষ জ্ঞানী হয়ে জন্ম নেয়, আর জ্ঞানীরাই শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হয়, আর কৃষ্ণভক্তরাই বহুজন্মের পরে শ্রীকৃষ্ণই সবকিছু, এটা উপলব্ধি করতে পারে এবং এই ধরণের ব্যক্তি জগতে দুর্লভ। যে কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন গীতার ৭/১৯ নং শ্লোকে এভাবে-
"বহূনাং জন্মনামন্তে জ্ঞানবান্মাং প্রপ্রদ্যতে।
বাসুদেবঃ সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ।।"
এর অর্থ- জ্ঞানী ভক্ত অনেক জন্মের পর বাসুদেবই সমস্ত এই রূপ জ্ঞান লাভ করিয়া আমাকে প্রাপ্ত হন। এইরূপ মাহাত্মা জগতে অতি দুর্লভ।
সুতরাং দেব-দেবীর পূজা মানেই যে চুড়ান্ত তামসিক ব্যাপার, এমনটা নয়; সবার পক্ষে যেমন প্রধানমন্ত্রীর দেখা পাওয়া বা তার সাথে সরাসরি কথা বলা সম্ভব নয়, তার জন্য বিশেষ জ্ঞান বা যোগ্যতা অর্জন করতে হয়; তেমনি সবার পক্ষে শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করাও সম্ভব নয়, শ্রীকষ্ণকে উপলব্ধি করতে গেলেও বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে হয়। গ্রামের সাধারণ লোকজন যেমন তাদের চেনা জানা পাতি নেতা বা নেতার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ভক্ত বা প্রধানমন্ত্রীর গুনগান গায়, তেমনি সাধারণ লোকজনও নানা দেব-দেবীর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে শ্রীকৃষ্ণেরই আরাধনা বা পূজা করে, কিন্তু এইভাবে শ্রীকৃষ্ণের কাছে পৌঁছতে বা তাকে পেতে অনেক সময় লাগে, সেটা কয়েক জন্ম থেকে বহ জন্ম পর্যন্ত সময় হতে পারে। কোনো মানুষ যাতে বৃথা জন্ম থেকে জন্মান্তর ধরে এই কষ্ট না করে, সেজন্য শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৭/২০ নং শ্লোকে অন্য দেবতার পূজা না করে তাকেই পূজা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুতরাং ঈশ্বরের স্বরূপ সম্পর্কে আর্যদের উপলব্ধি যে সঠিক নয় এবং গীতার শ্লোকের যে ব্যাখ্যা তারা করে, সেটাও যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আশা করছি, সেই বিষয়টি এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমার বন্ধুদের কাছে ক্লিয়ার করতে পেরেছি।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:
Post a Comment