Saturday 15 August 2020

ভারত ভাগের মূল উদ্যোক্তা গান্ধী :


ভারত ভাগের মূল উদ্যোক্তা গান্ধী :

ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত জিন্নার প্রিয় কাজ ছিলো জলের মতো মদ খাওয়া। জীবনে নামাজ-রোযা করেছেন কি না সন্দেহ। শুকরের মাংস ছিলো তার প্রিয় খাদ্য। ভারতের মুসলমানদের জিন্না যথেষ্টই ঘৃণা করতো। তবু তার জ্ঞান-বুদ্ধির কারণে, মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি- পাকিস্তান-এর স্বপ্ন দেখা রহমত আলী, ১৯৩৩ সালে, জিন্নাকে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের জন্য আন্দোলন করার প্রস্তাব দিলে, জিন্না তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলো, "এটি একটি অসম্ভব স্বপ্ন।" কিন্তু রহমত কোরান খুলে জিন্নাহকে দেখিয়ে বলেছিলো, এ অসম্ভব নয়, সম্ভব। মুসলমানদের জাগিয়ে পাকিস্তান আদায়ের জন্য সব রকম উপাদান কোরানের মধ্যে রয়েছে।" জিন্না বিষয়টি নিয়ে ভাবতে লাগলো এবং কোরানের তত্ত্ব জিন্নাকে এমনই প্রভাবিত করলো যে, পাকিস্তানের স্বপ্নে বিভোর জিন্না কয়েক বছর পরেই বলে ফেললো, "কয়েক শতক আগে যেদিন প্রথম হিন্দুটি ইসলামে ধর্মন্তরিত হয়েছিলো, সেদিনই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে।" অর্থাৎ জিন্নার মতে পাকিস্তান রাষ্ট্র অলরেডি সৃষ্টি হয়েই আছে, এখন তা বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪০ সালে ২৩ মার্চ, লাহোর প্রস্তাবে জিন্না বললো, "ভারতবর্ষের সমস্যা সম্প্রদায়গত নয়, বরং জাতিগত। এটা খুবই দুঃখের যে হিন্দুরা, ইসলাম ও হিন্দুত্বের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারছেন না। ইসলাম এবং হিন্দুত্ব শুধুমাত্র আলাদা ধর্ম নয়, সম্পূর্ণ বিপরীত দুই জাতিসত্ত্বা। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, হিন্দু ও মুসলমানরা দুটি পৃথক ইতিহাস থেকে প্রেরণা পায়। এদের একজনের মহাপুরুষ, অন্যজনের শত্রু। মুসলমানরা সংখ্যালঘু নয়। মুসলমান একটা আলাদা জাতি। জাতি গঠনের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান তাদের আছে। তাই তাদের অবশ্যই নিজের বাসভূমির অধিকার আছে।" (ভিপি মেনন, ট্রান্সফার অব পাওয়ার, পৃষ্ঠা-৮২) 

ঠিক এর ১০ দিন পর, ১৯৪০ সালের ৬ এপ্রিল, গান্ধী, মুসলিম লীগের দাবিকে সমর্থন করে হরিজন পত্রিকায় লিখলো, "দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো মুসলমানদেরও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে। বর্তমানে আমরা একটা যৌথ পরিবারের মতোই বসবাস করছি। তাই এর কোনো এক শরিক ভিন্ন হতে চাইতেই পারে।" 

মূলত এই দুটি ঘটনাতে ১৯৪০ সালেই ভারত ভাগ হয়ে গিয়েছিলো; ১৯৪৭ সালে তা শুধু বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র। 

মুসলমানরা যাতে পাকিস্তানের দাবীকে ভুলে না যায়, সেজন্যই হয়তো ১৯৪২ সালের ১৮ এপ্রিল, গান্ধী, হরিজন পত্রিকায় আবার লিখলো, "যদি ভারতের বেশির ভাগ মুসলমান এই মত পোষণ করে যে, মুসলমানরা একটা আলাদা জাতি, যাদের সঙ্গে হিন্দু ও অন্যান্য গোষ্ঠীর মিল নেই, তবে পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি নেই যে সেই চিন্তা ভাবনা থেকে তাদের বিরত করতে পারে এবং সেই ভিত্তিতে তারা যদি বেশির ভাগ চায়, তবে অবশ্যই দেশভাগ করতে হবে। তবে ইচ্ছা করলে হিন্দুরা তার বিরোধিতা করতে পারে।"

জিন্না দেখলো, তার দাবীর তেমন কোনো বিরোধিতা হিন্দুদের মধ্যে নেই, বরং হিন্দুদের প্রধান নেতা গান্ধীর, তার দাবীর ব্যাপারে যথেষ্ট অনুমোদনও রয়েছে।

এরপর ১৯৪৪ সালে জিন্নার সাথে গান্ধীর বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়। গান্ধী, জিন্নাহকে বলে, "আমি আপনার বা ইসলামের শত্রু নই। আমি আপনাদের দীন সেবক মাত্র। আমাকে দয়া করে ফিরিয়ে দেবেন না।" গান্ধীর এই অসহায় আত্মসমর্পনে উৎফুল্ল জিন্না পাকিস্তান আদায়ের প্ল্যান তৈরি করে ফেলে। কারণ, জিন্না বুঝেছিলো, শুধু মুখে বলে কিছু আদায় হবে না, এর জন্য এ্যাকশনে যেতে হবে। তাই ১৯৪৬ সালের ২৮ জুলাই বোম্বেতে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের জাতীয় সভায়, ১৬ আগস্টকে জিন্না, "ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে" বা "প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে। এই সভায় জিন্না বলে, "পাকিস্তান বাদ দিয়ে অন্য কিছুর সাথেই মুসলমান জাতি কোনো প্রকার আপোষ করবে না। এখন সময় হয়েছে, সেই দাবী আদায়ে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার। আমরা আজ একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সব সময়ই আমরা নিয়মতান্ত্রিক পথেই দাবী জানিয়ে এসেছি। কিন্তু আজ সময় এসেছে সেই নিয়মতান্ত্রিক পথকে বিদায় জানাবার।...আজ আমাদের কাছে একটি পিস্তল আছে এবং আমরা তা ব্যবহার করতে সমর্থ।" ( পীরজাদা, ফাউন্ডেশন অব পাকিস্তান, পৃষ্ঠা-৫৬০)

শুরু হলো প্রস্তুতি:

১৯৪৬ সালে সমগ্র বাংলায় মুসলমান ছিলো ৫৫%, হিন্দু ৪৫%। তাই খুব সহজে কংগ্রেসকে হারিয়ে প্রাদেশিক নির্বাচনে জিতে বাংলার ক্ষমতা দখল করে মুসলিম লীগসোহরাওয়ার্দী বা সুরাবর্দী হয় মুসলিম সরকারের মূখ্যমন্ত্রী; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ছিলো তার হাতে। জিন্নার ডাইরেক্ট এ্যকশন ডে বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয় এই জল্লাদ। ২৮ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট, সময় খুব কম। তাই খুব দ্রুত পরিকল্পনামাফিক এগোতে থাকে সে। ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট, স্টেটসম্যান পত্রিকার এক নিবন্ধে সুরাবর্দী লিখে, "হিংসা এবং রক্তপাত অন্যায় নয়, যদি তা মহৎ উদ্দেশ্যে করা হয়। মুসলমানদের কাছে আজ পাকিস্তান আদায় ছাড়া অন্য কোনো প্রিয় কাজ নেই।"

এই দিনই খাজা নাজিমুদ্দিন, যে পরে পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হয়, সে মুসলিম ইনস্টিউটে, মুসলিম ন্যাশনাল গার্ডের এক সমাবেশে বলে, "মুসলিম লীগের এটা পরম সৌভাগ্য যে, এই রমজান মাসেই সংগ্রাম শুরু হবে। কারণ, এই রমজান মাসেই তো জিহাদের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ।"

এই ভাবে, গান্ধীর মৌনসম্মতিতে মুসলমানরা শুরু করে দেশ আদায়ের জিহাদ এবং অবশেষে ২০ লক্ষ হিন্দু ও শিখের প্রাণ এবং কমপক্ষে ১ লক্ষ হিন্দু ও শিখ নারীর সম্মানকে মুসলমানরা কেড়ে নিয়ে আদায় করে পাকিস্তান। গান্ধী নামক এই কুলাঙ্গারের যদি জন্ম না হতো বা নাথুরাম যদি একে আরো ১০ বছর আগে খুন করতে পারতো ভারত কোনো দিনই ভাগ হতো না।

জয় হিন্দ।

No comments:

Post a Comment