Sodkirti Das এর মিথ্যা প্রচারণার জবাব :
আমার একটি প্রবন্ধের জবাবে Sodkirti Das একটি প্রবন্ধ অনলাইনে ছেড়েছে, যার কিছু অংশ আমি এই প্রবন্ধের সাথে ফটো হিসেবে যুক্ত করে দিয়েছি, এই প্রবন্ধের প্রথমেই সে নিরামিষ আহারকে সাত্ত্বিক হিসেবে উল্লেখ করেছে, এই একটি তথ্যই প্রমাণ করে যে সে কত বড় মূর্খ; কারণ, সাত্ত্বিকতা মানুষের বৈশিষ্ট্য, খাবার দাবারের নয়। আমার এই কথার প্রমাণ আছে গীতার ১৭/৪ নং শ্লোকে, যেখানে বলা হয়েছে,
“যজন্তে সাত্ত্বিকা দেবান্ যক্ষরক্ষাংসি রাজসাঃ।
প্রেতান্ ভূতগণাংশ্চান্যে যজন্তে তামসা জনাঃ।।”
এর অর্থ- সাত্ত্বিক ব্যক্তিরা দেবতাদের পূজা করে, রাজসিক ব্যক্তিরা যক্ষ ও রাক্ষসদের পূজা করে এবং তামসিক ব্যক্তিরা ভূত ও প্রেতাত্মাদের পূজা করে।
অর্থাৎ এই শ্লোক দ্বারা প্রমাণিত যে- সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক দ্বারা ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়, কোনো খাদ্যদ্রব্যকে বোঝায় না। এই মূর্খকে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, যদি আপনি শাস্ত্র দ্বারা প্রমাণ করতে পারেন যে সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক দ্বারা খাবারের বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়, তাহলে আমি আপনার শিষ্যত্ব গ্রহণ করবো। আর যদি প্রমাণ করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে আমার শিষ্য হওয়ার শর্ত আমি দিচ্ছি না; কারণ, আপনার মতো মূর্খ ব্যক্তিকে আমি শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে চাই না। আমার শিষ্যরা হয় এবং হবে যুক্তিবাদী, আপনার মতো অন্ধবিশ্বাসী নয়।
এরপর সে কিছু বিখ্যাত ব্যক্তির নিরামিষ আহারের প্রসঙ্গ টেনে নিরামিষ আহারের ফলে যে শরীর দুর্বল হয়, সেই ব্যাপারকে টিটকারী করেছে। এই প্রসঙ্গে বলছি-
সুস্থ থাকা কাকে বলে জানেন ? শরীরে কোনো রোগ ব্যাধি না থাকা এবং রাস্তা দিয়ে জবুথবু হয়ে হেঁটে যাওয়াকে সুস্থ থাকা বলে না। শক্তসামর্থ্য দেহই সুস্থ দেহ। যারা বহু বছর যাবৎ নিরামিষ খায়, তারা গড়পড়তা দেড় মন ওজন মাটি থেকে নিজের ঘাড় বা মাথার উপর তুলতে পারবে না, আর কোনোরকমে তুলতে পারলেও বেশি দূর নিয়ে যেতে পারবে না, আর কিছু দূর নিয়ে গেলেও এমন হাঁপাতে লাগবে যে মনে হবে দম ফেল করে মারা যাবে। এটাকে আপনি সুস্থ থাকা বলেন ?
আপনি নিজেও তো তৃণভোজী, তো দেড় মন ওজন নিয়ে যা করতে বললাম, সেটা একটু করে দেখেন তো বা আপনার ইসকনিদেরকে একটু করতে বলেন তো, তারপর দেখবেন আপনি বা ওরা প্রকৃতপক্ষেই সুস্থ কি না ? আর আমার পূর্ণ যৌবনে আমি যখন দুই মন ওজনের ধানের বস্তা বাড়ি থেকে ঘাড়ে নিয়ে রাস্তা দিয়ে তা ভাঙানোর জন্য মিলে হেঁটে যেতাম, তখন লোকের মনে হতো ঘাড়ে করে আমি একটা মুড়ির বস্তা নিয়ে যাচ্ছি।
যা হোক, নিরামিষ খেলে আবার নাকি দীর্ঘজীবন পাওয়া যায়! শক্তিহীনতার কারণে যে জীবনের বেঁচে থাকারই কোনো নিশ্চয়তা নেই, তার নাকি আবার দীর্ঘজীবন ! শেয়ালের মতো ১০০ বছর বাঁচার চেয়ে সিংহের মতো ১ বছর বাঁচা অনেক গৌরবের, সেটা জানেন ? যৌবন বয়সে ১০ বছর লাগাতার যদি কোনো পুরুষ নিরামিষ খায়, তার যৌনশক্তি লুপ্ত হয়ে যাবে, সে আর তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না, তার স্ত্রী গোপনে হয় অন্য পুরুষের সাথ বিছানায় সময় কাটাবে, আর না হয় কোনো মুসলমানের সাথে পালিয়ে যাবে, সমাজে এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে, নিরামিষ খেকোদের এই জীবনকে আপনি জীবন বলেন ?
আমার পাড়ার এক কাকাতো ভাই, বিয়ের আগে থেকেই নিরামিষ খায়, বিয়ের পর তার স্ত্রীও তার সাথে নিরামিষ খেতে বাধ্য হয়। এদের এক পুত্র জন্মে, যে ১ বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে মারা যায়, তার দু তিন বছর আরেকটি পুত্র জন্মে, এক বছরের মাথায় সেও একইভাবে মারা যায়। সাধারণ অর্থে এদের মৃত্যুর কারণ কী জানেন ? দীর্ঘদিন নিরামিষ খাওয়ার ফলে ওদের ডিম্বানু ও শুক্রানু এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে, তার দ্বারা সন্তানের জন্ম হলেও সেই সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হচ্ছে, তাই সামান্য জ্বর সর্দিকেও প্রতিরোধ করতে পারছে না, দেহে সামান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকায় দেহে কোনো এ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করে নি, ফলে দুই দুই পুত্রসন্তান এক বছরের মাথায় মারা গেছে, এটাকে কি আপনি বেঁচে থাকা বলেন ?
নিরামিষ খেলেও যে জ্ঞানী হয়, তা প্রমাণ করার জন্য আপনি কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম দিয়েছেন, আপনি কি শিউর যে উনারা সত্যিই নিরামিষাসী ছিলেন ? এর রেফারেন্স হিসেবে আপনি নাম দিয়েছেন- "বিজ্ঞান সনাতন ধর্ম বিশ্বসভ্যতা" নামক একটি গ্রন্থের নাম দিয়েছেন, যেটা ইসকন কর্তৃক প্রকাশিত। এই বইয়ের যে ম্যাক্সিমাম তথ্য ভুল এবং মিথ্যা, সেটা কি আপনি জানেন ? এক বিজ্ঞানের ছাত্র এই বইটি পড়ে লিখেছে- এটি কুকুরের বিষ্ঠাকে অমৃতরূপে উপস্থাপনের অপচেষ্টা, এছাড়াও এই বইটি যে বলদের গু, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করে পড়তে পারেন এই প্রবন্ধটি-
https://thenewse.com/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%A8-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D/
যা হোক, যে বিখ্যাত ব্যক্তিদের আপনি লিস্ট দিয়েছেন তার মধ্যে আছে বুদ্ধদেবের নাম। বুদ্ধদেব যে নিরামিষভোজী ছিলেন, সে ব্যাপারে আপনি কি নিশ্চিত ? বুদ্ধদেব যদি নিরামিষভোজী হতেন, তাহলে তার অনুসারী বৌদ্ধরা নিরামিষ খায় না কেনো; যেমন খায় চৈতন্যের অনুসারীরা, চৈতন্য নিরামিষ খেতো বলে ? কোনো বৌদ্ধকে কখনো চিরকালীণ নিরামিষভোজী হতে দেখেছেন ? আপনি কি জানেন, বুদ্ধদেবের মৃত্যু হয়েছিলো শুকরের বাসি মাংস খেয়ে ? যে ব্যক্তি মাংস খেয়ে মরলো, তাকে আপনি বলছেন নিরামিষভোজী ! আপনারা এমন মিথ্যুক কেনো ? এই মিথ্যাচার করে আপনারা জগতের কোন কল্যান করবেন ?
যা হোক, আপনার লিস্টের মধ্যে নিরামিষভোজী হিসেবে আপনি লিখেছেন মাহাত্মাগান্ধীর নাম, হ্যাঁ, এই লোক মহান বৈষ্ণব ছিলেন, সেই একই কারণে ছিলেন মহান নপুংসক। এখানে নপুংসক মানে সন্তান জন্মদানে অক্ষম নয়, উল্টো বুঝবেন না, নপুংসক মানে অপদার্থ ব্যক্তি, যাদের দ্বারা কোনো উপকার হয় না, শুধু ক্ষতিই হয়। তো এই গান্ধীর কারণে ভারত তথা হিন্দুদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেই ইতিহাস আপনি জানেন ? এই হারামজাদার কারণে ভারত তার ৩০% ভূমি হারিয়েছে, এর কারণে ১৯৪৬-১৯৫০ সালের মধ্যে নিহত হয়েছে লক্ষ লক্ষ হিন্দু শিখ; ভারত ভাগের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর যে নির্যাতন চলছে, তার মূল কারণ এই পাপাত্মা গান্ধী, আর এই অপদার্থকে আপনি জ্ঞানী বলছেন ? আমি নিশ্চিত এই পাপাত্মা গান্ধী যদি নিরামিষ ভোজী না হতো, তাহলে ভারত তথা হিন্দুদের ইতিহাস আজ অন্য রকম হতো।
আপনি আপনার লিস্টে অনেক ব্যক্তিদের নাম দিয়েছেন নিরামিষ ভোজী হিসেবে, সবার কাহিনী এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়, তাই সর্বমোট তিনটি রেফারেন্স আলোচনা করে এই পোস্টে বুঝিয়ে দিলাম যে আপনার দেওয়া তথ্য কতখানি সত্য; কারণ, এটা কিন্তু চিরন্তন সত্য যে, যে একটি মিথ্যা তথ্য দিতে পারে বা বলতে পারে, সে কিন্তু হাজারটা মিথ্যা বলতে পারে। যা হোক, নিরামিষভোজীদের মধ্যে আপনি রেখেছেন ভারতবর্ষের সমস্ত মুনি ঋষিদের নাম, এখন দেখা যাক মুনি ঋষিরা সত্যিই নিরামিষ ভোজী ছিলেন কি না ?
রামায়ণে- বনবাসকালে রাম সীতা লক্ষ্মণ যে বিভিন্ন পশু হত্যা করে তাদের মাংস খেতেন, বাল্মীকি রামায়ণের বহু জায়গায় তা বলা আছে; শুধু যে রাম লক্ষ্মণ সীতা ই মাংস খেতেন, তাই নয়, খেতেন ভরতও, তার প্রমান আছে, রাজশেখর বসু অনূদিত বাল্মীকি রামায়ণের পৃষ্ঠা ১২৯ এ; সেখানে, রামের সাথে দেখা করে তাকে রাজ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ভরত বনের মধ্যে এলে, গুহ নামক একব্যক্তির জনপদের কাছে ভরত শিবির ফেলে বিশ্রামের জন্য, খবর এবং পরিচয় পেয়ে সেই গুহ, মৎস্য-মাংস-মধু উপহার নিয়ে ভরতের সাথ দেখা করতে যায়।
সেগুলো যদি না খাওয়া হয়, তাহলে সেগুলো উপহার নিয়ে যাবে কেনো ?
গুহ এর ওখান থেকে ভরত যায় ঋষি ভরদ্বাজের আশ্রমে, সেখানে ভরতের সাথের সকল সৈন্যসামন্তকে বলা হয়,
"সুরাং সুরাপাঃ পিবত পায়সং চ বুভূক্ষিতাঃ।
মাংসানি চ সুমেধ্যানি ভক্ষ্যন্তাং যো যদিচ্ছসি।।-(৯১/৫২)
এর অর্থ- “সূরাপায়ীগন সূরা পান করো, বুভূক্ষিতগণ পায়স ও সুসংস্কৃত মাংস যা ইচ্ছা হয় খাও” (পৃষ্ঠা-১৩২)।
অনেক কিছুর সাথে এখানে ভরতের লোকজনের আপ্যায়ণের জন্য ছিলো- ছাগ ও বরাহের মাংস, মৃগ, ময়ূর ও কুক্কুটের(মুরগী) মাংস (পৃষ্ঠা-১৩৩)।
এই তথ্যে এখানে পরিষ্কার যে, সেকালে ঋষিরাও মাংস খেতেন, কেউ নিরামিষভোজী ছিলেন না; কারণ, যে যা খায় না, সে তা অন্যদেরকে নিবেদন করতে পারে না। এই কারণেই নিরামিষভোজীরা মনে করে দেব-দেবীদের উদ্দেশ্যে কি মাছ মাংস নিবেদন করা সম্ভব, যেহেতু তারা মাছ মাংস খায় ? কিন্তু গীতায় যে বলা হয়েছে, 'তুমি যা কিছু আহার করো, তা আমাকে নিবেদন করো' (৯/২৭) এবং আমরা যখন- "ওঁ শ্রী জনার্দনায় নমঃ" বলে যা খাই, তা যে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যেই নিবেদিত হয়, সেটা ঐ সব তৃণভোজী ছাগলদের বোধে আসে না।
রামায়ণের পর এবার আসি মহাভারতের কাহিনীতে-
মহাভারতের সভাপর্ব, যে পর্বে যুধিষ্ঠির, ইন্দ্রপ্রস্থে রাজত্ব করাকালে রাজসূয় যজ্ঞ করেছিলো, সেই সময়ের খাবার-দাবারের বর্ণনাতে বলা হয়েছে-
"যুধিষ্ঠির ঘৃত ও মধু মিশ্রিত পায়স, ফলমূল, বরাহ ও হরিণের মাংস, তিল মিশ্রিত অন্ন প্রভূতি বিবিধ ভোজ্য দিয়ে দশ হাজার ব্রাহ্মণ ভোজন করালেন এবং তাদের উত্তম বসন, মাল্য ও বহু সহস্র গাভী দান করলেন। তারপর গীত বাদ্য সহকারে দেবপূজা ও বিগ্রহ স্থাপন করে সভায় প্রবেশ করলেন।… নানাদেশ থেকে আগত ঋষি ও নৃপতিদের সঙ্গে পাণ্ডবগণ সেই সভায় আনন্দে বাস করতে লাগলেন।"
এখানে লক্ষ্যণীয় যে ঋষিরাও কিন্তু বরাহ ও হরিণের মাংস খেতো।
এটা ছাড়াও খাবার-দাবারের আরেকটি বর্ণনা আছে মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের কন্যা উত্তরার সাথে অর্জুনের পুত্র অভিমন্যুর বিবাহের ঘটনায়, সেখানকার বর্ণনা এরকম-
"অর্জুনের প্রস্তাবে বিরাট সম্মত হলেন, যুধিষ্ঠিরও অনুমোদন করলেন। তারপর সকলে বিরাটরাজ্যের অন্তর্গত উপপ্লব্য নগরে গেলেন এবং আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে পাঠালেন। দ্বারকা থেকে কৃষ্ণ বলরাম কৃতবর্মা ও সাত্যকি, সুভদ্রা ও অভিমন্যুকে নিয়ে এলেন। ইন্দ্রসেন প্রভূতি ভৃত্যরাও পাণ্ডবদের রথ নিয়ে এল। এক অক্ষৌহিনী সৈন্যসহ দ্রুপদ রাজা, দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র, শিখণ্ডী ও ধৃষ্টদ্যুম্ন এলেন। মহাসমারোহে বিবাহের উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। শত শত মৃগ ও অন্যান্য পশু নিহত হলো।.. জনার্দন কৃষ্ণের সম্মুখে অভিমন্যু ও উত্তরার বিবাহ যথাবিধি সম্পন্ন হলো।"
এই দুটি ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে মহাভারত যুগের মানুষের খাদ্যাভ্যাস কেমন ছিলো এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত যে সেই সময় নিরামিষ খাবার বলে কিছু ছিলো না এবং পাণ্ডবরা ছিলো আমিষভোজী; আর সেই সাথে এটাও স্পষ্ট যে- উপরে বর্ণিত দুটি বড় ঘটনায় যেহেতু কৃষ্ণ উপস্থিত ছিলেন সেহেতু তিনিও সকলের মতো সকলের সাথে একই ধরণের খাবার খেয়েছেন, সুতরাং কৃষ্ণ নিরামিষ খান নি, তিনিও সকলের মতো আমিষ খাবারও খেয়েছেন। শুধু তাই নয়, কৃষ্ণ যে বনে পশু শিকারও করেছেন সেটাও আছে মহাভারতের আদি পর্বের সুভদ্রাহরণপর্বাধ্যায়ে, সেখানে বলা আছে,
"সৈন্যদল বেষ্টিত হয়ে যদুবীরগণের সঙ্গে কৃষ্ণ বলরাম নানাবিধ মহার্ঘ যৌতুক নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে এলেন। অনেক দিন আনন্দ যাপন করে সকলে ফিরে গেলেন, কেবল কৃষ্ণ রইলেন। তিনি যমুনা তীরে অর্জুনের সঙ্গে মৃগয়া করে মৃগ বরাহ মারতে লাগলেন।"
মহাভারতের আরেকটি ঘটনায়, বনপর্বের দুর্বাসার পারণ অধ্যায়ে ১০ হাজার শিষ্য নিয়ে ঋষি দুর্বাসা যুধিষ্ঠিরের পর্ণ কুটিরে উপস্থিত হয়ে ভোজন দাবী করেন, এই পাণ্ডবরা যে নিরামিষী ছিলো না সেটা তো আগের আলোচনাতেই প্রমাণিত হয়েছে। তো যারা নিরামিষভোজী নয়, তাদের গৃহে গিয়ে কি নিরঙ্কুশ নিরামিষভোজীরা নিরামিষ আহার পেতে পারে ? আর ঋষি দুর্বাসা যদি নিরামিষ ভোজীই হতেন, তাহলে তিনি কি আমিষভোজী পাণ্ডবদের কুটিরে গিয়ে ভোজন দাবী করতেন ?
শুধু তাই নয়, হস্তিনাপুরের রাজপ্রাসাদে যে আমিষ আহার চালু ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যায় নিচের এই তথ্যে-
মহাভারতের সভাপর্বের "ধৃতরাষ্ট্র-শকুনি-দুর্যোধন-সংবাদ" অধ্যায়ে ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধনকে বলছে-
"পুত্র, তোমার শোকের কারণ কী? মহৎ ঐশ্বর্য আর রাজচ্ছত্র তোমাকে আমি দিয়েছি, তোমার ভ্রাতা আর বন্ধুরা তোমার অহিত করেন না, তুমি উত্তম বসন পরছো, সমাংস অন্ন খাচ্ছো, উৎকৃষ্ট অশ্ব, মহার্ঘ শয্যা মনোরমা নারীবৃন্দ, উত্তম বাসগৃহ ও বিহারস্থানও তোমার আছে, তবে তুমি দীনের ন্যায় শোক করছো কেনো ?"
এখানে খেয়াল করুন, ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধনকে বলছে- "সমাংস অন্ন খাচ্ছো", তার মানে হস্তিনাপুরের রাজ পরিবারে মাংস খাওয়া ছিলো সাধারণ বিষয়।
কাম্যক বনে পাণ্ডবদের কাছে যাওয়ার আগে ঋষি দুর্বাসা এই দুর্যোধনের প্রাসাদেই কয়েকদিন ছিলেন এবং দুর্যোধনের পরামর্শেই মূলত যুধিষ্ঠিরকে বিপদে ফেলার জন্য ঋষি দুর্বাসা কাম্যক বনে গিয়ে যুধিষ্ঠিরের কাছে গিয়ে ভোজন দাবী করেন, তাহলে আমিষভোজী দুর্যোধনের কাছে কি ঋষি দুর্বাসা নিরামিষ খেতেন, না পেতেন ?
কাম্যক বনের ঐ ঘটনায় ১০ হাজার শিষ্য সহ ঋষি দুর্বাসার ভোজন প্রস্তুত সম্ভব নয় বলে এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য দ্রৌপদী কৃষ্ণকে স্মরণ করে, সাথে সাথে কৃষ্ণ, দ্রৌপদীর পর্ণকুটিরে উপস্থিত হয়ে নিজে ক্ষুধার্ত বলে কিছু ভোজন দাবী করে, এতে দ্রৌপদী বলে- আমি না খাওয়া পর্যন্ত কিছু অন্ন অবশিষ্ট থাকে, কিন্তু আমি তো খেয়ে ফেলেছি, কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। কৃষ্ণ বলে- দেখি তোমার পাত্র, সেখানে কিছু অবশিষ্ট আছে কি না। এরপর দেখে পাত্রে একটি ভাত অবশিষ্ট আছে, কৃষ্ণ সেটাই খেয়ে তৃপ্তির সাথে ঢেঁকুর তুলেন, সাথে সাথে উপস্থিত ঋষি দুর্বাসা এবং তার শিষ্যদের পেট ভরে যায়, তারা সন্তুষ্ট চিত্তে, সেখান থেকে প্রস্থান করেন।
এই কাহিনী থেকে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার যে, রাজসূয় যজ্ঞ এবং উত্তরার বিয়ের ঘটনায় আমিষ খাবারের আয়োজন থাকলেও কৃষ্ণ সেগুলো খেয়েছিলেন কি না তার স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই, যেহেতু কৃষ্ণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সেহেতু তিনিও মুনি ঋষি সহ সবার সাথে ঐসব আমিষ খাবার খেয়েছেন বলে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু কাম্যকবনের ঘটনায় কৃষ্ণ কিন্তু দ্রৌপদীর রান্না করা খাবার থেকেই একটি অন্ন খেয়েছিলো, যে দ্রৌপদী নিরামিষ খেতেন না, যার হাড়ি পাতিলও নিরামিষী ছিলো না। তাহলে এখানে কী প্রমাণ হয়, শ্রীকৃষ্ণ কি নিরামিষভোজী ছিলেন ?
শ্রীকৃষ্ণ যে অহিংস নয়, সেটা তার জীবনের নানা বধের ঘটনায়, যেমন- কংস, শিশুপাল দ্বারা যেমন প্রমাণিত, তেমনি কৃষ্ণ যে নিরামিষী ছিলেন না, সেটাও মহাভারত যুগের খাদ্যাভ্যাস দ্বারা প্রমাণিত; অথচ এই কৃষ্ণকে ভোগ নিবেদন প্রসঙ্গে দিব্যজ্ঞানীরা প্রশ্ন করে- ভগবানকে কি মাছ মাংস নিবেদন করা সম্ভব ?
শেষে Sodkirti Das এর উদ্দেশ্যে বলছি- আপনি বলেছেন সমস্ত মুনি ঋষিরা নিরামিষী ছিলেন, কিন্তু আমি রামায়ণ মহাভারত থেকে প্রমাণ করে দিলাম যে মুনি ঋষিরা নিরামিষভোজী ছিলেন না। আর আপনার মতে- এই নিরামিষ খাওয়া ব্যক্তিদের নাম আপনি যে বই থেকে নিয়েছেন, সেই "বিজ্ঞান সনাতনধর্ম বিশ্বসভ্যতা" যে কোনো অথেন্টিক রেফারেন্স নয়, সেটা, উপরে যে লিঙ্ক দিয়েছি, সেই আলোচনাতেই কিন্তু প্রমাণিত, যে আলোচনা বলছে- উক্ত পুস্তকের বেশির ভাগ তথ্য ভুল বা মিথ্যা, এখন সেই পুস্তকের তথ্যকে অনুসরণ করে, আপনি ভুল, না সঠিক পথে আছেন, এবার সেটা স্বয়ং বিচার করুন।
শেষ আরেকটা কথা, আমার কথা পছন্দ না হলে আমাকে গালাগালি করে কোনো লাভ নেই, যেটা বিশেষ করে আর্য সমাজী, মুসলমান এবং ইসকনিরা করে; কারণ, আমাকে গালি দিলেই মিথ্যা কখনো সত্য হয়ে যাবে না। আমাকে গালি দিলে আমার মুখ থেকে আরো দ্বিগুন বেগে শব্দ তীর নিক্ষিপ্ত হবে, যেটা আপনার পক্ষে হয়তো সহ্য করা সম্ভব হবে না; কারণ, আমাকে কেউ কলসীর কানা মারলে আমি তাকে প্রেম দিই না। তাই গালাগালি বাদ দিয়ে আমার বলা পয়েন্টগুলো যুক্তিসঙ্গতভাবে খণ্ডণ করুন, বলা তো যায় না, আপনার মুখে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা শুনে আমার মত বদলে আমিও আপনার ভক্ত বা শিষ্য হয়ে যেতে পারি, তাতে আপনারই লাভ; কারণ, আমার মেধা ও জ্ঞান যার পক্ষে যাবে, তার যেমন লাভ সুনিশ্চিত, তেমনি যার বিপক্ষে যাবে তারও ধ্বংস সুনিশ্চিত। এবার আবার স্বয়ং বিচার করুন, কোন পথ আপনার জন্য মঙ্গলজনক, আমাকে গালাগাল করা, না শাস্ত্র, যুক্তি ও বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে কথা বলা ও কাজ করা ?
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:
Post a Comment