Friday, 10 July 2020

মহাভারতের কাহিনী রচিত হয়েছে মানুষকে শিক্ষা দেবার জন্য


#Bina_Kar,
মহাভারতের কাহিনী রচিত হয়েছে মানুষকে শিক্ষা দেবার জন্য।

মহাভারত নিয়ে আপনার তিনটি মন্তব্যের প্রথম মন্তব্যে আপনি বলেছেন- সত্যবতী, তার মৃত পুত্রের স্ত্রীদ্বয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার অপর স্বামীর পুত্র বেদব্যাসের দ্বারা পুত্র উৎপাদন করে বংশ রক্ষা করেছিলেন, ফলস্বরূপ পেয়েছিলেন এক অন্ধ পুত্র এবং জণ্ডিসরোগওয়ালা পুত্র।

এই ঘটনার প্রথম শিক্ষা হলো যেকোনো উপায়েই হোক আপনাকে আপনার বংশ রক্ষা করতেই হবে। এই বংশ রক্ষার গুরুত্ব আমার বুঝি না বলেই- কেউ এক কন্যা, দুই কন্যা বা ততোধিক কন্যায় সন্তুষ্ট থাকি, ফলস্বরূপ বিয়ের পর মেয়েরা অন্য বংশের হয়ে যায় এবং তারপর কোনো এক সময় ঐ কন্যার পিতার মৃত্যু হলে ঐ ব্যক্তির বংশ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

বংশকে বিলুপ্তের হাত থেকে রক্ষা করা ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো- একজন পুত্রহীন ব্যক্তি নানারকম সমস্যায় ভুগে, তার কাজে সে কোনো সাহায্যকারী বা বিশ্বস্ত সহায়তাকারী পায় না বা অভাব বোধ করে এবং তার কাজ বা আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ থাকে না।

মানুষ, সন্তানের জন্মই দেয় বংশ রক্ষা এবং বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বনের জন্য; একজন পুত্রহীন ব্যক্তির এই কোনটিই হয় না। পার্থিব জীবনে পুত্রের এই প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করেই, মানুষ যেন পুত্রহীন না থাকে, সেজন্য শাস্ত্রে বলা হয়েছে- পুত্রহীন ব্যক্তিরা পুৎ নামক নরক ভোগ করে, পুত্র না থাকলে তারা সেখানের শাস্তি থেকে রেহাই পায় না। মূলত শাস্ত্রে এসব কথা বলা হয়েছে- মানুষ যেন পুত্রহীন না থাকে, সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক ক'রে, উৎসাহ দিয়ে, পুত্র লাভে সচেষ্ট করার জন্য, সেটা হোক নিজের "স্ত্রীদের" দ্বারা বা নিজের অক্ষমতায় নিজের স্ত্রীতে অন্য কাউকে নিয়োগ ক'রে।

একটু আগেই আমি "স্ত্রীদের" শব্দটি ব্যবহার করেছি। এর কারণ হলো এক স্ত্রীতে যদি পুত্র লাভ না হয়, তাহলে অপর স্ত্রী গ্রহন করতে হবে। কিন্তু এই অপর স্ত্রীর দ্বারা যে পুত্র লাভ হবে, তার গ্যারান্টি কী বা এটা জানা যাবে কিভাবে ?

এই সকল সমস্যার সমাধান আছে বলেই সনাতন ধর্ম হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জ্যোতিষ শাস্ত্রের মাধ্যমে যেকোনো স্বামী স্ত্রীর কোষ্ঠী বিচার করে বলে দেওয়া সম্ভব যে তারা শুধুই পুত্রের জন্ম দেবে, না শুধু কন্যার জন্ম দেবে, না পুত্র-কন্যা উভয়েরই জন্ম দেবে, না তারা কোনো সন্তানই লাভ করতে পারবে না। এজন্যই প্রাচীন ও মধ্যযুগে বিয়ের আগে ছেলে মেয়ের কোষ্ঠী বিচার করা হতো এবং সেখানে নানা বিষয়ের সাথে বিশেষ ভাবে দেখা হতো কন্যার দারিদ্রতা এবং পুত্র যোগ আছে কি না, যদি কন্যার দারিদ্রতা যোগ না থাকতো এবং পুত্রযোগ থাকতো, তাহলেই সেই কন্যার যথেষ্ট মর্যাদার সাথে উচ্চ বংশীয় এবং ধনী পরিবারগুলোতে বিয়ে হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আধুনিকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ভারত ভাগের পর থেকে বিশেষ করে বাংলাদেশে জ্যোতিষ চর্চা লোপ পাওয়ায় বিয়ের পূর্বে ছেলে মেয়ের কোষ্ঠী বিচার একটি সেকেলে বিষয়ে পরিণত হয়েছে, তাই এখন বিয়ের পূর্বে শুধু ছেলে মেয়ের বাইরের রূপ দেখা হয়, কোষ্ঠী বিচার করে ভেতরটা দেখা হয় না, এর ফলেই অনেকের জীবনে বিয়ের পর নেমে আসে- দারিদ্রতা, বৈধব্য বা স্ত্রীবিয়োগ বা কপালে জুটে শুধুই কন্যা; এছাড়াও অতি আধুনিকতার ফলে কন্যা ও পুত্রকে সমান বিবেচনা করায়, দুটি কন্যার জন্মের পর অনেকে আর পুত্রের জন্য চেষ্টা করে না, আর যে ব্যক্তি এটা জানেই না যে তার নিজের পুত্রযোগ আছে কি না, সে কিভাবে নিজের স্ত্রীর শুধু কন্যা যোগ বিচার করে পুত্রের জন্য দেখে শুনে কোষ্ঠী বিচার করে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন করবে ? তাই একাধিক কন্যা জন্ম নিলেও, নিজের পুত্রযোগ থাকা সাপেক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী দ্বারা যে পুত্র লাভ করা যেতে পারে, এটা কারো মাথাতেই আসে না, তাই শেষে পর্যন্ত এর ফল হয় মারাত্মক।

এছাড়াও বর্তমান সমাজে যা ই ঘটুক না কেনো, দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করাকে লোকজন খুব একটা ভালো চোখে দেখে না, এমনকি কোনো সমস্যার কারণে স্ত্রী সন্তানহীন হলেও। আমার গ্রামেই দুটি হিন্দু এবং দুটি মুসলিম পরিবার আছে, যারা স্ত্রীর সমস্যার কারণে সন্তান না হলেও দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারছে না; কারণ, সময়টা অনেক বদলে গেছে, এখন দ্বিতীয় বিয়ে করার পথ নানা কারণেই রুদ্ধ হয়ে গেছে।

কিন্তু বাস্তব কারণ উপলব্ধি না করে আপনি যদি এসব অসংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে পুত্র লাভে সচেষ্ট না হন, আপনাকে এর মূল্য দিতে হবে কঠিনভাবে- বৃদ্ধকালে সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে এবং আপনার মৃত্যুর পর আপনার নাম গন্ধ পৃথিবী থেকে মুছে গিয়ে। তাই, যদি কোনো পুরুষের পুত্রযোগ থাকে এবং স্ত্রীর পুত্রযোগ একেবারেই না থাকে, তাহলে সেই পুরুষের দেখে শুনে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন করা উচিত নিজের বৃদ্ধাবস্থার অবলম্বন এবং বংশ রক্ষার জন্য। কিন্তু যদি কোনো পুরুষের পুত্রযোগ একেবারেই না থাকে এবং তার স্ত্রীর পুত্রযোগ থাকে, তাদের জন্যই কেবল এই নিয়োগ প্রথার ব্যবস্থা, যেটা মহাভারতে উল্লিখিত, কিন্তু এই নিজের স্ত্রীতে অন্য কাউকে নিয়োগ করা নিয়ে তথাকথিত আধুনিক সভ্য সমাজের নাক সিটকানির অভাব নেই, কেউ তো এসম্পর্কে ভাবতেও পারে না। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতা কারো ভাবার বা না ভাবার বা কারো স্বীকৃতি অস্বীকৃতির উপর নির্ভর করে না, সামাজিক বাস্তবতা তার আপন গতিতে এগিয়ে চলে, যখন মানুষ সেটাকে স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করে, তখন সেটা গোপনেই তার পথ চলে।

সমাজে নারীর যেমন বন্ধ্যাত্ব রয়েছে, তেমনি বন্ধ্যাত্ব রয়েছে পুরুষের এবং এ সম্পর্কে যেটা আরও জানা যায়, সেটা হলো- সমাজের নারীর চেয়ে পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা বেশি। কোনো নারী বন্ধ্যা হলে তার সন্তান লাভ সাধারণ উপায়ে কখনোই হয় না, কিন্তু কোনো পুরুষ বন্ধ্যা হলেও তার স্ত্রী যদি চালাক হয়, সে কখনো সন্তানহীন থাকে না, কিন্তু এটা কিভাবে ?

কোনো নারী যখন বুঝতে পারে যে তার স্বামীর দ্বারা তার সন্তান লাভ হবে না, তখন সে স্বামীর অজ্ঞাতে তার নিকটস্থ ভালো লাগার পুরুষের দ্বারা নিজের গর্ভসঞ্চার ঘটায়, যেটা সে সারাজীবন ধরে সম্পূর্ণ গোপন রাখে এবং সেটা তার নিজের স্বামীর সন্তান বলেই সমাজে চালিয়ে দেয়। এটাই নিয়োগ প্রথা। মহাভারতে যেহেতু বলা হয়েছে যে- 'যা মিথ্যা, তাতে সত্য নেই; আর যা সত্য নয়, তা ধর্ম নয়"- তাই সত্যবাদীদের ধর্ম, সনাতন ধর্মে কোনো কিছুকে গোপন করে মিথ্যা বলা হয় নি, মূল ঘটনা সবকিছু অকপটে বলে দেওয়া হয়েছে।

যা হোক, বর্তমান সমাজ- বিশেষ ক্ষেত্রে ঘটা নিয়োগ প্রথাকে সরাসরি মানতে পারে না বলে তা গোপনে ঘটে চলেছে এবং এই নিয়োগ প্রথার মাধ্যমে যে সব সন্তানের জন্ম হচ্ছে, তাদের সংখ্যা মোটেই কম নয়, একটা হিসাব দিচ্ছি-

সমাজে বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যায় ভোগে ১০-১৫% দম্পতি, ধরে নিন এই সংখ্যাটি গড়ে ১২%, এই ১২% এর মধ্যে ধরে নিন ২% নারী সেই রকম ইচ্ছা না থাকায় বা সেই ধরণের গোপন কর্ম ঘটানোর সুযোগ না পাওয়ায় সন্তানহীন থাকে (এবং এরা মূলত হিন্দু, যেকারণে দেখবেন অনেক হিন্দু দম্পতি সন্তানহীন, কিন্তু কোনো মুসলমান দম্পতিকে সন্তানহীন তেমন পাবেন না) তাহলে বাকি থাকে ১০%, এই ১০% এর প্রায় ৫৫% বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী পুরুষ। ১ কোটিতে এই সংখ্যা ৫৫,০০০। এখন চিন্তা করুন বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি, যার মধ্যে ১৫ কোটি মুসলমান, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি, সব মিলিয়ে দুই বাংলায় প্রায় মুসলমান ২০ কোটি, এই ২০ কোটির মধ্যে দম্পতি কম করে হলেও ৫ কোটি, আর ৫ কোটিতে নিয়োগ প্রথার মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তানের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৫ হাজার, সংখ্যাটা কিন্তু মোটেই কম নয়। সমগ্র বাংলার মুসলিম সমাজের এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে নিয়োগ প্রথার মাধ্যমে জন্ম নেওয়া কোনো সন্তান নেই, মুসলিম অধ্যুষিত শহরে এই সংখ্যা আরো বেশি; কারণ সেখানে বড় বড় অট্টালিকার মধ্যে অবৈধ যৌনতা অনেক সুলভ এবং সহজ, তাই সেখানে নিয়োগ প্রথার মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তানের সংখ্যাও বেশি। এবং মুসলিম সমাজে গোপনে ঘটা এই নিয়োগ প্রথার কারণের জন্যই মুসলিম সমাজ অনেক বেশি টেকসই, মুসলিম সমাজে বংশ বিলোপের ঘটনা অনেক কম, আর সংস্কারবশত হিন্দু নারীরা ঐ পথে পা বাড়ায় না ব'লে বা কম বাড়ায় ব'লে হিন্দু সমাজে সন্তানহীনতার কারণে বংশ বিলোপের ঘটনা অনেক বেশি।

তাহলে প্রমাণ হলো- মহাভারতে বর্ণিত নিয়োগ প্রথা সমাজে এখনও বহাল তবিয়তে চলছে এবং চলবে কালের অন্ত পর্যন্ত, প্রকাশ্যে লোক সমাজে যেটা নিন্দনীয় হওয়ায়, চলছে গোপনে এবং চলতে থাকবে; কারণ, এর উপযোগিতা রয়েছে, তাই এটা নিয়ে নাক সিটকানির কিছু নেই। আপনি নিয়োগ প্রথা নিয়ে সমালোচনা করছেন, কিন্তু হয়তো জানেন না যে আপনিও নিয়োগ প্রথারই সন্তান হতে পারেন, ডিএনএ টেস্ট করে তো আর নিজের পিতার পরিচয় আপনি নিশ্চিত করেন নি, তাই এটা নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো; কারণ, ডিএনএ টেস্ট করে পিতৃপরিচয় নির্ণয় করতে গেলে কে যে কখন ফেঁসে যাবেন, তা কিন্তু বলা যাবে না।

এবার আসুন, দেখা যাক ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর জন্মের মধ্যে কিভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের ভ্রুণতত্ত্বের কথা বলা হয়েছে-

সত্যবতী- বংশ রক্ষার্থে জন্য যখন অম্বিকা ও অম্বালিকে নিয়োগ প্রথার জন্য মহামুনি বেদব্যাসের কথা বলে, তখন তারা বিষয়টি মোটেই সহজভাবে নেয় নি, বলতে গেলে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তারা এই কাজটি করে। এর ফলে বেদব্যাসের সাথে সহবাসের সময় ধৃতরাষ্ট্রের মা অম্বিকা একেবারে চোখ বন্ধ করে ছিলো, একবারের জন্যও সে চোখ খুলে নি। বেদব্যাস তো ছিলেন মহাজ্ঞানী, তিনি- দিন, মাস, তিথি, নক্ষত্র, সময় হিসেব করে, যে সময়ে তার গর্ভসঞ্চার হতে পারে, ঠিক সেই সময়ে একবারই সঙ্গম করেছিলেন, সাধারণ মানুষের মতো সন্তান লাভের আশায় মাসের পর মাস চালিয়ে যান নি। এই হিসেব নিকেষ করেই তিনি ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরের মায়ের গর্ভসঞ্চার করেন। এই কর্ম শেষ করে তিনি সত্যবতীকে বলে যান, অম্বিকা সম্পূর্ণ চোখ বন্ধ করে ছিলো, এজন্য তার সন্তান অন্ধ হবে, অম্বালিকা তাকে দেখে ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিলো, সেজন্য তার সন্তানের গায়ের রং পাণ্ডু বর্ণের হবে। কিন্তু বিদুরের মা তার কাছে এসে স্বেচ্ছায় একটি পুত্র পার্থনা করেছিলো, তাই সে স্বাভাবিক হবে এবং জ্ঞানী হবে। গর্ভসঞ্চার মূহুর্তে নারীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে সন্তানের যে নিয়তি নির্ধারিত হয়, বিজ্ঞানের এই সত্য কিন্তু সেই ৫ হাজারেরও বেশি বছর আগেই মহাভারতে বলে দেওয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, অর্জুন-সুভদ্রার পুত্র অভিমন্যু সম্পর্কে এটাও কথিত যে, সে গর্ভে থাকতেই চক্রব্যূহ ভাঙ্গার জ্ঞান অর্জন করেছিলো, গর্ভে থাকতেই মায়ের বিভিন্ন আচরণ যে সন্তান শিখে ফেলেও এটাও কিন্তু মহভারতই আমাদেরকে জানিয়েছে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কি সেই একই কথা এখন বলছে না ? এই প্রসঙ্গে আপনি যে বলেছেন, পাণ্ডু মানে হলো জন্ডিস রোগী, আসলে তা ঠিক নয়। জণ্ডিস রোগীর মতো গায়ের রং প্রায় হলুদ ছিলো বলেই তার নাম হয়েছিলো পাণ্ডু, জণ্ডিসের রোগী হলে পাণ্ডু যুদ্ধ করতে পারতেন না এবং যুবক বয়স পর্যন্ত অতদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতেও পারতেন না। ফলে আপনি যে বলেছেন- সত্যবতীর নিয়োগ প্রথার সিদ্ধান্তের ফলেই ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ এবং জন্ডিস রোগীর মতো চেহারার পাণ্ডুর জন্ম হয়েছিলো, আসলে সেটা ঠিক নয়। পাণ্ডুর গায়ের রং এবং ধৃতরাষ্ট্রের অন্ধত্বের ফল, প্রকৃতপক্ষে তাদের মায়ের কর্মফল, যারা নিয়োগপ্রথার বিষয়টিকে এবং বেদব্যাসকে সহজভাবে নিতে পারে নি। নিয়োগ প্রথার ফলেই যদি ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর ঐ অবস্থা হতো, তাহলে তো বিদুরেরও কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্ম হতো ? সেটা কি হয়েছে ? বিদুর, শারীরিকভাবে যেমন ছিলো সুস্থ স্বাভাবিক, তেমনি জ্ঞানেও ছিলো অসীম, বিদুরের মা, বেদব্যাসকে সহজভাবে এবং আগ্রহের সাথে গ্রহন করেছিলো বলেই বিদুর কোনো প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম নেয় নি; এই কথাও এখন বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত যে- স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসায় যে সন্তানের জন্ম হয়, সে সবদিক থেকে ভালো হয়, আর যে সন্তানের জন্ম স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাহীন যৌনতার মাধ্যমে হয়, তারাই হয়- চোর, ডাকাত, খুনি, সন্ত্রাসী, মাস্তান, ধর্ষক, এককথায় সমাজে অশান্তি সৃষ্টিকারী।

সুতরাং নিয়োগ প্রথার মাধ্যমে ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডুর জন্মদানের মধ্যে বিজ্ঞানের অনেক সত্য এবং সামাজিক বাস্তবতা লুকিয়ে আছে, পুরুষের অক্ষমতায় এটাকে যদি সেই পুরুষ সহজভাবে মেনে নেয়, তাহলে যেমন তার বংশ রক্ষার প্রশ্ন হুমকির মুখে পড়বে না, তেমনি অম্বিকা ও অম্বালিকার ভুল সম্পর্কে জেনে তারা যদি সচেতন হয়, তাহলেও সন্তান কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম নেবে না। অবশ্য বর্তমান সমাজে যেসব নারী, স্বামীর অক্ষমতার কথা বিবেচনা করে গোপন নিয়োগপ্রথার মাধ্যমে সন্তান লাভ করে থাকে, তাদের সন্তানের ক্ষেত্রে ঐ ধরণের শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার সুযোগ কম; কারণ, এসব ক্ষেত্রে সন্তানহীন ঐ নারী নিজেই স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে তার পছন্দের কোনো পুরুষকে নিজের জন্য নিয়োগ করে থাকে। সেক্ষেত্রে আগত সন্তানের মধ্যে যে সমস্যা থাকতে পারে, সেটা হলো সে বেশি মাত্রায় ব্যাভিচারী হতে পারে, যেহেতু মায়ের ব্যাভিচারের মাধ্যমেই তার জন্ম, এছাড়াও সে তার বায়োলজিক্যাল ফাদারের দোষ গুনের কিছু তো অবশ্যই লাভ করবে, যেটা সবক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।
এখানে আমি বলেছি, সে একটু বেশি মাত্রায় ব্যভিচারী হতে পারে, এর কারণ হলো- সমাজের সব পুরুষই কম বেশি ব্যাভিচারী, নারীসঙ্গের সুযোগ পেলে কেউই ছাড়ে না; কিন্তু তার ক্ষেত্রে এই প্রকাশটা একটু বেশি দেখা যাবে, যেহেতু সমাজের স্বীকৃতি না পাওয়ায় তার মা তাকে গোপন ব্যাভিচারের মাধ্যমে তার জন্ম দিয়েছে।
শেষে একটা কথা বলতেই হচ্ছে- মহাভারতের নিয়োগ প্রথা এবং বাস্তবের নিয়োগ প্রথার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। মহাভারতের নিয়োগ প্রথার ঘটনা ঘটানো হয়েছিলো বিচিত্রবীর্যের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের উত্তরাধিকার লাভের জন্য, এই রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ধরা হয়েছিলো বলেই অম্বিকার পুত্রের নাম ধৃতরাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমানের গোপন নিয়োগ প্রথাগুলো বিধবা নারীরা নয়, সধবা নারীরাই ঘটায়, নিজের সিদ্ধান্তে, নিজের ইচ্ছায়, নিজের গোপন ব্যবস্থাপনায়, যেহেতু সমাজে এর কোনো স্বীকৃতি নেই, কিন্তু এর প্রয়োজন আছে।

যা হোক, মহাভারত নিয়ে আপনার তিন প্রশ্নের একটির জবাব এখানে দিলাম, বাকিগুলোর জবাবও পাবেন শীঘ্রই।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment