Thursday 21 May 2020

আর্য-অনার্য তত্ত্বে, আর্যরা কি ভারতে বহিরাগত ?


আর্য-অনার্য তত্ত্বে, আর্যরা কি ভারতে বহিরাগত ?

ভারতবর্ষে আর্য সম্পর্কে আমরা যা ই ভাবি না কেনো, প্রকৃত সত্য হচ্ছে- সাঁওতাল, কোল, মুণ্ডা, দ্রাবিড়ের মতো কালো লোকগুলোই ছিলো এই ভারতভূমির আদি বাসিন্দা, আর এরা ছিলো আফ্রিকান নিগ্রো জনগোষ্ঠীর অংশ বা বংশধর এবং এদের গায়ের রং ছিলো কালো। আধুনিক মানুষ হিসেবে দৈহিক গঠন লাভের পর এরা আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে প’ড়ে, কোনো কোনো দল যেকোনোভাবেই হোক ভারতে পৌঁছে যায় এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকে। হোমো স্যাপিয়েন্স নামের যে আধুনিক মানুষ, এদের সবারই উৎপত্তি আফ্রিকার কালো মানুষ হিসেবে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই কালো মানুষগুলোর কিছু কিছু ফর্সা হয়ে শ্বেতাঙ্গ বা মঙ্গোলিয়ান হয়ে গেলো কিভাবে ?

আসলে এরা আফ্রিকা থেকে বের হওয়ার কিছু পরেই পতিত হয় বরফ যুগের কবলে, যে বরফযুগ, মূলত প্রভাব ফেলেছিলো বর্তমানের- ইউরোপ, রাশিয়া এবং চীন এলাকায়। এই বরফযুগের কবলে পড়ে কালো মানুষ গুলো মরতে মরতে যে কয় জন বেঁচে থাকে তারা ফর্সা হয়ে যায়; কারণ, গায়ের কালো রং এর পেছনে মূল কাজ করে মেলানিন নামের একটি উপাদান, যার শরীরে যত মেলানিন, সে তত বেশি কালো; এই মেলানিন আবার সূর্যের রোদের তাপের সাথে সাথে দেহে বৃদ্ধি পায়; আর যেহেতু বরফ যুগ মানেই সূর্যের রোদের অনুপস্থিতি, সেহেতু সেই কালো মানুষগুলোর শরীরে মেলানিন কমে গিয়ে কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই তারা অনায়াসেই ফর্সা তথা শ্বেতাঙ্গ হয়ে উঠে।

বর্তমানে, অস্ট্রেলিয়া এবং তার আশেপাশে এবং আমেরিকায় যেসব শ্বেতাঙ্গ বাস করে- তাদের আদিভূমি ইউরোপ; কিন্তু রাশিয়া এবং চীনে উদ্ভূত শ্বেতাঙ্গরা রাশিয়া এবং চীনের আশে পাশেই আছে। কলম্বাস ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কার করার পর সেখানে কিছু লোকজনের দেখা পায়, এরা আসলে রাশিয়ার শ্বেতাঙ্গদের অংশ বা বংশধর; কারণ, রাশিয়ার সাথে উত্তর আমেরিকার ভূখণ্ড একসময় যুক্ত ছিলো, যেমন যুক্ত ছিলো অস্ট্রেলিয়ার সাথে বর্তমান ভারতের ভূখণ্ড; কোনো এক ভূ প্রাকৃতিক কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতের অংশটি ঠেলে চলে এসে মূল ভূখণ্ডের সাথে ধাক্কা লাগাতেই গড়ে উঠে হিমালয় পর্বতমালা এবং সেই একই সময় আলাদা হয়ে যায় উত্তর আমেরিকা ও রাশিয়া।

যা হোক, রাশিয়ার যে শ্বেতাঙ্গদের উদ্ভব হলো, এরা ছিলো সাইবেরিয়ার দিকে এবং প্রায় ১০ হাজার বছর আগে সেখানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ায়, এই লোকগুলো সেখানে আর টিকতে না পেরে গরম এলাকার খোঁজে, বর্তমান আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত এলাকাকে অতিক্রম করে চলে আসে ভারতের দিকে এবং সিন্ধু নদের তীরে গড়ে তুলে সিন্ধু সভ্যতা; যে সভ্যতায় উচ্চারিত হয় প্রথম বেদ মন্ত্র এবং এরাই আর্য নামে পরিচিত। এই ভাবে আর্যরা ভারতে আসে। এই তথ্যের ভিত্তিতে- ‘মুসলমানরা ভারতে বহিরাগত’, এই কথার কাউন্টার হিসেবে কোনো কোনো সেকুলার বলে তাহলে আর্যরাও ভারতে বহিরাগত। কিন্তু আর্যরা ভারতে আছে প্রায় ৮/১০ হাজার বছর ধরে, আর মুসলিমরা আছে মাত্র ১ হাজার বছর। তাহলে ভারতের উপর কাদের দাবী বেশি ? তাছাড়া আর্যরা ভারত থেকে কখনো বাইরে কোনো সম্পদ পাচার করে নি, বরং নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নির্মান করেছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ এক সভ্যতা; এর বিপরীতে মুসলমানরা ভারত থেকে শুধু লুঠপাট করেই নিয়ে যায় নি, মুসলিম শাসকদের খিলাফতের নিয়মানুযায়ী ভারতের মুসলিম শাসকরা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ পাঠিয়েছে- মক্কা, সিরিয়া, ইরাকের খলিফার দরবারে, নাজরানা হিসেবে- যা ইংরেজদের ভারত থেকে ব্রিটেনে সম্পদ পাচারের কয়েক শত গুন বেশি।

যা হোক, আর্যরা ভারতে বহিরাগত, এই তত্ত্বের উদ্ভাবক জার্মান দার্শনিক ম্যাক্সমুলার ( ১৮২৩-১৯০০)। ম্যাক্সমুলার ভারত সম্পর্কে ব্যাপক ভাবে গবেষণা করেছিলো এবং ঋগ্বেদের ইংরেজি অনুবাদসহ ভারত ও এর অধিবাসীদের সম্পর্কে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছিলো। তার এই মেধার প্রতি নজর পড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। তারা, মুলারের ঋগ্বেদের অনুবাদ সহ অন্যান্য গ্রন্থ তাদের ছাপাখানা থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করে। কিন্তু এর আগে থেকেই উচ্চারিত হচ্ছিলো, ইংরেজরা ভারতে বহিরাগত, তাদের ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। এই মনো-সাংস্কৃতিক যুদ্ধে হিন্দুদেরকে পরাজিত করার জন্য ইংরেজরা কাজে লাগায় ম্যাক্সমুলারের মেধাকে। ম্যাক্সমুলারকে দিয়ে তারা লিখায়, ভারতে আর্যরা বহিরাগত, এর মাধ্যমে, ভারতে ইংরেজরা বহিরাগত, এই তথ্যকে ইংরেজরা চাপা দিতে পারে এবং মনো-সাংস্কৃতিক যুদ্ধে হিন্দুদেরকে পরাজিত করতে পারে; ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, ভারতে যদি ইংরেজরা বহিরাগত হয়, তাহলে আর্য তথা হিন্দুরাও তো বহিরাগত, সুতরাং সমান সমান।

যেহেতু, ভারত এবং তার অধিবাসী হিন্দুদের উপর মুলার ব্যাপক গবেষণা করেছিলো, তাই তার কথার উপর কথা বলার ক্ষমতা সেই সময়ের কোনো হিন্দুর ছিলো না। একারণে ম্যাক্সমুলারের তত্ত্বটাকে একরকম স্বীকার করেই নিতে হয়।

ম্যাক্সমুলারের থিয়োরি অনুযায়ী- আর্যরা ভারতে এসেছে মাত্র ৩৫০০ বছর আগে, মানে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ বছর আগে, এই হিসেবে হিন্দুদের যাবতীয় ধর্মীয় গ্রন্থ রচিত হয়েছে খ্রিষ্টপূ্র্ব ৭০০ থেকে ১০০০, খুব বেশি হলে ১৫০০ বছরের মধ্যে, এমনকি মহাভারত ও রামায়নের যুদ্ধও হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ এর কিছু আগে বা পরে। ম্যাক্সমুলারের এই তত্ত্বগুলোই দেওয়া আছে উইকিপিডিয়ায় এবংএই কারণেই এই বিষয়ে যারা সম্পূর্ণ তথ্য না জানবে, তারা নিশ্চিত ধোকায় পড়বে। কিন্তু লেটেস্ট কিছু গবেষণা ম্যাক্সমুলারের থিয়োরির মুখে ঝাঁটা মেরেছে।

আপনারা অনেকেই জানেন শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিলো মোটামুটি ৫২০০ বছর আগে, মহাভারতের যুদ্ধও হয়েছে তার সময়ে, সেই সময়ে জীবিত ছিলেন বেদব্যাসও। বেদব্যাস, বেদ রচনা করেন নি, কিন্তু বিষয়ের ভিত্তিতে বেদকে চারভাগে ভাগ করে সংকলন করেছিলেন, এজন্যই তার নাম বেদব্যাস। কিন্ত বেদব্যাসের মৌলিক রচনা হলো মহাভারত এবং ভাগবত, এছাড়াও লোকমুখে প্রচারিত পুরানগুলোকেও তিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

যা হোক- মহাভারতের যুদ্ধ, শ্রীকৃষ্ণ এবং বেদব্যাসের সময় যদি মোটামুটি ৫২০০ বছর আগে হয়, তাহলে রাম এবং রামায়নের ঘটনা তারও আগের। এ বিষয়ে সাম্প্রতিক কালে "ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ অন ভেদাজ" বা সংক্ষেপে আই-সার্ভ নামের সংস্থার গবেষকরাগবেষণাকরে বলছেন, ৫১১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ১০ জানুয়ারি বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যে অযোধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামচন্দ্র। তার মানে রামের জন্ম হয়েছিলো মোটামুটি ৭১০০ বছর আগে। এই সূত্রে আর্য সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিলো আরো আগে। এখন দেখা যাক এই সম্পর্কে গবেষকগন কী বলেছেন-

পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুর আইআইটির একদল গবেষকের একটি গবেষণা থিসিস, বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারেপ্রকাশিত হয়েছে, সেখানে তারা প্রমান করে দেখিয়েছে যে, সিন্ধু সভ্যতা ৯ হাজার বছরের পুরোনো, এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলে এর পরে গড়ে উঠে মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতা, এটার বয়সও কমপক্ষে ৮ হাজার বছর। এই খবরের লিংকটি পাবেন নিচে-

http://muktamancha.com/news.php?id=1212

আগে প্রচারিত মিথ্যা ইতিহাসের বদৌলতে আমরা জানতাম যে, মিশরীয় সভ্যতা সবচেয়ে পুরোনো সভ্যতা এবং তার বয়সপ্রায় ৫ হাজার বছর। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে সিন্ধু সভ্যতা ই সবচেয়ে পুরোনো, তাহলে ম্যাক্সমুলারের থিয়োরি গেলো কোথায় ? আসলে, কোনো অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো থিয়োরিকে সাময়িকভাবে দাঁড় করিয়ে কিছু লোককে কিছু সময়ের জন্য ধোকা দেওয়া যায়, সবাইকে চিরকাল নয়, ম্যাক্সমুলারের এই আর্য আক্রমন তত্ত্ব সেরকমই একটি ব্যাপার।

খড়গপুর আইআইটির গবেষকরা আরেক টা বিষয় প্রমান করেছে যে হিন্দুদের পরম পবিত্র "স্বস্তিকা চিহ্ন", ১১ হাজার বছরের পুরোনো, এবং এই চিহ্নহিটলারের সময়ও জার্মানি তথা ইউরোপে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হতো; এ থেকে এটা অনুমান করা অসম্ভব নয় প্রাচীন ইউরোপে স্বস্তিকা চিহ্নের ব্যাপক ব্যবহার ছিলো এবং ধর্ম ও সংস্কৃতিতে সমগ্র ইউরোপ ছিলো হিন্দু তথা সনাতন।

শুরুতেই বলেছি, আর্যরা ভারতে প্রবেশ করেছিলো রাশিয়া থেকে, তাহলে সিন্ধু সভ্যতার স্বস্তিকা চিহ্ন ইউরোপে গেলো কিভাবে ?

স্মরণ করুন, আমি বলেছি, আফ্রিকায় আধুনিক মানুষ উৎপত্তির পর জীবিকার তাগিদে তারা এশিয়া ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, এই ছড়িয়ে পড়া লোকগুলোর ধর্ম ও সংস্কৃতি ছিলো এক। পরবর্তীতে বরফ যুগের কবলে পড়ে এরা কালো থেকে সাদা হয়ে উঠে। এই সাদা বা ফর্সালোকগুলোরই এক অংশ বাস করতো রাশিয়ার সাইবেরিয়া এলাকায় এবং মোটামুটি ১০ হাজার বছর আগে যারা সাইবেরিয়ার প্রচণ্ড ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে গরম এলাকা ভারতের দিকে চলে আসে, যে কথা উপরে বলেছি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আর্যরা কি ভারতে বহিরাগত ?

উপরে আর্যদের ভারতে আসার যে কাহিনী বললাম, সেটাকে আপনি যদি বহিরাগত বলে বিবেচনা করেন, তাহলে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর সকল দেশকে এই বিবেচনা করতে হবে যে, তাদের পূর্বপুরুষরা বহিরাগত। কারণ, আফ্রিকা ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশে তো মানুষের উদ্ভব হয় নি। শুধু তাই নয়, এইভাবে বহিরাগত এর ব্যাপারটি বিবেচনা করলে, আপনি নিজেও পৃথিবীতে বহিরাগত; কারণ, এক সময় আপনি এই পৃথিবীতে ছিলেন না, আপনাকে আনা হয়েছে বা আপনি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এসেছেন। এই সূত্রে আর্যরা ভারতে বহিরাগত নয়, কারণ, তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সিন্ধু এলাকায় প্রবেশ করেছিলো এবং সেই ভূমিকেই তারা নিজের মাতৃভূমি বিবেচনা করে তার উন্নতি বিধানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি সভ্যতা নির্মান করেছিলো এবং তারা কখনো বাইরের কোনো দেশে সম্পদ পাচার করে নি বা নিজেরাও যায় নি। কিন্তু মুসলমান এবং ইংরেজরা স্পষ্টভাবে ভারতে বহিরাগত, কারণ তারা এসেছিলো এই ভূখণ্ড দখল করে লুঠপাট করে খেতে।

এর পরের প্রশ্ন হচ্ছে, আর্যরা কি ভারতের আদি বাসিন্দাদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলো ?

পরাজিত করার প্রশ্ন আসে তখনই, যখন সেখানে আগে থেকেই কিছু থাকে। ভারতের আদি বাসিন্দাদের কী এমন ছিলো যে, আর্যরা তা দখল করার জন্য তাদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করতে যাবে ? তাদের কি কোনো সভ্যতা ছিলো, না সম্পদ ছিলো ? আর্যরা এসেই তো তাদের জ্ঞান বুদ্ধি পরিশ্রম দিয়ে প্রথম সভ্যতা তৈরি করেছিলো।

কেউ কেউ বলতে পারেন আর্যরা এসেছিলো ভূখণ্ড দখল করতে।

কিন্তু ৮/১০ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে কি লোক সংখ্যা এত বেশি ছিলো যে, তাদেরকে লড়াই করে কোনো ভূখণ্ড দখল করতে হবে ?

এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, ভারতের আদি বাসিন্দাদের পাশে আর্যরা এসে জাস্ট অবস্থান নিয়ে তাদের মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে তুলেছিলো, তাদের এই শান শওকত দেখে ভা্রতের অন্য আদি বাসিন্দারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে এবং তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করেছে এবং আস্তে আস্তে তাদের সাথে মিশে গেছে; এখনও যেমন গ্রামের লোক অনুসরণ বা অনুকরণ করার চেষ্টা করে শহরের লোকদের এবং গরীব দেশ অনুসরণ বা অনুকরণ করে নিজেদের উন্নত করার চেষ্টা ক'রে থাকে ধনীদেশগুলোকে দেখে।

এখানে আর একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার যে, আর্যদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে ভারতের আদি বাসিন্দাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির কিন্তু কোনো সংঘাত ছিলো না; কারণ আদিম মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এবং বর্তমান থেকে ৩ হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত পৃথিবীতে একটাই ধর্ম ছিলো, আর সেটা সনাতন মানব ধর্ম। একারণেই পৃথিবীর প্রতিটি প্রাচীন সভ্যতা ছিলো মূর্তি পূজারী এবং একারণেই ইউরোপে এক সময় চালু ছিলো স্বস্তিকা চিহ্ন। সুতরাং আর্যরাভারতে এসে যে, ভারতের আদি বাসিন্দাদেরকে মেরে কেটে তাদের জায়গা জমি দখল করে তাদের উপর তাদের বিশ্বাস চাপিয়ে দিয়েছে, যেমন করেছিলো মুসলমানরা, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।

কারো কারো দৃঢ় বিশ্বাস যে, আর্যরা বহিরাগত নয়, তারা ভারতেরই আদি বাসিন্দা। কিন্তু এই বিশ্বাস যে ঠিক নয়, সেটা তো উপরেই আলোচনা করলাম; এ কারণে পোস্টটা শুরুই করেছি- ভারতবর্ষে আর্য সম্পর্কে আমরা যা ই ভাবি না কেনো, প্রকৃত সত্য হচ্ছে- এই বাক্য দিয়ে। এবার এ ব্যাপারে কিছু নৃতাত্বিক প্রমান দেখুন-

এটা মোটামুটি স্বীকৃত যে, আফ্রিকা থেকেই আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স এর উদ্ভব, পরে এরা সাড়া পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে এবং তাদের এক দল কোনোভাবে ভারতে এসে বসবাস করতে থাকে। এরা এভাবেও আসতে পারে যে, যখন আফ্রিকায় মানুষের উদ্ভব হচ্ছিলো বা হয়েছিলো- সেই সময় আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার ভূখণ্ড এক সাথে যুক্ত ছিলো, পরে কোনো ভূ-প্রাকৃতিক কারণে এগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, একারণেই ক্যাপ্টেন জেমস কুক অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করার পর সেখানে দেখতে পেয়েছিলো আধুনিক আকৃতির মানুষদের, পরে ইংরেজরা যাদেরকে মেরে কেটে অস্ট্রেলিয়াকে নিজেদের করে নিয়েছে। পৃথিবীর সমগ্র স্থলভাগ যে এক সময় এক সাথে যুক্ত ছিলো, তার প্রমান পাবেন পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে তাকালে, দেখবেন আফ্রিকা ও দুই আমেরিকার মধ্যে এমন ভাবে সমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে, যেন সমুদ্রকে ম্যাপ থেকে কেটে বাদ দিলেই সেগুলো এক সাথে জুড়ে যায়।

উপরেই উল্লেখ করেছি, বর্তমান ভারতের সমতল ভূখন্ড, প্রাচীন পৃথিবীর সেই ভূ প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সময় অস্ট্রেলিয়ার অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এশিয়ার ভূখণ্ডের সাথে ধাক্কা মারে, যার ফলে হিমালয় পর্বত মালার সৃষ্টি হয়। এই ভাবে যে ভূখণ্ড ভারতের সাথে এসে যুক্ত হলো, সেই ভূখণ্ডের সাথেও যদি নিগ্রোরা ভারতে চলে আসে, যেমন চলে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়, তাহলে তারাই ভারতের আদিবাসী এবং প্রকৃত সত্য হলো সেটাই, হয় তারা ভূখণ্ডের সাথেই আসুক বা পরে আফ্রিকা থেকে মিশর দিয়ে বের হয়ে আরব, আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ভারতে আসুক, আফ্রিকার সেই কালো লোকগুলোই ভারতের আদি বাসিন্দা এবং তারাই সাঁওতাল, কোল মুণ্ডা, দ্রাবিড়। এই সূত্রেও যদি বলা হয় যে, আর্যরা ভারতে পরে এসেছে এবং তারা বহিরাগত, তাহলে তো বলতে বলতে হবে ভারতের বর্তমান যে ভূখণ্ড সমুদ্র উপকূল দ্বারা বেষ্টিত, সেই ভূখণ্ডই বহিরাগত; কারণ, এই ভূখণ্ডও তো আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ার অংশ এবং তা আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়া থেকেই এসেছে।

আফ্রিকা থেকে উদ্ভব হোমো স্যাপিয়েন্সদের গায়ের রং ছিলো কালো এবং আর্যদের গায়ের রং ছিলো ফর্সা। কালো লোকগুলো যে কিভাবে ফর্সা হয়ে শ্বেতাঙ্গে পরিণত হলো, বরফ যুগের সেই কাহিনী তো উপরেই বলেছি, এই দিক থেকে বিবেচনা করলেও আর্যরা যে রাশিয়ার দিক থেকে ভারতে এসেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আর্যরা ভারতে বহিরাগত এটা নিয়ে কোনো হীনম্মন্যতায় ভোগার দরকার নেই, বরং এটাই এখন গুরুত্বপূ্র্ণ যে, আর্যরা ভারতের আদিবাসিন্দাদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করে তাদের ধন সম্পত্তি ও নারীদেরকে লুট করে নিজেরা ভোগ করে নি, তারা নিজেরাই ছিলো একটি সুসভ্য ও সংস্কৃত জাতি। তারা নিজেরা সংস্কৃত ছিলো বলেই তাদের ভাষার নাম ছিলো হয়েছিলো সংস্কৃত। আর্যরা যে কত সভ্য ছিলো, তার প্রমান- রামায়ণ ও মহাভারতের যুদ্ধের রীতি নীতি এবং যুবতী মেয়েদের বর চয়নের অনুষ্ঠান স্বয়ংবর সভা, যেখানে একটি মেয়েকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হতো, তার জীবন সঙ্গী নির্বাচনের; এই নারী স্বাধীনতা, এখনও কি তথাকথিত আধুনিক ধর্ম দিতে পেরেছে ?

গ্রামের মানুষ যেমন শহরের মানুষের জীবন যাত্রাকে অনুকরণ করে, গরীব দেশ যেমন ধনীদেশগুলোর স্টাইল ফলো করে, তেমনি, ভারতের আদি বাসিন্দারাও আর্যদের জীবন যাত্রা ও শান শওকতে মুগ্ধ হয়ে আর্যদের মতো হওয়ার চেষ্টা করেছে এবং তাদের সবকিছুকে গ্রহন করে তাদের সাথে মিশে গেছে; এটা একটা উন্নত জাতির অহংকার যে, তাদের জীবন যাত্রাকে অন্যরা ফলো করে তাদের মতো হয়েছে। তাই আর্যরা বহিরাগত এটা নিয়ে হীনম্মন্যতার কিছু নেই, কারণ আমি বা আপনিই আর্য, আমাদের পূর্বপুরুষরা যদি রাশিয়া থেকে এসে থাকে, সেটাও আমাদের গর্ব, কারণ তারা এসে একটি উন্নত সভ্যতার সৃষ্টি করতে পেরেছিলো, আর আমরা যদি নিগ্রোদেরই বংশধর্ হয়ে থাকি, সেটাও আমাদের গর্ব যে, আমরা অনার্য থেকে আর্য অর্থাৎ অসংস্কৃত থেকে সংস্কৃত হয়েছি, উন্নত হওয়ার জন্য উন্নত জাতিকে ফলো করেছি, বুনো জঙ্গলি তো আর হই নি ?

জয় হিন্দ।

No comments:

Post a Comment