Saturday 9 May 2020

দয়ানন্দ সরস্বতী কি মহর্ষি ?


দয়ানন্দ সরস্বতী কি মহর্ষি ?

মহর্ষি শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হলো মহা+ঋষি এবং এর সমাস হলো- মহান যে ঋষি। বেদদ্রষ্টা বা সহজ কথায় বেদের মন্ত্র যারা রচনা করেছিলেন তাদেরকে ঋষি বলা হয় এবং সেই মন্ত্রগুলোর উপর পরবর্তীতে যারা বিভিন্ন রকম কাজ যেমন- অধ্যয়ণ, অধ্যাপনা করেছিলেন তাদেরকে মুনি বলা হয়। বেদদ্রষ্টা ঋষিদের সংখ্যা জ্ঞাত ৩৫৫ জন এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজন, কিন্তু এদের সবাইকে মহা ঋষি বা মহর্ষি বলা হয় না; ঋষিদের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ এবং মহান, তারাই মহর্ষি নামে খ্যাত। তাই মহর্ষি হতে হলে তাকে শুধু বেদের মন্ত্র রচনা করলেই হবে না, তাকে হতে হবে ঋষিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বা প্রধান। এই সূত্রে দেখা যাক দয়ানন্দ সরস্বতী কোনো মহর্ষি কি না ?

যে আর্য সমাজীরা দয়ানন্দ সরস্বতীকে মহর্ষি বলে লিখেন বা প্রচার করেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করছি- দয়ানন্দ সরস্বতী কি বেদের মন্ত্র রচনা করেছিলেন ?

উত্তর হলো- না।

তাহলে যিনি বেদের মন্ত্রই রচনা করেন নি, তিনি তো ঋষিই নন, তিনি মহর্ষি হন কিভাবে ?

আর্য সমাজীদের কাছে আমি এই প্রশ্ন অত্যন্ত কঠোরভাবে জিজ্ঞেস করছি, যদি তারা এই প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারে, তাহলে তাদের, দয়ানন্দ সরস্বতীকে মহর্ষি হিসেবে লিখার বা প্রচার করার অধিকার আছে, অন্যথায় দয়ানন্দকে মহর্ষি বলার বা লিখার কোনো নৈতিক কোনো অধিকার তাদের নেই।

বৈষ্ণব সমাজ যেমন চৈতন্যদেবকে কলিযুগের অবতার বা ভগবান হিসেবে প্রচার ক'রে সনাতন হিন্দু সমাজের সাথে প্রতারণা করেছে এবং এখনও করছে, একইভাবে আর্য সমাজীরাও দয়ানন্দকে মহর্ষি হিসেবে প্রচার ক'রে সনাতন হিন্দু সমাজের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। চৈতন্যদেবের ব্যক্তিগত জীবন সাধারণ হিন্দুদের জন্য অনুসরণীয় না হলেও, তার শিষ্যদের প্রতি- কৃষ্ণ নাম করার নির্দেশ সাধারণ হিন্দুদের জন্য অনুসরণীয় এবং শ্রীকৃষ্ণকে, চৈতন্যদেব কখনো ছোট তো করেই নি বরং চৈতন্যদেব, তার আরাধ্য হিসেবে শ্রীকৃষ্ণকে সব সময় ভজনা করেছেন, শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর হিসেবে মেনেছেন এবং তার শিষ্যদেরকে, শ্রীকৃষ্ণকে ভজনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন; যদিও বর্তমান বৈষ্ণব সমাজ, চৈতন্যদেবের সেই নির্দেশকে না মেনে বা না জেনে, চৈতন্যদেবকেই ভজনা করা শুরু করে দিয়েছে এবং তাকে কলিযুগের অবতার বা ভগবান হিসেবে প্রচার করছে, যেটা বৈষ্ণব সমাজের অজ্ঞানতা এবং মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

পক্ষান্তরে, দয়ানন্দ সরস্বতী, শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে তো মানেই নি, উপরন্তু সে শ্রীকৃষ্ণকে অবতার হিসেবেও স্বীকার করে নিা। দয়ানন্দ সরস্বতী শ্রীকৃষ্ণকে একজন যোগী মহাপুরুষ মনে করতো, অন্যদিকে নিজেকে শ্রীকৃষ্ণের চেয়েও বড় মহর্ষি মনে করতো! তার এই বিশ্বাসকেই অন্তরে লালন করে কিছু মূর্খ, যারা আর্য সমাজী নামে হিন্দু সমাজে পরিচিত।

দয়ানন্দ সরস্বতী বেদের কোনো মন্ত্র রচনা করে নি, তাই সে ঋষিই নয়, মহর্ষি হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না; উল্টো এই দয়ানন্দ মিথ্যুক এবং প্রতারক, কেননা- সে তার "সত্যার্থ প্রকাশ" গ্রন্থে মনু সংহিতার অনেক শ্লোকের অনুবাদই শুধু পাল্টে দেয় নি, অনেক মন্ত্রও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে নিজস্ব বিশ্বাস ও মতকে সেগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করেছে। ইতোমধ্যে এ সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধ আমি ফেসবুকে পাবলিশ করেছি, কোনো আর্য সমাজীর ক্ষমতা হয় নি সেই প্রবন্ধের তথ্য প্রমাণের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার, যারা সেই প্রবন্ধ পড়েছেন, তারা দয়ানন্দ সরস্বতীর- মিথ্যা, প্রতারণা ও ভণ্ডামী সম্বন্ধে আগেই জেনেছেন।

যা হোক, দয়ানন্দ সরস্বতী যে মিথ্যুক ও প্রতারক, সেটা তার নামের মাধ্যমেই সে প্রকাশ এবং প্রমাণ করে দিয়েছে নামের আগে মহর্ষি শব্দটি লাগিয়ে। দয়ানন্দ, মহর্ষি শব্দের অর্থ এবং সেটা কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এটা জানতো না বলে আমি বিশ্বাস করি না্, সে অবশ্যই সেটা জানতো এবং জেনে শুনেই নিজেকে তাদের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বজ্ঞানেই নিজের নামের আগে মহর্ষি শব্দটি লাগিয়েছে, যেটা পরবর্তীতে তার অনুসারীরা প্রচার করেছে। কিন্তু সে তো মহর্ষি নয়, এমনকি ঋষিও নয়; কারণ- সে বেদ মন্ত্র রচনা করে নি, তাহলে কিভাবে নিজের নামের আগে মহর্ষি শব্দটি লাগায় এবং তা প্রচার করে ?

দয়ানন্দ সরস্বতী, তার সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থে সনাতন হিন্দু সমাজে প্রচলিত প্রায় সকল কিছুর সমালোচনা করে সেগুলোকে বাতিল করার অপচেষ্টা করেছে এবং সব কিছুর উপরে নিজেকে এবং নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। অথচ দয়ানন্দ সরস্বতীরই প্রায় সকল মত ভ্রান্ত, আর ঐসব ভ্রান্ত মত দিয়ে নিজেকে মহর্ষি হিসেবে প্রচার করেছে, যেখানে সে ঋষিই নয়।

সকলেই তার কর্মফল পায়, দয়ানন্দ সরস্বতী এবং তার অনুসারীরাও পাবে, সে সময় এখন উপস্থিত, যেহেতু আমি তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছি। ব্রাহ্ম সমাজ শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানতো না, তাই তারা আজ ইতিহাসের পাতায়, একই পরিণতি আর্য সমাজীদেরও হবে, আমার দূরদৃষ্টি বলছে- সে সময় আর খুব বেশি দূরে নেই।

জয় হিন্দ।

No comments:

Post a Comment