Friday, 22 May 2020

গীতার ১৫/১৭ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ কার কথা উল্লেখ করেছেন ?


#Songit_Sarkar,

গীতার ১৫/১৭ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "এই ক্ষর ও অক্ষর হইতে উত্তম যে পুরুষ, তিনিই পরমাত্মা বলিয়া কথিত হন। তিনি ত্রিলোকে প্রবিষ্ট হইয়া সকলকে পালন করিতেছেন, তিনি অব্যয়, তিনি ঈশ্বর।"

শুধুমাত্র গীতার এই শ্লোক পড়লে মনে হবে, এখানে শ্রীকৃষ্ণ, অন্য কাউকে ঈশ্বর হিসেবে বর্ণনা করছেন বা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আপনারা এই শ্লোকের আগে পরের শ্লোকগুলো কেনো পড়েন না বা উল্লেখ করেন না ? যদি এই শ্লোকের আগে পরের শ্লোকগুলো পড়তেন এবং সেগুলো বোঝার চেষ্টা করতেন, তাহলে উপলব্ধি করতে পারতেন যে এই "তিনি" বলতে শ্রীকৃষ্ণ আসলে নিজেকেই বুঝিয়েছেন।

গীতার ১৫/১৭ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "তিনি ত্রিলোকে প্রবিষ্ট হইয়া সকলকে পালন করিতেছেন", কিন্তু ১৫/১৩ নং শ্লোকে বলেছেন, "আমি আপন শক্তিকে পৃথিবীতে প্রবেশ করাইয়া সর্বভূতকে ধারণ করিয়া থাকি"। এরপর ১৫/১৫ নং এ বলেছেন, "আমি সকল প্রাণীর হৃদয়ে অন্তর্যামীরূপে আছি, আমা হইতেই প্রাণীগণের স্মৃতি ও জ্ঞান হয় এবং তা বিলোপও হয়, আমিই বেদসমূহের একমাত্র জ্ঞাতব্য, আমিই বেদান্তের অর্থ প্রকাশক এবং আমিই বেদবেত্তা।"

এগুলো থেকে আপনার কি মনে হয় না যে, ১৫/১৭ এর "তিনি" এবং ১৫/১৩ ও ১৫/১৫ এর শ্রীকৃষ্ণ আসলে একই সত্ত্বা ? ১৫/১৭ এর "তিনি" এবং ১৫/১৩ ও ১৫/১৫ এর শ্রীকৃষ্ণ যদি একই সত্ত্বা না হন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে বলতে পারেন যে- আমি আপন শক্তিকে পৃথিবীতে প্রবেশ করাইয়া সর্বভূতকে ধারণ করিয়া থাকি" এবং " আমি সকল প্রাণীর হৃদয়ে অন্তর্যামীরূপে আছি" ?

গীতার ১৫/১৭ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "এই ক্ষর ও অক্ষর হইতে উত্তম যে পুরুষ, তিনিই পরমাত্মা বলিয়া কথিত হন।"

কিন্তু তার পরেই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "যেহেতু আমি ক্ষরের অতীত এবং অক্ষর হইতেও উত্তম, সেহেতু আমি পুরাণে এবং বেদে পুরুষোত্তম বলিয়া খ্যাত। হে ভারত, যিনি মোহমুক্ত হইয়া এইভাবে আমাকে পুরুষোত্তম বলিয়া জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ হন এবং সর্বতোভাবে আমারই ভজনা করেন। (গীতা, ১৫/১৮,১৯)

১৫/১৭ এর পরমাত্মাই কি ১৫/১৮,১৯ এর শ্রীকৃষ্ণ নয় ? যদি এই পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ না হয়, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে বললেন যে, যিনি আমাকে পুরুষোত্তম বলিয়া জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ হন এবং সর্বতোভাবে আমারই ভজনা করেন ? ১৫/১৭ এর "তিনি" বা "পরমাত্মা" যদি শ্রীকৃষ্ণ না হতেন, তাহলে কি শ্রীকৃষ্ণ বলতে পারতেন- "আমি আপন শক্তিকে পৃথিবীতে প্রবেশ করাইয়া সর্বভূতকে ধারণ করিয়া থাকি" এবং " আমি সকল প্রাণীর হৃদয়ে অন্তর্যামীরূপে আছি"? যে প্রশ্নটা আগেও একবার করেছি।

আমি জানি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আপনারা বলবেন, শ্রীকৃষ্ণ অমুক কথা যোগযুক্ত হয়ে বলেছেন, অমুক কথা যোগমুক্ত হয়ে বলেছেন; গীতার কিছু কথা শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে বলেছেন, আর কিছু কথা যোগমুক্ত হয়ে বলেছেন, আপনাদের এই থিয়োরিরই বা রেফারেন্স কোথায় ? এই ভিত্তিহীন যোগযুক্ত বা যোগমুক্তর থিয়োরিকে বাদ দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের কথাগুলোকে আপনারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উক্তি হিসেবে বিবেচনা করেন না কেনো ? গীতার মোট ৭০০ শ্লোকের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন ৫৭৪টি শ্লোক, এর মধ্যে পরোক্ষ উক্তি আছে মাত্র-১৫/১৭, ১৮/৬১ এবং ১৮/৬২- এই তিনটি শ্লোকে, বিচ্ছিন্নভাবে যে তিনটি শ্লোক পড়লে মনে হয় শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর হিসেবে অন্য কাউকে বুঝিয়েছেন, কিন্তু বাকি ৫৭১টি শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর হিসেবে নিজেকেই বুঝিয়েছেন, এই ৫৭১টি শ্লোক বাদ দিয়ে শুধু তিনটি শ্লোক নিয়ে আপনাদের এত লাফালাফি কেনো ? নাকি আপনারা তিমি মাছ বাদ দিয়ে পুঁটি মাছ নিয়ে লাফালাফি করতে ভালোবাসেন ? যার যেমন চিন্তা, সে তো সেটা নিয়েই কথা বলে বা বলরবে, কুয়ার ব্যাঙ কি সমুদ্র সম্পর্কে ভাবতে পারে ?

এই পোস্টে আপনার উল্লেখ করা ১৫/১৭ এর জবাব দিলাম; ১৮/৬১,৬২ এর জবাবও শীঘ্রই পাবেন, একটু অপেক্ষা করুন।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment