Thursday, 7 May 2020

রামায়ণের ইতিবৃত্ত : ( পর্ব - ২)


(রামায়ণ সম্পর্কে প্রকৃত সত্য জানতে হলে পড়ুন এই প্রবন্ধটি)


এই সিরিজের প্রথম পর্বে রামায়ণ সম্পর্কে নানা বিষয়ে জানতে পেরেছেন, এবার দেখে নিন বাকি বিষয়গুলো, শুরুতেই দেখুন  সংস্কৃত রামায়ণের কোথায় কোথায় রাম সীতার মাংস ভোজনের কথা আছে:

অযোধ্যাকাণ্ডের ১৪ নং উপাখ্যান (শৃঙ্গবেরপুর- নিষাদরাজ গৃহ) সর্গ : ৪৯-৫২ তে এক জায়গায় রাম তার পিতার প্রধানমন্ত্রী সুমন্ত্র, যে রামকে বনে ছাড়তে গিয়েছিলো, তাকে বলছে, “আবার আমি কবে পিতা মাতার সঙ্গে মিলিত হয়ে সরযুতটের পুষ্পিত বনে মৃগয়া করবো ?” (ফটোপোস্টে যুক্ত পুস্তকের পৃষ্ঠা ১০৬)

যারা জানেন না, তাদের জন্য বলছি- মৃগয়া মানে শিকার করা, আর এই শব্দটি এসেছে মৃগ থেকে যার অর্থ হরিণ। প্রাচীন কালের রাজারা শুধু হরিণকেই শিকার করতো, তাই হরিণের প্রতিশব্দ মৃগ থেকে মৃগয়া শব্দের উৎপত্তি। আর রাজারা অন্যান্য হিংস্র প্রাণী বীরত্ব দেখানোর জন্য শিকার করলেও তৃণভোজী প্রাণী কিন্তু শিকার করতো শুধু মাত্র ভোজনের উদ্দেশ্যে। তাহলে রামের মৃগয়া করার উদ্দেশ্যটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ? না পারলেও একটু পরেই সেটা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। কা্রণ, এই উপাখ্যানেরই শেষের দিকে, উল্লিখিত পুস্তকের পৃষ্ঠা ১০৯ তে, সীতা গঙ্গার কাছে প্রার্থনা করে বলছে, আমরা যদি ঠিক ঠাক মতো বনবাস শেষ করে রাজ্যে ফিরে যেতে পারি, তাহলে, “তোমাকে সহস্র ঘট সূরা এবং মাংসযুক্ত অন্নের ভোগ দেবো।”

যে মাংস খায় না, তার পক্ষে কি মাংসের ভোগ দেওয়া সম্ভব ?

এই পৃষ্ঠাতেই এই উপাখ্যানের একেবারে শেষ অনুচ্ছেদে বলা আছে,

“কিছুকক্ষণ পর তারা সমৃদ্ধ শস্যসম্পন্ন বৎস্যদেশে উপস্থিত হলেন। সেখানে রাম লক্ষ্মণ- বরাহ (শুকর), ঋষ্য, পৃষত (কৃষ্ণসার হরিণ) এবং মহারুরু (শম্বর, এটা আমার অচেনা) এই চার প্রকার পশু বধ করে, তাদের পবিত্র মাংস নিয়ে ক্ষুধিত হয়ে সায়ংকালে বাসের নিমিত্তে বনে প্রবেশ করলেন।”

রাম-লক্ষ্মণ-সীতা যদি মাংসই না খায়, তাহলে তারা এই পশুগুলো হত্যা করলো কেনো ?

এরপর অযোধ্যাকাণ্ডের ১৫ নং উপাখ্যান, উক্ত পুস্তকের পৃষ্ঠা নং ১১১ তে বলা আছে, “এক ক্রোশ গিয়ে দুই ভ্রাতা বহু প্রকার পবিত্র মৃগ বধ করে এনে যমুনা তীরস্থ বনে ভোজন করলেন।”

এবং পৃষ্ঠা ১১২ তে বলা আছে- রাম, লক্ষ্মণকে বলছে,

“অতএব তুমি মৃগ বধ কর নিয়ে এসো। লক্ষ্মণ পবিত্র মৃগ বধ করে এনে তার মাংস অগ্নিপক্ব ও শোনিত শূন্য করে রামকে দিলেন।”

শুধু যে রাম লক্ষ্মণ সীতা ই মাংস খেতো, তাই নয়, খেতো ভরতও, তার প্রমান আছে, পৃষ্ঠা ১২৯ এ; সেখানে, রামের সাথে দেখা করে তাকে রাজ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ভরত বনের মধ্যে এলে, গুহ নামক একব্যক্তির জনপদের কাছে ভরত শিবির ফেলে বিশ্রামের জন্য, খবর এবং পরিচয় পেয়ে সেই গুহ, মৎস্য-মাংস-মধু উপহার নিয়ে ভরতের সাথ দেখা করতে যায়।

সেগুলো যদি না খাওয়া হয়, তাহলে সেগুলো উপহার নিয়ে যাবে কেনো ?

গুহ এর ওখান থেকে ভরত যায় ঋষি ভরদ্বাজের আশ্রমে, সেখান ভরতের সাথের সকল সৈন্যসামন্তকে বলা হয়, “সূরাপায়িগন সূরা পান করো, বুভূক্ষিতগণ পায়স ও সুসংস্কৃত মাংস যা ইচ্ছা হয় খাও”(পৃষ্ঠা-১৩২)।অনেক কিছুর সাথে এখানে ভরতের লোকজনের আপ্যায়ণের জন্য ছিলো- ছাগবরাহের মাংস, মৃগ, ময়ূরকুক্কুটের(মুরগী) মাংস (পৃষ্ঠা-১৩৩)। এই তথ্যে এখানে পরিষ্কার যে, সেকালে ঋষিরাও মাংস খেতো, কেউ নিরামিষ ভোজী ছিলো না।

এরপর অরণ্যকাণ্ডের ১১ নং উপাখ্যান “মায়া মৃগ ও মারীচ বধ”, যে উপাখ্যানের ঘটনায় একটি সুন্দর হরিণ দেখে সীতা রামকে সেই হরিণ ধরে আনার জন্য বলেছিলো, সেই হরিণ ছিলো আসলেই একটি মায়া হরিণ, কিন্তু প্রচলিত ধারণা মতো সোনার হরিণ নয়, রামকে বিভ্রান্ত করার জন্য মারীচ এই হরিণের রূপ ধরেছিলো। যা হোক, এই উপাখ্যানের শেষে বলা আছে, শেষ পর্যন্ত সেই মায়া হরিণকে না পেয়ে “রাম অন্য মৃগ বধ করে মাংস নিয়ে আশ্রমের দিকে চললেন (পৃষ্ঠা-১৭৮)।”

রাম সীতা যদি মাংসই না খায়, তাহলে রাম, সীতার সেই পছন্দের হরিণকে ধরতে না পেরে অন্য হরিণ বধ করলো কেনো ?

শুধু তাই নয়, রাবন যখন সীতাকে অপহরণ করতে ছদ্মবেশে গেছে, তখন রাবনকে সীতা চিনতে না পেরে বলছে,

“আপনি একটু বিশ্রাম করুন, আমার স্বামী শীঘ্রই রুরু (হরিণ), গোধা (গোসাপ) বরাহ প্রভূতি পশু বধ করে নিয়ে আসবেন।”(পৃষ্ঠা-১৮২)

রাম সীতা যদি মাংসই না খায় তাহলে রাম এই পশুগুলো শিকার করবে কেনো এবং কেনো সীতা, একজন অতিথিকে মাংস খাওয়ানোর লোভ দেখাচ্ছে ?

এরপর সুন্দরকাণ্ডের নং উপাখ্যান, ‘সীতা হনুমান সংবাদ’ এ, হনুমান, সীতাকে খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে রামের কী অবস্থা সেটা তাকে বোঝানোর জন্য বলছে, “তিনি মাংস খান না, মদ্য পান করেন না, কেবল বিহিত বন্য ফলমুল খান।” (পৃষ্ঠা-২৭৭)

সীতার শোকে রাম যে মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে সেই কথা ই হনুমান এখানে সীতাকে বোঝাচ্ছে।

আশা করছি, রাম- সীতা যে নিরামিষভোজী ছিলো না, সেই বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। তারপরও যদি গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস এর লোকজনের মতো আপনার এই ধারণা থাকে যে, না, রাম সীতার পক্ষে মাংস খাওয়া অসম্ভব। তাহলে রাজশেখর বসুর অনুবাদ করা এই রামায়ণটি আপনাকে কালেক্ট করে পড়তে হবে। কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলতে পারেন যে, রাজশেখর বসুই যে রামায়ণের সঠিক অনুবাদ করেছে, তার নিশ্চয়তা কী ? তাহলে তো আপনাকে এটা পড়তেই হবে। কারণ, পড়ার পরই আপনি বুঝতে পারবেন, অনুবাদ কী এবং অনুবাদ করা কাকে বলে ?

এবার কৃত্তিবাসী রামায়ণের কিছু মজার গল্প আপনাদের শোনাই :

“রামের লঙ্কা অভিযানের সময়, রাবনের মানসপুত্র অহিরাবন ছিলো পাতাল পতি এবং অহিরাবনের পুত্রের নাম মহীরাবন। রাম যখন রাবনের সৈন্যদের মেরে ছারখার করছিলো, তখন উপায় না দেখে রাবন তার অনুগত, অহিরাবন ও মহীরাবনকে তলব ক’রে রাম লক্ষ্মনকে হত্যার নির্দেশ দেয়। অহিরাবন তার মন্ত্রের শক্তি দ্বারা পাতাল থেকে রামের শিবিরে রামের ঘর পর্যন্ত সুড়ঙ্গ তৈরি করে এবং মন্ত্রের শক্তিতে রাম লক্ষ্মণ ক’রে অজ্ঞান করে পাতালে নিয়ে যায়। হনুমান যখন বুঝতে পারে যে রাম লক্ষ্মণকে অপহরণ করা হয়েছে, তখন সেই সুড়ঙ্গ পথেই হনুমান পাতালে নেমে মহিরাবনের মন্দিরে চলে যায় এবং সেখানে রাম লক্ষ্মণকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পেয়ে দেবী পাতাল ভৈরবীর মূর্তির পেছনে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। এরপর মহিরাবন সেখানে আসে এবং রাম লক্ষ্মণকে দেবীর কাছে বলি হওয়ার আদেশ দিয়ে প্রণাম করার ভঙ্গিতে হাড়িকাঠে মাথা রাখতে বললে- রাম বলে,

“আমরা তো রাজপুত্র, কোনোদিন কাউকে প্রণাম করি নি, সবাই আমাদেরকেই প্রণাম করতো, তাই কিভাবে প্রণাম করতে হয় সেটা আমরা জানি না, তুমি শিখিয়ে দাও।”

শুনে মহিরাবন বলে, “এই কথা, দাঁড়াও শিখিয়ে দিচ্ছি,” এই ব’লে মহিরাবন যেই প্রণামের ভঙ্গিতে হাড়িকাঠে মাথা রেখেছে, অমনি হনুমান মূর্তির পেছন থেকে বেরিয়ে এসে হাড়িকাঠের শিক আটকে দিয়ে এক কোপে মহিরাবনের গলা কেটে ফেলেছে, মহিরাবন শেষ।

এরপর অহিরাবন সহ অন্যান্যরা এলে তাদেরকেও রাম, লক্ষ্মণ ও হনুমান মেরে সাফ করে দেয়। এরপর কৃত্তিবাস, মৎস্য কন্যা বলে হনুমানের এক স্ত্রীর এবং মকরধ্বজ নামে এক পুত্রের আবির্ভাব ঘটায়, যে পুত্রের হাতে পাতাল শাসনের ভার দিয়ে রাম-লক্ষ্মন-হনুমান ফিরে আসে; এখানে রামের মুখে বলানো-“আমরা তো রাজপুত্র, কোনোদিন কাউকে প্রণাম করি নি, সবাই আমাদেরকেই প্রণাম করতো, তাই কিভাবে প্রণাম করতে হয় সেটা আমরা জানি না, তুমি শিখিয়ে দাও”- এটা পড়ার পর আমার মনে হলো, এ্যাডাল্ট সিনেমাগুলোতে যেমন সতর্কবাণী থাকে যে প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচের কারো দেখা নিষেধ, তেমনি কৃত্তিবাসের রামায়ণের উপর লিখে দেওয়া দরকার যে,

“ছোটদের রামায়ণ, ১০ বছরের উর্ধ্বের কেউ পড়বেন না।”

কারণ, কেচ্ছার মতো ঐ গল্প বড়দের জন্য নয়, শিশুদের জন্যই মানায় ভালো। বিয়ে শাদী করা প্রাপ্ত বয়স্ক একজন লোক বলছে যে, ‘প্রণাম কিভাবে করতে হয় আমরা জানি না’, আর সেটা আরেক প্রাপ্ত বয়স্ক রাজা বিশ্বাস করছে; কৃত্তিবাস এখন বেঁচে থাকলে এসব লেখার জন্য পাবলিকের মার খেয়ে হাত পা ভেঙ্গে ওকে হসপিটালে ভর্তি হতে হতো।

যা হোক, রামায়ণ নিয়ে আরো কিছু কথা না বললেই নয়- রামায়ণ, মহাভারতের মতো নির্ভুল গ্রন্থ নয়। এখানে সংখ্যাতত্ত্বেরবেশ কিছু ভুল ভ্রান্তি আছে। যেমন- যুদ্ধকাণ্ডের নং উপাখ্যানে বলা আছে,

“সমুদ্রের উপর সীমন্তরেখার ন্যায় শোভমান এই সেতুপথে সহস্র কোটি বানর লাফাতে লাফাতে সগর্জনে পার হতে লাগলো।”

এই বানররা যে বানর ছিলো না, ছিলো মানুষ, সেটা একটু পরেই আপনার বুঝতে পারবেন, এখানে শুধু সংখ্যাটা খেয়াল রাখুন, সহস্র কোটি মানে হাজার কোটি; এখনও সারা পৃথিবীর মানুষের সংখ্যা ১ হাজার কোটি নয়, অথচ এই হাজার কোটি বানর সমুদ্র পার হয়ে লংকার মতো একটি ছোট দ্বীপে থাকতে পারছে! শুধু তাই নয়, রাবন যখন রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসে, তখন সে কী কী নিয়ে যুদ্ধ করতে আসে দেখুন- এক নিযুত(১০ লক্ষ) রথ, তিন নিযুত (৩০ লক্ষ) হস্তী, ষাট কোটি অশ্ব, ও অসংখ্য পদাতিক সৈন্য (পৃষ্ঠা-৩৬৯)। ১০ লক্ষ রথে কমপক্ষে ২০ লক্ষ মানুষ ছিলো; কারণ, একজন রথ চালায় এবং অন্যজন যুদ্ধ করে; একইভাবে ৩০ লক্ষ হাতিতেও কমপক্ষে ৬০ লক্ষ মানুষ ছিলো, তারপর ষাট কোটি ঘোড়ায় ৬০ কোটি মানুষ; এভাবে রাবনের বাহিনীতে ছিলো প্রায় ৬১ কোটি মানুষ এবং তাদের রথ, হাতি ও ঘোড়া। খেয়াল করবেন, রাম ও রাবনের এই সমগ্র বাহিনী কিন্তু যুদ্ধ করছে লংকার মতো একটি ছোট্ট দ্বীপে, এটা কি সম্ভব ?

রাজশেখর বসুর অনুবাদের সত্যতা নিয়ে যাদের সন্দেহ আছে, তাদের জন্য এখানে আছে একটা সুস্পষ্ট ইঙ্গিত, অনুবাদ হয় এইরকমই, যেখানে ব্যক্তিগত লাভালাভ বা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সত্যকে বিকৃতি বা চাপা দেওয়া হয় না। বসু মহাশয় চাইলেই এই সংখ্যাগুলোকে কম করে লিখে একটা বাস্তব রূপ দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেই চেষ্টা করেন নি, যা পেয়েছেন তাই লিখেছেন। এই একই কারণে কোরানের বাংলা অনুবাদ যদি আপনারা গিরিশের টা না পড়েন, প্রকৃত সত্যের নাগাল কখনো পাবেন না। কারণ, গিরিশ, কোরান অনুবাদ করেছিলেন নিজের লাভালাভের কথা চিন্তা না করে; কিন্তু পরে যে সব মুসলমান কোরান অনুবাদ করেছে, তাদের সবার মাথায় ছিলো বেহেশতের ৭২ হুরের চিন্তা।

এছাড়াও, রামায়ণ পড়লে, রামের বনবাস এবং যুদ্ধকালীন, শুধু রাম-সীতা এবং লক্ষ্মণকেই আপনি মানুষ হিসেবে পাবেন, আর তাদের আশে পাশে যাদেরকে পাবেন, তারা সবাই বানর, রাক্ষস ইত্যাদি। রাক্ষস বলতে প্রকৃতপক্ষে কিছু নেই, আছে রাক্ষস স্বভাবের মানুষ; সেই হিসেবে রাবনের পক্ষের সবাই রাক্ষস স্বভাবের মানুষ। কিন্তু বিভীষণ সেই রাক্ষস স্বভাবের উর্ধ্বে ছিলো বলেই তাকে আমরা সুসংস্কৃত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি, যদিও তিনি রাক্ষসকূলজাত। বিভীষণ যদি প্রকৃতই রাক্ষস হতো বা রাক্ষস বলে যদি আলাদা প্রজাতির কোনো প্রাণী থাকতো, তাহলে বিভীষণ মানুষের মতো বিচার বুদ্ধি বা আচরণ করে কিভাবে ?

এরপর বালী-সুগ্রীবের কাহিনী যখন আপনি পড়বেন, তখন আপনার মনেই হবে না যে, তারা বানর; কারণ, তাদের রাজ্য আছে, রাজত্ব আছে, তারা মানুষের মতো কথা বলে, তাদের স্ত্রী সন্তান আছে, তাদের বসবাস করার জন্য নগর, দালান- ইমারত আছে। যদি তারা প্রকৃতপক্ষে বানর হতো, তাহলে তারা কি এসব নির্মান করতে পারতো, না তাদের জীবনে এসবের প্রয়োজন হতো ? আর বানর হিসেবে এইরকম বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষই বা কিভাবে সম্ভব ? এই প্রশ্নের উত্তর কখনোই বুঝতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি, প্রাচীন যুগের মানুষের গোত্র বিভাগ কিভাবে হয়েছিলো, সেই ইতিহাস না জানবেন।

আমরা অনেক হিন্দুরই নামের শেষে পদবী হিসেবে লাগানো দেখি সিংহ (Lion), কারো নামের সাথে নাগ (সাপ) বা কারো সাথে সেন (শ্যেন, বাজ পাখি)। কিন্তু এগুলো কেনো ? যাদের নামের সাথে সিংহ লাগানো আছে তারা কি প্রকৃত পক্ষেই সিংহ, বা যাদের নামের সাথে নাগ আছে, তারা সাপ ? আসলে তারা প্রকৃত সিংহ, সাপ বা বাজপাখি নয়। প্রাচীন কালে এক গোত্রের মানুষের থেকে অন্য গোত্রের মানুষকে আলাদা করার জন্য পশু পাখিদের নামে তাদের নামকরণ করা হয়েছিলো, শুধু কোন গোত্রের মানুষ, তা আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য। বানর রাজ সুগ্রীব বা বালি বলতে বানরদের রাজাকে বোঝায় না, এরা আসলে বানর গোত্রের মানুষদের রাজা। তাই রামায়ণে বানর, রাক্ষস বলতে যাদেরকে বোঝানো হয়, আসলে এরা কেউ প্রকৃত অর্থে বানর বা রাক্ষস নয়, সবাই মানুষ, তবে ভিন্ন গোত্র বা ভিন্ন ধরণের। একই কথা প্রযোজ্য হুনুমানের ক্ষেত্রেও, হুনুমান হয়তো ছিলো হুনুমান গোত্রের কোনো শক্তিশালী মানুষ, কবির হাতে পড়ে যে হুনুমান হয়ে উঠেছে অলৌকিক শক্তিধর।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।


পরিশিষ্ট : রামচন্দ্রের জন্ম তারিখ

ভারতের হায়দরাবাদে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ অন ভেদাজ বা সংক্ষেপে আই-সার্ভ নামের গবেষণা সংস্থার গবেষকরা প্ল্যানেটোরিয়াম সফ্টওয়্যারের সাহায্যে গবেষণা চালিয়ে জানিয়েছেন, ৫১১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ১০ জানুয়ারি বেলা ১২টা থেকে টার মধ্যে অযোধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামচন্দ্র।

No comments:

Post a Comment